সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড ভেঙেছে, মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩
  • ১১০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি সপ্তাহে সমুদ্রপৃষ্ঠ রেকর্ড পরিমাণ উষ্ণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে প্রচণ্ড দাবদাহ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরো পৃথিবী উষ্ণ হয়ে উঠেছে, আর সেই উষ্ণতা শোষণ করে সমুদ্রপৃষ্ঠও উষ্ণ হয়ে উঠেছে। যা আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

মহাসাগরগুলো তাপ শোষণ করে, পৃথিবীর অর্ধেক অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন করে। কিন্তু উষ্ণ পানি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যার অর্থ উষ্ণায়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে বেশি গ্যাস থাকবে। যা সমুদ্রে থাকা হিমবাহের গলনকেও ত্বরান্বিত করতে পারে, ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
শুধু তাই নয়, মহাসাগর উষ্ণ হয়ে উঠলে সামুদ্রিক প্রাণী যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও তিমির জন্য পরিবেশ প্রতিকূল হয়ে উঠবে। তখন তারা চলে যাবে শীতল পানির সন্ধানে। এর প্রভাবে খাদ্য শৃঙ্খল বিপর্যস্ত হবে। তাই বিশেষজ্ঞরা সমুদ্রে মাছের মজুদ কমে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। এ ছাড়া গরম তাপমাত্রার কারণে হাঙরসহ কিছু শিকারি প্রাণী আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন।
মেক্সিকোর উপসাগরে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ পর্যবেক্ষণকারী ডা. ক্যাথরিন লেসনেস্কি বলেছেন, ‘আপনি যখন ঝাঁপ (সমুদ্র) দেন তখন পানি স্নানের উপযোগী মনে হয় না। ফ্লোরিডায় অনেক প্রবাল ইতিমধ্যেই মারা গেছে।’ যুক্তরাজ্যের প্লাইমাউথ মেরিন ল্যাব থেকে ডা. ম্যাট ফ্রস্ট বলেছেন, ‘দূষণ এবং অতিরিক্ত মাছ ধরা সমুদ্রকে প্রভাবিত করছে। ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমরা এখন সমুদ্রকে বেশি চাপের মধ্যে রেখেছি।’

সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড ভাঙার কারণে বিজ্ঞানীদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। কোপার্নিকাস জলবায়ু পরিবর্তন পরিষেবার ডা. সামান্থা বার্গেস বলেছেন, ‘মার্চ মাসে এমন উষ্ণ হওয়া উচিত, তখন বিশ্বব্যাপী মহাসাগরগুলো সবচেয়ে উষ্ণ থাকে, আগস্ট বা সেপ্টেম্বর নয়। আমরা যে রেকর্ডটি দেখতে পাচ্ছি, তাতে আগামী মার্চের মধ্যে পানি কতটা উষ্ণ হতে পারে তা চিন্তা করে ভয় পাচ্ছি।’ 

স্কটিশ সমুদ্র উপকূলে প্রভাব পর্যবেক্ষণকারী প্রফেসর মাইক বারোজ বলেছেন, ‘এই পরিবর্তন এত দ্রুত ঘটতে দেখাটা খুবই দুঃখজনক। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ২৪৭ দিনব্যাপী সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ ছিল।’

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন সমুদ্রগুলোকে উষ্ণ করে তুলছে। কারণ সমুদ্র গ্রিনহাউসের গ্যাস নির্গমন থেকে বেশির ভাগ উত্তাপ শোষণ করছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক সামান্থা বার্গেস ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘আমরা যত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াব, সমুদ্রগুলো তত বেশি অতিরিক্ত তাপ বের করে দেবে। যার অর্থ সমুদ্র স্থিতিশীল হতে এবং যেখানে ছিল সেখানে ফিরিয়ে আনতে তত বেশি সময় লাগবে।’

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ‘এল নিনো’-এর কারণে উপকূলে অনেক সামুদ্রিক মাছ মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটেছে। ‘এল নিনো’ ঘটে যখন সমুদ্রের উষ্ণ পানি দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের উপরিভাগে উঠে যায়। যা বিশ্বের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে এদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘকালীন গড় তাপমাত্রা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে নেমে গেলে তাকে বলা হয় ‘লা নিনা’ আর ওপরে গেলে বলা হয় ‘এল নিনো’। তবে তাপমাত্রার এই ওঠা বা নামা পাঁচ মাসের বেশি স্থায়ী হলে তাকে বলা হয় ‘এল নিনো বা লা নিনা এপিসোড’। সম্প্রতি আরেকটি এল নিনো এখন শুরু হয়েছে কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এখনো দুর্বল। এর অর্থ আগামী মাসগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে আরো বাড়বে। চলতি বছর যুক্তরাজ্য, উত্তর আটলান্টিক, ভূমধ্যসাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভাঙতে পারে। 

সূত্র : বিবিসি

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৪ অগাস্ট ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit