সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

‘কার জন্য নতুন বাড়ি করলাম, কে থাইকবো ঘরে’

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১৬৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : ‘আহারে আল্লাহ, আমি বুঝি বাপ হয়ে হোলার (ছেলের) লাশ কাঁধে লইত হইবরে, ও আমার মানিক কার জন্য জমি কিনে নতুন বাড়ি করলাম, কে থাইকবো রে এ ঘরে। আর মানিক কইছে বাবা দোতলার পিলার খাড়া করে রাখেন, আমি বাড়ি আসলে দোতলার ছাদ পিটামু, আর মানিকের কথায় পিলার খাড়া করে রাখছি। আর মানিকেরে কেন্নে আইনবোরে। আহারে আল্লাহ আরে কেন নিয়ে গেলা না।’

এভাবে বিলাপ করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবুল হোসেনের বাবা জামাল উদ্দিন ও মা জান্নাতুল ফেরদৌস। তাদের আহাজারিতে স্বজন ও এলাকাবাসীও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।  শনিবার বিকালে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল আবুল হোসেনের বাড়িতে।

দাগনভূঞার রাসেল নামে একজনকে বাংলাদেশে আসার ফ্লাইটে তুলে দেওয়ার জন্য শুক্রবার বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন বন্ধুরা। গাড়িরচালক ছিলেন আবুল হোসেন। পথে দুর্ঘটনা ঘটে।  এতে আবুল হোসেন ও তার শিশুসন্তানসহ পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হন। আবুল হোসেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের বকুডিস্ট শহরের তিনটি দোকানের মালিক। 

দেশে এলে আবুল হোসেনকে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে দেখছিল পরিবার। নতুন করে করা বাড়িতে প্রবেশ করলেও আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল। আবুল হোসেনের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলেন। 

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরমজলিশপুর গ্রামের আব্দুল হাই মেম্বারের বাড়ির জামাল উদ্দিন ও জান্নাতুল ফেরদৌস দম্পতির একমাত্র ছেলে আবুল হোসেন (৩৩) ও নাতি নাদিম হোসেন (১০)।
 
আবুল হোসেনের বাবা জামাল উদ্দিন (৫৫) বলেন, আমি আফ্রিকা থেকে দুই বছর আগে আসলাম। ১০ শতক জমি কিনে তিন তলা ফাউন্ডেশনের ঘরও করেছি। ছেলেকে বিয়ে করানোর কথা ছিল। এমন সংবাদ শুনে সবকিছু যেন মাটি হয়ে গেল। 

শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে দুপুরে খাবার খেতে বসার পর একজন চাচার কাছ থেকে সংবাদ পাওয়ার পর আর খাবার পেটে ঢোকেনি। এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আকুল আবেদন যাতে আমার সন্তান ও নাতির লাশটা দেশে ফেরত পাঠাতে সহযোগিতা করেন।
 
জামাল উদ্দিনের তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। একমাত্র ছেলে ছিলেন আবুল হোসেন।

শুক্রবার রাতে পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন উপিজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান, সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার (সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেল) তসলিম হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বণিক, সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এমএ হোসেন ও প্যানেল চেয়ারম্যান সাহাজান কবির সাজু। 

স্বজনরা জানান, আবুল হোসেন ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যান। এরপর আর বাড়িতে আসেননি। ১৯ ফেব্রুয়ারি বাবা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। 

এ সময় আগামী এপ্রিলে দেশে আসার কথা জানান আবুল। ১৩ বছর পর ছেলে ও নাতিকে প্রথমবার দেখার জন্য উন্মুখ হয়েছিলেন বাবা-মা। এখন ছেলের লাশ অন্তত যাতে দেখতে পান সেই আকুতি জানাচ্ছেন তারা। 

আবুল হোসেন আফ্রিকা যাওয়ার পর সে দেশের এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে বিয়ে করেন। একটি ছেলে জন্মের চার বছর পর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। 

কিউএনবি/অনিমা/২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/রাত ১০:২৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit