এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সাথে সাথে মাছ ধরার যন্ত্র তৈরী ও বিক্রি বেড়েছে। দেশীয় বাঁশ, তালের চোচ ও বেত দিয়ে মাছ ধরার এ সব ফাঁদ (যন্ত্র) তৈরি করা হয়। পেশাদার ও মৌসুমী জেলেরা এসব যন্ত্র দিয়ে মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসারের জন্য বাড়তি অর্থ উপার্জন করছেন।
এলাকা ভিক্তিক এসব দেশীয় উপকরণ যন্ত্রের নাম ঘুনি, চারই, দুয়াড়ী, খুল্লে, আটুল, পলোই ও পাড়ি ইত্যাদি বলে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এ এলাকার কপোতাক্ষ নদ, বুড়ি ভৈরব, খাল-বিল পুকুর-ডোবাসহ নিন্মাঞ্চল পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেছে। এসব পানিতে বিভিন্ন নদ-নদী,পুকুর ডোবা থেকে ভেসে আসছে পুটি, টেংরা, পাকাল, খরসে, মায়া, শিং, মাগুর, চেং, টাকী, কই, ঝিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশী ও কার্প জাতের মাছ।
এ সুযোগে লোকজন মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। ভরা মৌসুমে যন্ত্র তৈরীর কারিগররা এসব উপকরণ তৈরী করে বাড়তি আয় করছেন। বর্ষার সময় বাড়ির কাজের পাশাপাশি মহিলারাও অবসরে এ কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে বাঁশের তৈরি ঘুনি-চারই নামের যন্ত্র। এলাকা ভেদে এই যন্ত্রগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম ও রয়েছে। পানির মধ্যে এই যন্ত্রটি রেখে দেওয়া হয়। চলাচলের সময় ছোট ছোট মাছগুলো বাঁশের তৈরি এই ফাঁদের ভিতরে আটকা পড়ে। এগুলো গ্রামাঞ্চলের মাছ ধরার বেশ জনপ্রিয় যন্ত্র।
উপজেলার চৌগাছা, পুড়াপাড়া, চাঁদপাড়া, সলুয়া ও হাকিমপুর হাটে দেখা যায় মাছ ধরার যন্ত্র ঘুনি, চারই, দুয়াড়ী, খুল্লে, আটুল, পলোই ও পাড়ি ইত্যাদি উপকরণ নিয়ে বসে আছেন কারিগরেরা। পেশাদার ও সৌখিন মাছ শিকারীদের আনাগোনায় জমে উঠেছে এই বাজার। একেকটি উপকরণের দাম প্রকারভেদে তিনশো টাকা থেকে প্রায় হাজার টাকা। চৌগাছা বাজারে মাছ ধরার যন্ত্র কিনতে আসা পেটভরা গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, আমাদের গ্রামের পাশদিয়ে বয়ে চলেছে কপোতাক্ষ নদ, এ ছাড়াও আশপাশের আবাদি জমি ও ছোট-বড় খাল-বিল ডোবা নালা বর্ষার পানিতে ভরে গেছে। আর সেখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ। আমি বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই মাছ ধরি, এটা আমার নেশা।
তাই মাছ ধরার জন্য ঘুনি-চারই কিনতে এসেছি। তবে অন্য বারের তুলনায় এ বছর দাম অনেক বেশী। উপজেলার নায়ড়া গ্রামের আব্দুল মালেক প্রায় ২০ বছর যাবৎ এই ঘুনি-চারই তৈরী ও বিক্রি করেন। এ সময় আলাপ-চারিতাই তিনি বলেন, আগের মতো তো আর বাঁশের তৈরী ঘুনি-চারইসহ উপকরণের বিক্রি নাই। এখন মানুষ আধুনিক হয়ে গেছে, তারা বিভিন্ন জিনিসও প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তবে বর্ষাকাল আসলে একটু বেশি মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি হয়। একেকটি উপকরণ বিক্রি করে প্রকারভেদে একশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।
তবে আগের চেয়ে এসবে লাভ কমে গেছে শুধু বাপ-দাদার পেশা তাই অনেকেই এখন এসব উপকরণ তৈরী ও বিক্রি করেন। উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের আব্দুল মুন্নাফ কালুমিয়া বলেন, আমার বাড়ীর পাশদিয়ে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ, পাশেই রয়েছে বয়শাগাড়ীর খাল। প্রতি বছর বর্ষ মৌসুমে এখানে প্রচুর দেশী মাছ ধরা পড়ে। আমি নিজেও ঘুনি, চারই, ঠেলাজাল, খেপলাজাল, পাতাজাল, বশিরফাঁদ ও ছিপদিয়ে মাছ ধরি। এ বছর কপোতাক্ষ নদ নতুন করে খনন করায় প্রচুর মাছ হচ্ছে।
কিউএনবি/আয়শা/০৫ জুলাই ২০২৩,/বিকাল ৪:০৮