আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্ষমতা হাতে তুলে নেওয়ার পর থেকেই অন্তর্দ্বন্দ্বের ফুলকি ছুটছে তালেবানে। বাইরের শক্ত দুর্গের দেওয়ালের গভীরে দেখা দিয়েছে চোরা ফাটল। ক্রমবর্ধমান ভিন্নমতে ভেতরে ভেতরে চলছে গোলযোগ। গোষ্ঠী নেতাদের কঠোর নীতি উপেক্ষা করে আওয়াজ তুলছে কেউ কেউ। বাইরে থেকে পাকাপোক্ত মনে হলেও অভ্যন্তরীণ ঘুণে ধ্বংসের পথে তালেবান শাসনব্যবস্থা। তবে কি শেষমেশ অন্ধকার কোনো ভবিষ্যতের দিকেই এগোচ্ছে মৌলবাদি তালেবানরা? সামনে কি গোষ্ঠীদের মধ্যেই হতে চলেছে গৃহদাহ?
২০২১ সালের আগস্টে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পরপরই রুদ্ধদ্বার করা হয় নারীদের শিক্ষাব্যবস্থা। সামাজিক স্বাধীনতা সীমিত করে নিষিদ্ধ হয় স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও অফিস। কিন্তু ২০২২ সালের আগস্টে প্রধান নেতা আখুন্দজাদা মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষাকে পুনরায় চালু করার অনুমতি দেন। সামরিক দখলের পর আমির ধীরে ধীরে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করতে শুরু করে। মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কাজেও তার হস্তক্ষেপ বাড়তে থাকে। এতেই বেঁকে বসেন আমিরের সহযোগী নেতারা। মতে মতে মতপার্থক্য ও দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই গুরুত্বপূর্ণ তালেবান নেতারা দেশের চলমান অস্থিরতা নিয়ে খোলাখুলি নিন্দা করছেন। নিজেদের তৈরি নিয়মনীতিকেই কড়াকড়িভাবে করছেন প্রশ্নবিদ্ধ। কুখ্যাত হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি তালেবান শাসনব্যবস্থাকে বদনাম করে তাদের ক্ষমতাকে ‘একচেটিয়াকরণ’ নামে আখ্যা দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মন্তব্য করেন, তালেবানদের উচিত সর্বদা ‘জনগণদের বৈধ দাবি শোনা’। একজন উপমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীরাও একই ধরনের মন্তব্য করেন। বর্তমানে তালেবানরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য, দেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা, ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, রাষ্ট্র কেমনভাবে পরিচালিত হবে-এ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বেড়েই চলেছে। মার্চের শুরুতে আফগানিস্তানের আমির আখুনজাদা কান্দাহারে মন্ত্রিসভার বৈঠকের আহ্বান জানান। সে সভায় আমিরের নির্দেশে চলমান ব্যবস্থায় প্রতিবাদে পদত্যাগের দাবি জানায় অর্থমন্ত্রী হিদায়াতুল বদ্রি এবং উপদলীয় একজন প্রতিনিধি।
আমিরের তৈরি ‘নতুন’ শাসনব্যবস্থা প্রবল অবাধ্যতার জন্ম দিতে পারে। আমিরের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ভিন্নমত পোষণকারীরা তার দৃষ্টিভঙ্গিকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করছে। এতে করে তাদের দলের মধ্যকার ঐক্যজোট কঠিন হয়ে পড়বে। ভিন্নমত পোষণকারীরা তাদের জঙ্গি শিকড় ও আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করেই বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চায়। নীতিনির্ধারকদের ভিন্ন মতাদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ‘সংযম’ আশা করা ঠিক নয়। কেননা, তাদের মধ্যে ফুটন্ত জঙ্গিবাদ এখনো ঠান্ডা হয়নি।
কিউএনবি/আয়শা/১৬ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ১০:১৮