খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরে পুলিশের পৃথক পৃথক অভিযানে ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এই সময় সন্দেহভাজন ৭ জনকে আটক করা হয়। স্থানীয় প্রভাব বিস্তার ও নির্বাচনী শত্রুতা উদ্ধারে প্রতিপক্ষের উপর হামলার প্রস্তুতিকালে এই অভিযান চালানো হয়। শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মজিবর রহমান খানের বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র এবং চিকন্দী ইউনিয়নের আটপাড়া থেকে ককটেল উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়েছে।
পুলিশ, ডোমসার বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, মাষ্টার মজিবর রহমান খান গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। সেই থেকে নৌকা প্রতিকের সমর্থকদের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তার লাতিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে নির্যাতনসহ অপমান অপদস্ত করে আসছে। ইতোমধ্যে এক গৃহবধুকে জিম্মি করে জরিমানা আদায় করেছেন। তার পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কালাম ঢালীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডোমসার বাজার থেকে গুটিয়ে দিয়েছেন। সাবেক মেম্বার আলী আকবর বেপারীকে অপমান করে বাজার থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
লিটন সিকদারকে বিবস্ত্র করে বাজার দিয়ে ঘুড়িয়েছেন। গত এক বছরে এই ধরণের ডজন খানেক ঘটনা ঘটিয়েছেন চেয়ারম্যান তার লালিত সন্ত্রাসিদের দিয়ে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ডোমসার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. এমদাদ মুন্সীকে ডোমসার বাজারে জিম্মি করে চেয়ারম্যানের লালিত সন্ত্রাসীরা মারধর করে এবং ৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই বিষয়ে পালং মডেল থানায় চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক রানা মুন্সীসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়। এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত ১১টায় চেয়ারম্যানের বাড়ির ছাদ থেকে ইট ও রানা মুন্সীর বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। প্রতিপক্ষের উপর হামলার উদ্দেশ্যে এইসব রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করেছে পুলিশ।
অভিযোগকারী মো. এমদাদ মুন্সী বলেন, ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি হিসেবে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের সমর্থন করি। নৌকার প্রার্থী পরাজিত হওয়ায় বিজয়ী চেয়ারম্যান মাস্টার মাজিবর রহমান খান তার লাতিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে নৌকার সমর্থকদের মারধর ও অপমান অপদস্ত করে। অনেককে বাজারে ব্যবসা করতেও দেয়নি। এবার আমার উপর হামলা করে এবং টাকা ছিনিয়ে নেয়। আমি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেছি। পুলিশ চেয়ারম্যান ও তার লাতিল সন্ত্রাসীদের বাড়িতে তল্লাসি চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে আটক করেছে।
চেয়ারম্যান মাস্টার মজিবুর রহমান খান বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে আমি বিজয়ী হই। নির্বাচনের পূর্বেই নৌকার সমর্থকরা আমার নির্বাচনী ক্লাব ভাংচুর করে। তখন আত্মরক্ষার্থে আমার সমর্থকরা কিছু ইট বাড়ির ছাদে তুলে রাখে। পুলিশ সেখান থেকে ইট উদ্ধার করেছে। সংবাদ পেয়ে আমার সমর্থকরা আমার বাড়িতে আসে। পুলিশ সেখান থেকে চার জনকে আটক করেছে। অপর দিকে চিকন্দী ইউনিয়নের আটপাড়া এলাকায় হুকুম আলী মোল্যা ও সিদ্দিক মোল্যাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলার উদ্দেশ্যে ককটেল মজুদ করা হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ৯টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে। ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করে।
পালং থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন বলেন, ডোমসার ইউনিয়নে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও চিকন্দীতে পারিবারিক কলহে সংঘর্ষের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এমন সংবাদ পেয়ে উভয়স্থানে অভিযান চালানো হয়। চিকন্দী থেকে ৯টি তাজা ককটেল উদ্ধার পরবর্তী ধ্বংস করা হয়েছে। ডোমসার ইউপি চেয়ারম্যানের ছাদ থেকে ইট ও তার সমর্থক রানার বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। দুই জায়গা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/রাত ৮:০৫