লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : অনেকেরই দিনের শুরুটা চা না হলে চলে না। কারও আবার কফি। ব্যক্তিভেদে পছন্দের তালিকায় ভিন্নভাবে থাকে চা ও কফি। তবে এই দুই পানীয়ের মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী, এই নিয়ে মাঝেমাঝেই বিতর্ক দেখা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চা খেলে যেমন হাজারটা উপকার মেলে, কফি খেলেও তাই। আবার রয়েছে কিছু পার্থক্য, কিছু অপকারিতাও! চলুন জেনে নেয়া যাক-
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়র একটি এই চা। যত ধরনের চা আছে সবই তৈরি হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস থেকে। এই ছোট গাছ থেকে পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে তা চা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে ১৬৫০ সাল থেকে চীনে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। পৃথিবীতে আসাম এবং চীনজাতীয় – এ দুই প্রকারের চা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। চীনজাতীয় গাছের পাতা স্বাদ ও গন্ধের জন্য সুখ্যাত। কিন্তু আসামজাতীয় গাছের পাতা রঙের জন্য বিখ্যাত।
যে বীজ থেকে কফি উৎপাদন করা হয় সেগুলো আসলে এক ধরনের ফলের রোস্ট করা বীজ, যে ফলগুলোকে কফি চেরি বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কফি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ৫% কফিতে ‘পিবেরি’ নামক একটি বীজই থাকে। এই ‘পিবেরি’ জাতীয় কফি হাতে আলাদা করা হয়। কড়া স্বাদ এবং চমৎকার মিশ্রণের জন্য এই ধরণের কফি বীজ বিখ্যাত।
১. চা-কফি, দু’টিতেই প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানের হাত থেকে রক্ষা পেতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের তুলনা নেই। লিকার চায়ে রয়েছে থিয়াফ্লাভিনস এবং ক্যাটাচিন আর কফিতে মজুত রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ক্লোরোজেনিক এসিড।
২. চায়ের তুলনায় কফিতে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি ক্যাফিন রয়েছে। এটি কফির অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। তাই কফি খেলে দ্রুত মুড বুস্ট হয়। এই উপাদান স্বাস্থ্যের উন্নতির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া চায়েও অনেকটা পরিমাণে ক্যাফিন রয়েছে। এছাড়া এতে আছে অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও। এ কারণে নিয়মিত চা খেলে নানা ধরনের কার্ডিও ভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৩. কফির কিছু বাড়তি গুণের মধ্যে আছে। পারকিন’স ডিজিস, বেসাল সেল কারসিনোমা, আলৎঝাইমার’স, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয় নারী-পুরুষ দুজনকেই। এছাড়াও পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং নারীদের ‘এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার’য়ের হাত থেকে বাঁচায়।
৪. ব্ল্যাক টি’তে থাকে ‘অ্যালকাইলামাইন অ্যান্টিজেন’ এবং ‘ট্যানিস’। এই উপাদানগুলোও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্ত্র শক্তিশালী করে।
১. এ ধরনের পানীয় বেশি পরিমাণে পানের কারণে পেটের নানা সমস্যা হওয়ার শঙ্কা থাকে। আবার অনেকে চায়ে দুধ ও চিনি মিশিয়ে থাকেন। যা খুবই খারাপ অভ্যাস। ফলে সুগার ও ওজন ক্রমশ বাড়তে থাকে।
২. অনেকে সকালের ব্রেকফাস্ট বা দুপুরে লাঞ্চ করার সময় চা বা কফি পান করেন। এতে শরীরের নানা সমস্যা হয়ে থাকে। তাই খাবার ও চা-কফির মাঝে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বিরতি নেয়া উচিত।
৩. চা আর কফি- এই দুই পানীয়তেই আছে ট্যানিন, নানা ধরনের অ্যাসিড এবং ক্রোমোজেন। যা দাঁতের রং পাল্টে দেওয়া থেকে শুরু করে দাঁতের ক্ষয়ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু চায়ে কফির তুলনায় বেশি ট্যানিন থাকায় চা-ই বেশি ক্ষতিটা করে থাকে।
৪. সকালে খালি পেটে কফি খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে এই অ্যাসিড জমলে হজমে সমস্যা হতে পারে। অন্যদিকে অতিরিক্ত চা খেলে হজমের সমস্যার পাশাপাশি বুকে ব্যথাও হতে পারে।
৫. সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত চা বা কফি পান কিন্তু অনিদ্রার কারণ হতে পারে। আর অনিদ্রার কারণে আপনার মেজাজ একটুতেই খিটখিটে হয়ে যাবে।
৬. কফির বীজে ক্যাফেইন ও অন্যান্য অম্লীয় উপাদান থাকে যা পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার, গ্যাসট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষম ব্যহত হতে পারে।
চা-কফি দুটোরই আছে উপকারী গুণ। প্রধান পার্থক্যটা হল ‘ক্যাফেইনের মাত্রা। কফির তুলনায় চায়ে থাকে প্রায় অর্ধেক ক্যাফেইন। তাই ঘুম থেকে উঠে যদি শরীর-মন চাঙা করতে চান তবে বেছে নিতে পারেন কফি। আবার অন্যান্য দিক বিচার করলে কফির তুলনায় চা বেশি স্বাস্থ্যকর। সুতরাং দুটোই পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত।
কিউএনবি/অনিমা/২৭ জুলাই ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:৪১