বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন

বাঈজি রেখার লড়াই এবার বইয়ের পাতায়

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩
  • ২০২ Time View

ডেস্ক নিউজ : ‌‘আমি আঁধারে নেচেছি। মোমের আলোয় কক্ষ আলোকিত করে আমি নেচেছি, গেয়েছি। অন্ধকারেই আলোকিত হয়েছে আমার ভাগ্য রেখা।’ 

১৯৬২ সালে চীনের সাথে ভারতের যুদ্ধ শুরু হয়। ভারত সরকার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ভয় আর আতঙ্ক। ভবিষ্যত হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। 

তবে রেখাবাঈ ভয় পাননি। বরং নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়েছেন অবিচল পায়। অন্য বাঈজিদের মতো তিনি তার কোটাও বন্ধ করে দেননি। উল্টো তিনি রাতের পর রাত নতুন নতুন শাড়ি পরে সুন্দর পোশাকে একের পর এক গান গেয়ে চলেছেন, নেচেছেন। তিনি কঠিন পরিস্থিতিকেই বানিয়েছিলেন সুযোগ। সেখানেই দাঁড়িয়েই তিনি করেছিলেন টিকে থাকার লড়াই।

এবার রেখাবাঈর সংগ্রামের গল্প উঠে এসেছে বইয়ে। বইয়ের নাম দ্য লাস্ট কোর্টসান-রাইটিং মাই মাদার্স মেমোরি। বইটি লিখেছেন রেখার ছেলে মনীষ গায়কোয়াদ। 

মনীষ বলেছেন, ‘আমার মা সব সময় তার গল্পটা বলতে চাইতেন।’ তিনি আরো বলেছেন, তার মা একজন বাঈজি বা গণিকা এবং তিনি কোটায় তার সাথে বড় হয়েছে এটা বলতে তার কোনো লজ্জা নেই। মনীষের মতে তার মায়ের জীবনের ঘটনা গোপন কিছুও নয়।

মনীষের মতে, ‘কোটায় বেড়ে ওঠা শিশুরা যা দেখা উচিত তার চেয়ে অনেক বেশিকিছু দেখে। আমার মা এটা জানতেন এবং অনুভব করতে যে কিছুই গোপন করার দরকার নেই।’

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর অনেক বাঈজিকেই জোর করে গণিকাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। এখনো কোথাও কোথাও সেই চল আছে। তবে বিখ্যাত অনেক বাঈজির জীবনচিত্র উঠে এসেছে বই বা সিনেমায়।

রেখাবাঈর গল্পটাও তেমন। পুনে শহরে তার জন্ম। ১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। তবে নিজের জন্মতারিখ ঠিকমতো বলতে পারেননি রেখা। মদ্যপ পিতা রেখার জন্মের পর তাকে পুকুরে ফেলতে গিয়েছিল ফের কন্যা জন্মেছে এই ক্ষোভে। 

নয় কিংবা দশ বছর বয়সে বাবার ঋণের দায় মেটাতে রেখাকে বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তার দেবর রেখাকে কলকাতার বউবাজারের কোটায় বেচে দেয়। 

তরুণ বয়সেই শুরু হয় রেখার বাঈজি জীবন। গান, নাচের তালিম নিয়ে এক নারীর বাঈজির অধীনে রুটিরুজি জোটানোর পথে নামতে হয়। ভারত-চীন যুদ্ধের সময় রেখার ভাগ্য নতুন মোড় নেয়। শুরু হয় তার স্বাধীন পথচলা। তার মোমবাতির আলোয় করা নাচ-গানের চর্চাই তাকে নতুন পথ দেখায়। তিনি বুঝতে পারেন সাহস নিয়েই তাকে লড়তে হবে। নিজের সুরক্ষার ভার তুলে নিতে হবে নিজের হাতে। 

বলিউডের উমরাও জান ও পাকিজাহ সিনেমাতেও উঠে এসেছে রেখার জীবনের গল্প। জীবনে আর কখনো বিয়ের পিঁড়িতে বসেননি রেখাবাঈ। যদিও তার অনেক পৃষ্ঠপোষকই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। 

কোটাকেই তিনি বানিয়েছিলেন আপন লড়াইয়ের বাতিঘর। 

বইয়ে রেখার ছেলে মনীষ তার মায়ের জীবনের অনেক রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন। জানিয়েছেন, বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় একজন তার মাকে গুলি করতে উদ্ধত হয়েছিল। 

তবে রেখা সেসব তোয়াক্কা করেননি আপন নাচ আর গানকে সঙ্গী করে কোটার ভেতরেই থেকেই বাইরে আলো গায়ে মেখেছিলেন নিজের মতো করে। ২০০০ সালের দিকে কোটা জীবনের পুরোপুরি ইতি টেনে রেখাবাঈ ওঠেন কলকাতার অ্যাপার্টমেন্টে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি মুম্বাইতে মারা যান। 

রেখার ছেলে মনীষ চান, তার মায়ের এই গল্পটা সবাই জানুক। ভারতীয় পুরুষরা বুঝুক বাঈজিদের ঘিরেও আছে এক অনবদ্য মাতৃ জীবন। যেখানে তিনি বিশুদ্ধতার মূর্ত প্রতীক। 

সূত্র: বিবিসি

কিউএনবি/অনিমা/১৮ জুলাই ২০২৩,/দুপুর ২:৪৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit