সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

১৬ আসামি ধরতে নাভিশ্বাস পুলিশের!

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩
  • ৯২ Time View

ডেস্ক নিউজ : আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত ১৬ আসামিকে কোনোভাবেই নাগালে পাচ্ছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তাদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য কায়কোবাদ আছেন। এমনকি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করেও রেড নোটিস জারি করাতে পারেনি। গত মাসেও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ইন্টারপোল সদর দপ্তরে তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের নামে রেড নোটিস জারি করতে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু এখনো চিঠির জবাব পায়নি পুলিশ।

পুলিশ বলছে, আসামিদের মধ্যে কেউ কেউ ইন্টারপোলকে ম্যানেজ রেড নোটিস জারি করা থেকে বিরত রাখছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান তখনকার বিরোধী দল নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে বিচারিক আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। চলতি বছরের মধ্যেই ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। হত্যা মামলায় আপিল ও জেল আপিল হয়েছে যথাক্রমে ২২ ও ১২টি। অন্যদিকে বিস্ফোরক মামলায় ১৭টি আপিল ও ১২টি জেল আপিল রয়েছে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রেনেড হামলাটি ছিল জঘন্যতম। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার চেয়েছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। গ্রেনেড হামলার সাজা দিয়েছে আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত যেসব আসামি আত্মগোপনে আছে তারা বিশ্বের যেখানেই থাকবে সেখান থেকে ধরে আনা হবে। এজন্য আমরা কাজ করছি। ইন্টারপোলও কাজ করছে।’

তবে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পলাতক ১৬ আসামির বিষয়ে আমরা এখনো কিছু করতে পারিনি। তাদের মধ্যে কয়েকজনের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকলেও বাকিদের বিষয়ে নেই। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারপোল সদর দপ্তরে যোগাযোগ করে বলছে গ্রেনেড হামলা নাকি রাজনৈতিক। সরকারবিরোধী মতাদর্শী হওয়ায় এ মামলায় তাদের আসামি করে সাজা দিয়েছে। এ বিষয়ে লবিং করে তারা ইন্টারপোল থেকে নাম পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। পাঁচ বছর আগে তারেক রহমান ও কায়কোবাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা ছিল। পরে তারা এই নোটিসের বিরুদ্ধে আইনজীবী নিয়োগ করে। রাজনৈতিক কারণে তাদের আসামি করে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে তারা ইন্টারপোলকে বোঝাতে সক্ষম হয়। পরে রেড নোটিস প্রত্যাহার করে নেয় ইন্টারপোল।

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির তারেক রহমান ও কায়কোবাদ বেশি কলকাঠি নাড়ছেন। তারাই ইন্টারপোলের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ রাখছেন। গত মাসেও তারেক রহমানসহ পলাতক ১০ আসামির নামে রেড নোটিস জারি করতে চিঠি দেওয়া হয় ইন্টারপোলে। এখনো আমরা চিঠির জবাব পাইনি।’ এ ছাড়া চারজনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করা আছে। এক যুগ ধরে দণ্ডিত দুই আসামি ভারতের তিহার কারাগারে আটক আছে। তাদেরও ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি দ্রুত শেষ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ফৌজদারি বিধান অনুযায়ী কোনো মামলায় বিচারিক আদালতে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে দণ্ড কার্যকর করতে উচ্চতর আদালতের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সব নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত এবং কারাগারে থাকা আসামিরা হাইকোর্টে আপিল ও জেল আপিল করতে পারেন। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলা-সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানির পর্যায়ে আসে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু তারা (আসামিরা) গ্রেনেড হামলা করেছে, হামলায় জীবননাশ হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করার জন্য তারা এ গ্রেনেড হামলা করেছে। তারা অপরাধ করেছে। এসব কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সাজা হয়েছে। আগামী ১০-১২ কর্মদিবসের মধ্যে শুনানি শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

গ্রেনেড হামলায় মামলায় ৫২ জন আসামি ছিলেন। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর আদালত রায় দেয়। রায়ে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩০ জন কারাগারে আছেন। অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। তারেক রহমান ১৪ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের (হুজি) অন্যতম শীর্ষ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন আহমেদ সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর আপন ভাই। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন। আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার পরিবার দাবি করছে তিনি মারা গেছেন। তবে সরকার এখনো তা স্বীকার করেনি।

সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরব অবস্থান করছেন। মাঝেমধ্যে তিনি লন্ডন যাতায়াত করেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম কানাডায় অবস্থান করছেন। হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ পাকিস্তান অবস্থান করছেন। রাতুল আহমেদ বাবু দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করছেন। তিনিও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রীর ভাই। ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান (মাগুরা), জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার ও মুফতি শফিকুর রহমান সৌদি আরব অবস্থান করছেন। হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন। হারিছ চৌধুরী, মাওলানা তাজউদ্দিন, রাতুল বাবু ও মোহাম্মদ হানিফকে ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলার পর তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়া হয়েছিল। জজ মিয়ার নাটক তৈরি করে জোট সরকার। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে তদন্ত শুরু করে। বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। ২০০৮ সালের জুন মাসে বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই তাজউদ্দিন, জঙ্গি সংগঠন হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড এসেছিল পাকিস্তান থেকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিচার শুরু হয়। ৬১ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময় অধিকতর তদন্তের আদেশ আসে আদালত থেকে।

পরে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন করে আসামি করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। দুই অভিযোগপত্রের ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। ওই কর্মকর্তা জানান, দণ্ডিত আসামি জামায়াত নেতা মুজাহিদুল ইসলাম, হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও শহীদুল আলমকে অন্য মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আত্মগোপনে থাকা আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তাদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না তা সত্য।’

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২১ অগাস্ট ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit