খোরশেদ বাবুল, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি : মা ও মেয়েকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে দীর্ঘদিন ধরে ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে আসছে এক পাষন্ড পিতা। নির্যাতন সইতে না পেরে অবশেষে এ বিষয়ে মুখ খুলেছে ধর্ষিতা ও তার মা। আজ (১০ জুলাই) শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শিশুটির মা বাদী হয়ে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে স্বামীকে আসামী করে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করার জন্য পালং মডেল থানাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আকলিমা বেগম নামে আরেক নারীকে ধর্ষণের সহায়তাকারী হিসেবে আসামী করা হয়েছে।
মামলার আর্জি, ভিকটিম ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসারের ভাস্কর্দি এলাকার আলমগীর মোল্যা (৫৫)। তিনি ৩ স্ত্রী, ৯ সন্তান, ২ পুত্রবধু ও ২ নাতি-নাতনী সহ ১৭ সদস্যের যৌথ পরিবার নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে সুন্দরী হওয়ায় নরপিচাস বাবার লোলপ দৃষ্টি পড়ে মেয়ের প্রতি। এক পর্যায়ে মেয়েকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে বাবা আলমগীর। বিষয়টি মেয়ে তার মাকে জানানোর পর প্রতিবাদ করলে মেয়ে ও মাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছেন। ধর্ষণে লিপ্ত না হলে মা ও মেয়েকে নির্যাতন করা হত। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবার মুখ খুলেছেন মা ও মেয়ে।
ধর্ষিতা কন্যা শিশু জানায়, পিতার যৌন লালসার শিকার হয় সে। ২ বছর পূর্বে মেয়ে ও তার মাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে কন্যা শিশুটিকে ধর্ষণ করে এই ধর্ষক। সেই থেকে বিভিন্ন উপায়ে তাকে ধর্ষণ করা হত। ধর্ষক পিতার হাত থেকে রক্ষার জন্য মেয়ের বিয়ে ঠিক করে মা। সেই বিয়েও ভেঙ্গে দেয় এই পিতা। মেয়েটির পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নারায়নগঞ্জের আবাসিক হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করার পর মেয়েটি পালিয়ে গিয়ে ফতুল্লা থানায় পিতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে। মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় পুলিশ তার মাকে নিয়ে যেতে বলে।
অপরদিকে ধর্ষক পিতা তার মাকে বন্ধি করে রাখায় থানায় মা উপস্থিত হতে না পারায় অভিযোগ গ্রহণ করেনি থানা কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে ঘর বন্ধিও করা হয় মা ও মেয়েকে। ঘরে স্থাপন করা হয় সিসি ক্যামেরা। পাষবিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মা-মেয়ে পালিয়ে এসে বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মী ও সমাজে প্রকাশ করে। ধর্ষিতা শিশুর মা জানায়, প্রতিদিন মেয়েকে তার স্বামীর ঘরে পাঠাতে বলে। না পাঠালে মা-মেয়েকে নির্যাতন করা হয়। কারণে অকারণে তাদের মারধর করা হয়। কারো কাছে মুখ খুললে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
মা হয়ে পিতার কাছে কিভাবে মেয়েকে পাঠাই। আর সহ্য করতে পারছি না। এই ধর্ষকের ফাঁসি দাবী করেছে মা ও মেয়ে।
স্থানীয়রা জানায়, অনেক দিন ধরে এই বিষয়টি এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। এক পর্যায়ে ভিকটিম ও তার মা বিষয়টি প্রকাশ করে সামাজিক সহায়তা চেয়েছে। বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌহিদ কোতোয়াল জানায়, পালং মডেল থানাধীন ডোমসারে বাবা নামের এক নরপিচাশ তার ঔরসজাত মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছিল।
এই ঘটনা জানাজানি হলে বাদী ও ভিকটিম পালং মডেল থানায় যান। তখন থানার অফিসার ইনচার্জ উক্ত মামলাটি রুজু না করলে বাদী বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হয়। শরীয়তপুরের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক স্বপন কুমার সরকার উক্ত মামলাটি সরাসরি আমলে নিয়ে পালং থানার অফিসার ইনচার্জকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেজিস্টার করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। আমরা এই নেক্কারজনক ঘটনার সর্বোচ্চ বিচার প্রত্যাশা করছি।
কিউএনবি/আয়শা/১০ জুলাই ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:২৫