বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম
দুর্দশায় কুড়িগ্রামের শিক্ষা: ৯ কলেজে কেউই পাস করেনি পশ্চিমা আগ্রাসন ঠেকাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঐক্যের ডাক ইরানের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নওগাঁয় বৃক্ষরোপণ  রেকর্ড গড়েও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পার্বত্য ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা তিস্তা মহাপরিকল্পনার দাবিতে উত্তাল উত্তরাঞ্চল: পাঁচ জেলায় মশাল প্রজ্জ্বলন, রংপুর অচল করার হুঁশিয়ারি উপদেষ্টাদের কল রেকর্ড কোনো ব্যক্তি বা দলের নিকট থাকা ‘বেআইনি-ব্লাকমেইলিং’ ‘হামাসের সঙ্গে কথা বলেছি, ওরা নিরস্ত্র হবে’— দাবি ট্রাম্পের দরুদ পাঠের ফজিলত জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে

‘দেশের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করার তথ্য সত্য নয়’

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১০২ Time View

ডেস্ক নিউজ : ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত বলে দাবি করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, অপরিণামদর্শী ভ্রান্তনীতি ও চরম অব্যবস্থাপনার মাশুল দিচ্ছে জনগণ। যে কারণে বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহণ-খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে জনগণের ত্রাহি অবস্থা, জনজীবন বিপর্যস্ত। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই আরও দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে। বর্তমান বাংলাদেশে চারিদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। সমগ্র দেশটিই যেন এক ‘নাই’-এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের জাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ কথায় দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত।

সরকার বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক রাজনীতিকে দায়ী করে থাকে; যা সত্য নয় বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, বরং অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা। কে না জানে যে করোনার প্রাদুর্ভাব এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক আগ থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুলে গিয়েছিল। দুর্নীতি, বাজার সিন্ডিকেট ও অব্যবস্থাপনার ফলে দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে মানুষ ছিল পিষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত বাজার থেকে ডলার কেনার ধারায় ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক; কিন্তু এরপর থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করা শুরু হয়।’ 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৩১ কোটি ডলার বিক্রি করা হলেও পরে তা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ১ বিলিয়ন ডলার বাজারে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতি মাসে বিক্রি করতে হচ্ছে দেড় বিলিয়ন ডলার। এখন অর্থনীতির সব দুর্বল দিক একসঙ্গে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তথাকথিত উন্নয়নের ফাঁকা বেলুন এখন ফুটে গেছে। তারা নজিরবিহীন দুর্নীতি, গুম-খুন-হত্যা আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির দায় এবার যতই কুটকৌশল করুক না কেন, একদিন জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতেই হবে। 

তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আজ দুবেলা খেতে পারছে না। অথচ আওয়ামী লীগ একদিকে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে অন্যদিকে টাকা ছাপিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে। গত দুই মাসে ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হয়েছে। তারা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চালাচ্ছে। এটা অব্যাহতভাবে চলতে পারে না। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে এ দেশের কোষাগার শূন্যের কোটায় নিয়ে গেছে। একদিকে মেগা প্রজেক্টের নামে লুটপাট করে টাকা বিদেশে পাচার করেছে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছে। ডলারের অভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। লুটপাটের কারণে প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বারবার বৃদ্ধি, দেশের রিজার্ভ তলানি নেমে আসা, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা চলছে। এছাড়া অপরিণামদর্শী ভ্রান্তনীতি, লাগামহীন দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া, ঋণপ্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য, সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্র না থাকার কারণে দেশে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কথা সরকার স্বীকার করছে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকারের না দেখার প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তারা নির্বাচিত হয়ে আসেনি। যদি নির্বাচিত হয়ে আসতো তাহলে তাকে পার্লামেন্টে জবাবদিহি করতে হতো। জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হতো। সব সময় একটা মিথ্যা প্রচারণা করে, ভয়-ভীতি-ত্রাস সৃষ্টি করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে সরকার সার্বক্ষণিকভাবে একটি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে গোয়েবলসের মতো। তারা মিথ্যা ধারণার মধ্যে জনগণকে রাখতে চায়।  

সরকার সরে না গেলে সংকট যাবে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকারকে সরে যেতে হবে। তারপর যোগ্য ব্যক্তি যারা কাজ করতে পারেন তাদের নিয়ে এসে সমস্যা সমাধান অত্যন্ত দ্রুত করা সম্ভব হবে। সরকার সরে যাওয়া ছাড়া এটা সম্ভব হবে না। এ সরকারকে রেখে এটা করা যাবে না। আইএমএফ ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দেশের অবস্থা আজ এমন শোচনীয় অবস্থায় যেত না। অনেকে মনে করেন, আইএমএফের ঋণে সংকট কাটবে না। এ ঋণ বরং আলিগার্কদের (ক্ষমতাবানদের) পেটে যাবে, কষ্ট বাড়বে সাধারণ জনগণের। ব্যাংকি ও রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং নীতি সংস্কার করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার না করলে, শক্তভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থ হলে যে সূত্র হতেই ঋণের টাকা আসুক নানা কৌশলে শেষ পর্যন্ত আলিগার্করাই (ক্ষমতাবানরাই) লুণ্ঠন করে দেবে।

সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতে সংস্কার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ, কর শুল্ক, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং সেক্টার, বাজেট ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য নীতির সংস্কার করা আবশ্যক বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন এবং প্রকৃত অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার। বিএনপি আশা করে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিক খাতে কার্যকর সংস্কার সাধনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে।

আমরা সরকার পরিবর্তনে ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জনগণ নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশনায়ক তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সরকার গঠন করবে। বিশ্বাস করি, বিএনপির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দূরীভূত করা সম্ভব হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৭:৪৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit