চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ দেড়শ গ্রামের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি
এম রায়হান চৌধুরী চকরিয়া প্রতিনিধি
Update Time :
সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩
১৮১
Time View
এম রায়হান চৌধুরী চকরিয়া প্রতিনিধি : লাগামহীন ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর পানি গতকাল সোমবার (৭ আগষ্ট) সকাল থেকে বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে নদীর একাধিক পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে ঢলের পানি। এ অবস্থায় উপজেলার অন্তত ১৫০ থেকে ১৬০ গ্রামের বসতঘর, স্কুল মাদ্রাসা, মসজিদ ও গ্রামীণ সড়ক হাটু থেকে কোমড় সমান পানিতে তলিয়ে গেছে । এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ গতকাল দুপুর থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মাটির তৈরি গুদামঘরের দেয়াল চাপা পড়ে গতকাল সকালে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বরঘোনা এলাকায় দুই শিশু নিহত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান। তিনি বলেন, বরইতলী ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখনো নিহত দুই শিশুর পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে গতকাল সকালে মাতামুহুরী নদীতে লাকড়ি ধরতে গিয়ে চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া এলাকার মৃত জাকের হোসেন এর ছেলে শাহ আলম (২৬) নামের এক যুবক ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (গতকাল রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত) ওই যুবকের সন্ধান মেলেনি বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব বুলেট। চকরিয়া উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও সুরাজপুর মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ার কারণে বানবাসি মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাহাব উদ্দিন বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে কাকারা ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের বসতঘর, স্কুল মাদরাসা মসজিদ ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ বলেন, অবিরাম ভারী বর্ষণে হারবাং ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম গতকাল দুপুর থেকে পানিতে ভাসছে। বসতঘর ও চুল্লিতে পানি ঢুকে পড়ায় থাকা খাওয়া নিয়ে নিদারুণ দুর্ভোগে আছে জনসাধারণ। তবে বানভাসি মানুষদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, গতকাল দুপুরে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানির প্রচন্ড ধাক্কায় কোনাখালী ইউনিয়নের একাধিক পয়েন্টে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। তারপর থেকে ভেঙে পড়া বেড়িবাঁধের অরক্ষিত পয়েন্ট দিয়ে লোকালয়ে অনায়াসে ঢুকে পড়ছে ঢলের পানি। এতে জনগনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তাণ্ডবে কন্যারকুম ও কুরুইল্যারকুম এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। একইভাবে অবিরাম ভারী বর্ষণে গতকাল সোমবার সকাল থেকে উপজেলার কৈয়ারবিল, বরইতলী, সাহারবিল, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, বদরখালী, চিরিঙ্গা, ডুলাহাজারা, বমুবিলছড়ি ও খুটাখালী ইউনিয়ন এবং চকরিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমড় সমান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। অবিরাম ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা শাখা অফিসার (এসও) মো. জামাল মোর্শেদ। তিনি বলেন, গতকাল সকাল থেকে মাতামুহুরী নদীতে ঢলের বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে দুপুরের দিকে নদীতে ঢলের পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে প্রচন্ড ধাক্কায় কোনাখালী ও বিএমচর ইউনিয়নে ৬৫ নম্বর পোল্ডারের অধীন একাধিক পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
তিনি বলেন, গতকাল সকালে পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ড.তানজিল সাঈফ আহমেদ চকরিয়া উপজেলার ঝুকিপূর্ণ ও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি চকরিয়া পৌরসভার দিগরপানখালী পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সুরক্ষা নিশ্চিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ঢলের পানি নেমে গেলে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পুনরায় সংস্কার কাজ শুরু হবে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি বেড়ে চলছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে চকরিয়ার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবনতি ঘটবে। পরিদর্শনে দেখা গেছে, চকরিয়া উপজেলার কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, দুর্গত এলাকার জনসাধারণকে নিরাপদে সরে যেতে আমরা দুইদিন আগে থেকে মাইকিং করে আহবান জানিয়েছি। দুর্যোগ মুহূর্তে বানবাসি মানুষের জন্য সাইক্লোন সেন্টার গুলোর পাশাপাশি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সরকারি ভাবে তাৎক্ষণিক বানবাসি মানুষের জন্য বরাদ্দ দেওয়া না হলেও সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।