এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদ খনন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দখল মুক্ত হয়নি নদের শতশত একর জমি। খননকৃত মাটি-কাঁদা ফেলা হয়েছে নদের মধ্যেই। ফলে নদের প্লাবনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোববার (৬ আগস্ট) সকালে সরেজমিন চৌগাছা পৌর শহরের চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে ব্রীজঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গেলে এলাকাবাসী কপোতাক্ষ খননে নানা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের আওতায় আমিন এন্ড কোং, আবুল কালাম আজাদ ও নুর হোসেনসহ ১১ জন ঠিকাদারের মাধ্যমে যশোরের চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর থেকে ঝিকরগাছা উপজেলা ও মণিরামপুর উপজেলার চাকলা পর্যন্ত মোট ৭৯ কিলোমিটার কপোতাক্ষ নদ পুনঃখনন ও সংস্কার কাজ করছেন। যা বর্ষা মৌসুমের জন্য বন্ধা রয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কপোতাক্ষ নদ খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেন সরকার। নদে পানি বেশি থাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে শুরু হয়। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুন মাসে। যার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ কপোতাক্ষ খননে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ সুবিধা নিয়ে নদের দুই পাশের (বাজার) সংলগ্ন অসংখ্য মালিকানা নিচু জমি ভরাট করা হয়েছে। একাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া নদের ম্যাপ অনুযায়ী দুই ধারের সীমানায় কোন পিলারও পোতাহয়নি। দায়সারা ভাবে নদের মাঝখান বরাবর সরু খাল খনন করা হয়েছে। নদ খনন করে সরু খাল কাটায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যাক্তিরা নদের জমি দখল করে বসতবাড়ী ও মার্কেট নির্মান করে চলেছেন বলে কপোতাক্ষ পাড়ের অসংখ্য মানুষের অভিযোগ।
নদের বাবু ঘাট এলাকায় নদের জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা রেখেই পশ্চিম দিকে সরিয়ে নদ খনন করা হয়েছে। ফলে বাবু ঘাট এলাকার পৌরসভার নির্মিত নদে নামার সিঁড়ি ঘাটটি বর্তমানে পানি থেকে অন্তত ৫০ ফুট ও পরে পড়ে রয়েছে। ফলে এই খনন নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে নদের তলদেশের কাদা অক্সিমিটারের মাধ্যমে তুলে তা পাড়ে স্তুপ করা হয়। যা অল্প বৃষ্টিতেই কাদা মাটি পুনরায় নদে পড়ে আবারও ভরাট হচ্ছে। নদে থাকা পানি আর পট কচুড়ির মধ্য হতে তোলা হয় কাঁদা।
যে পরিমাপে খনন হওয়ার কথা তা আদৌ হয়নি বলেও সৃষ্টি হয়েছে সংশয়। এ ছাড়া নদের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা রেখে খনন কাজ চলার অভিযোগ রয়েছে। নদ খনের আগে এলাকায় ব্যাপক প্রচার ছিলো অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদের জমি উদ্ধার করে খনন কাজ স¤পন্ন হবে। কিন্তু খননকাজ শুরু হলে এর বিপরীত দৃশ্য চোখে পরে এলাকাবাসীর। তারা বলেন, তবে নদ খনন কাজ চলা কালিন সময়ে পানি উন্নয়নবোর্ড যশোরের কোন প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নদের জমি যারা দখলে রেখেছেন তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সরকারি দলের সাথে স¤পৃক্ত। ওই সব ব্যক্তি নানা ভাবে দেন দরবার করে তাদের স্থাপনা রক্ষা করছেন। এই ভাবে যদি নদ খনন কাজ সম্পন্ন করা হয় তাহলে সরকারের এই উদ্যোগ কোনভাবেই সফল হবে না। লাভবান হবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও নদ দখলকারীরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকে নদ খননকাজ সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক এ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করেছেন এলাকাবাসী। যে ভাবে খনন হচ্ছে তাতে নদ যেন ছোট খালে পরিণত হচ্ছে। নদের পাড়ে বহু স্থাপনা রক্ষা করে চলছে খনন কার্যক্রম। দখল হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। যেন দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের স্থানীয় নেতারা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডর গাফিলতি ও ঠিকমতদেখভাল না করার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো খননকৃত মাটি-কাঁদা নদের মধ্যেই ফেলছে। সে কারণে নদসরু খালে পরিণত হয়েছে। নদ খননের আগে এর যে প্রশস্থতা ছিল, খননের পরে তা আরও ছোট সরু খালেপরিণত হচ্ছে। ফলে বর্ষার ভরা মৌসুমেও নদ কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরে গেছে। নদ হারিয়েছে তার নব্যতা। তাঁরা বলেন নদ খননে সরকার কোটি-কোটি টাকা ব্যায় করলেও তা বিন্দু মাত্র কাজে আসেনি। নদ ঠিকাদার রেজাউল ইসলাম বলেন, কপোতাক্ষ খননে কোন অনিয়ম করা হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সীমানা বরারব খনন করা হচ্ছে। তবে মালিকানার কোন জমি ভরাটের বিষয় তিনি বলেন, খননের শুরুতে হতে পারে পরে, তবে সেটা নদ খননের সময় মাটি ফেলতে হয়েছে তাই। কোন সুবিধা নিয়ে কারো নদের মাটি দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দঃ) এ কে এম মমিনুল ইসলাম বলেন, নদ যেহেতু ১ এর ১ খতিয়ন ভূক্ত। তাই দখল মুক্ত করার দায়িত্ব জেলা প্রশাসক মহাদয়ের। আমাদের দায়িত্ব পানি প্রবাহ ঠিক রাখা ও নদের নব্যতা ধরে রাখা। অতিদ্রুত সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/৬ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ৯:৩৪