সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন

সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার এক দশক, ছটফট করে মরেছে শত শত মানুষ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৩২ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ায়র রাজধানী দামাসকাসের ঘোটায় ১০ বছর আগে ২০১৩ সালে চালানো হয় ভয়াবহ রাসায়নিক হামলা। ওই হামলায় মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে ও ছটফট করে মৃত্যু হয় কয়েকশ মানুষের।

হামলার এক দশক পূর্তির দিনে ইদলিবে সেদিনের সেই ভয়াল দিনের কথা স্মরণ করেছেন নার্স উম ইয়াহিয়া। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে চোখের সামনে মৃত্যু হয়েছিল শত শত মানুষের।

ওইদিন ঘোটার ঝামালকা, ইন তার্মা এবং ইরবিনে রাতের আঁধারে নার্ভ গ্যাসের মাধ্যমে রাসায়নিক হামলা চালায় সরকারি বাহিনী।

সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের (এসএনএইচআর) তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় ১ হাজার ১২৭ জন মানুষ মারা যান এবং শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন ৬ হাজারের বেশি মানুষ।

ওইদিন ওই এলাকার আবহাওয়া রাত ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঠাণ্ডা ছিল। মানে হামলাকারীরা জানত বাতাস স্থির থাকবে এবং ওই বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে উড়ে যাওয়ার বদলে সমতলেই থাকবে।

রাসায়নিক হামলায় নিহতদের মৃতদেহ

হামলার রাতে নার্স ইয়াহিয়া বাসায় আসার কয়েক মিনিট পরই স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক আবু খালেদ তার দরজায় কড়া নাড়তে থাকেন। দরজা খোলার পর তিনি তাকে জানান, অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি নিচে অ্যাম্বুলেন্সের কাছে যাই এবং দেখতে পাই আবু খালেদ কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে এসেছেন। তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।’

নার্স ইয়াহিয়ার জন্য ওই রাতটি ছিল দীর্ঘ ও কষ্টকর। যা ছিল হট্টগোলে পরিপূর্ণ। হাসপাতালটি মৃতদেহে ভরে যায়। একটা সময় কাউকে আর হাসপাতালে ঠাঁই দেওয়ার সুযোগও ছিল না।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা শুধু দেখতে পাচ্ছিলাম মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর খিঁচুনি হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে। কেউ একজন এসে বলে আহতদের পানি দিতে। তখন একজন চিকিৎসক আহতদের অ্যাট্রোপিন দিতে বলেন। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। আমি শুধুমাত্র তাদের অক্সিজেনই দিতে পারছিলাম।’

যখন রাত পেরিয়ে ভোর হয় তখন হাসপাতালের স্টাফরা বুঝতে পারেন তাদের এলাকায় চালানো হয়েছে ভয়াবহ রাসায়নিক হামলা।

ইয়াহিয়া জানিয়েছেন সেদিনের ঘটনা এখনো ভুলতে পারেননি তিনি। ‘শ্বাসের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা শিশুদের কথা আমি ভুলতে পারি না। তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। তাদের চোখে আতঙ্কের ছাপ ছিল। সকাল বেলা হাসপাতাল মৃতদেহে ভরে গিয়েছিল।’ বলেন এই নার্স।

ইয়াহিয়া ওই রাতেই ৩০০টি মৃতদেহ গুণেছিলেন। তাদের বলা হয়েছিল পুরুষদের থেকে যেন নারী ও শিশুদের মরদেহ আলাদা রাখা হয়।

তবে এখানেই শেষ হয়নি সেদিনের দুর্ভোগ। রাসায়নিক হামলায় নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরা যখন তাদের দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাদের ওপর চালানো হয় বিমান হামলা। সেই বিমান হামলায় আরও অনেকে আহত ও নিহত হন।

রাসায়নিকের বিষক্রিয়ায় ছটফট করতে করতে মারা যায় অনেক শিশু

ইয়াহিয়া জানিয়েছেন, হামলার তিনদিন পর হাসপাতালে অনেক মানুষ এসে জানান, তারা কয়েকদিন ধরে প্রতিবেশীদের কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছেন না। পরবর্তীতে হাসপাতালের কয়েকজনকে নিয়ে ঝামালকা ও ইন তার্মায় যান তিনি। সেখানে গিয়ে দেখেন ওই এলাকায় যত মানুষ বাড়ির ভেতর ছিলেন তারা সবাই মরে পড়ে আছেন।

এতই মানুষ সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন যে তাদের কাছে আর কোনো কাফনই অবশিষ্ট ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে ওই মৃতদের নাইলনের ব্যাগে ভরে সমাহিত করতে হয়েছিল তাদের।

এই নার্স জানিয়েছেন, তার এখন একটাই ইচ্ছা সেদিনের সেই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ ও তার সঙ্গীদের একদিন বিচার হবে।

সূত্র: আল জাজিরা

 

কিউএনবি/আয়শা/২১ অগাস্ট ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit