বিনোদন ডেস্ক : অভিনয়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকলেও শুরুর দিকে তিনি ছিলেন সিনেমার ফাইট ডিরেক্টর। ইচ্ছে ছিল পর্দার আড়ালে ফাইটার হিসেবেই ক্যারিয়ার গড়বেন। সত্তরের দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার অন্যতম প্রবর্তক তিনি। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘ফাইটিং গ্রুপ’-এর শুরুটা হয় তার হাত ধরেই। যেহেতু ফাইট জানতেন অভিনয় শুরু করেন খলনায়ক হিসেবে। পর্দায় তার মারামারি দেখে দর্শকরা হাততালি দিত। এরপর তাকে নায়ক হিসেবে সুযোগ দিয়ে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু নির্মাণ করেন ‘অমর শরীফ’ সিনেমা। সেই সিনেমাটি এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
বলছিলাম নায়ক জসিমের কথা। পুরো নাম আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন হলেও জসিম নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। ১৯৫০ সালে আজকের এই দিনে জন্ম নিয়েছিলেন জসিম। বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৭৩। জন্মদিনে দিনটিকে স্মরণ করছেন তার সন্তানেরা। শৈশবে বাবাকে হারিয়ে মা নাসরিনের কাছে বেড়ে উঠেছেন তারা।
বাবার পথ ধরে অভিনয়ে নাম লেখাননি জসিমের তিন ছেলে—এ কে রাহুল, এ কে রাতুল এবং এ কে সামী। তারা কাজ করছেন সংগীতজগতে। তিনজনই যুক্ত ব্যান্ডের সঙ্গে। এর মধ্যে রাহুল ‘ট্রেনরেক’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট ও ‘পরাহো’ ব্যান্ডের ড্রামার, রাতুল ও সামী যুক্ত আছেন ‘ওইনড’ ব্যান্ডের সঙ্গে। রাতুল ওইনডের ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট, সামী ড্রামার। জার্মানিতে আয়োজিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় হেভি মেটাল উৎসব ওয়াকেন ওপেন এয়ারে প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে হেভি মেটাল ব্যান্ড ট্রেইনরেকের সঙ্গে অংশ নেন রাহুল। ২০০৯ সালে গানে অভিষেক ঘটে ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়ক জসীমপুত্র রাহুলের।
পুরো ক্যারিয়ারে জসিম প্রায় ২০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ-নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামী’ ইত্যাদি।
১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারা যান জসিম। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল পুরো ঢালিউডে। প্রয়াত এ নায়ককে স্মরণীয় করে রাখতে এফডিসিতে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা জসিম ফ্লোর’।
নায়ক, পরিচালকের বাইরেও জসিম ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন তিনি।
কিউএনবি/আয়শা/১৪ অগাস্ট ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:৩৩