আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অনিয়মিত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি কঠোর নজরদারির কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর নেতারা বলেছেন, অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে নিজেদের সীমানা কঠোর করা হবে। তাদের কেউ কেউ সীমান্তে নতুন করে বেড়া এবং দেওয়াল তৈরির কথাও বলেছেন। আবার কোনো কোনো নেতা বলেছন, পৃথিবীর দারিদ্রপীড়িত অঞ্চলে জীবনযাত্রার মানের উন্নতিতে অর্থ ব্যয় করতে চান তারা।
২৭ প্রতিনিধির মধ্যে অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড এবং ডেনমার্কসহ আরো কয়েকটি দেশের নেতারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন। সেখানেই এসব কথা উঠে আসে। এ ছাড়াও গত বছর তিন লাখ ৩০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউরোপে প্রবেশের প্রসঙ্গ ধরে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা।
অনিয়মিতভাবে প্রচুর অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউরোপে প্রবেশ করছেন বলে জানান আইরিশ প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাডকার। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে কারা আসবে এই সিদ্ধান্ত আমরা ইউরোপীয়ানরা নিয়ে থাকি, মানবপাচারকারীরা নয়। যারা শরণার্থীর মর্যাদা লাভ করে তাদের থাকার অধিকার আছে। কিন্তু অন্যদের নেই। আমি মনে করি তাদের ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।’
২০১৫ সাল থেকে ইইউতে অভিবাসন প্রক্রিয়া রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময় যখন লাখো সিরীয় নাগরিক ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে তখন থেকে এই অবস্থা তৈরি হয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে স্পেন এবং গ্রিস থেকে লাতভিয়া এবং পোল্যান্ড পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর ও বেড়া ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এসে তা দুই হাজার কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে।
কভিড-১৯ মহামারির পর পৃথিবী আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে, ২০২২ সালে ইউরোপজুড়ে বাড়তে থাকে অনিয়মিত অভিবাসন। ২০১৬ সালের পর সেটিই সর্বোচ্চ। ফলে অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকানোর বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।
সীমানা প্রাচীর ও বেড়া
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার বলেন, ‘ইইউতে অবৈধ অভিবাসনের বিষয়ে আমাদের লাগাম টানতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেড়া কিংবা অন্য অবকাঠামো, যা-ই বলেন না কেন, এর জন্য আমাদের অর্থের প্রয়োজন। যখন সীমান্ত নজরদারি এবং কর্মীদের কথা কিংবা প্রযুক্তিগত সরঞ্জামের কথা আসে তখন বলতে হবে বুলগেরিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্মিলিত বাজেট থেকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অর্থায়নে বরাবরই অনীহা প্রকাশ করে আসছে। তবে সীমান্ত নজরদারি সরঞ্জাম এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে অর্থ প্রদানে কার্পণ্য ছিল না।
তবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অর্থায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছন লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের ঐতিহ্য হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভাজন কাটিয়ে ওঠা এবং ২৭ দেশ মিলে একটি অঞ্চল তৈরি করা। সেখানে ভ্রমণকারীরা কোনো তল্লাশি ছাড়াই সীমানা পার হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই মুহুর্তে আলোচনার বিষয় হলো বুলগেরিয়া-তুরস্ক… তবে এটুকুই কী যথেষ্ট নয়… আবার নতুন বেড়া এবং আবার নতুন সীমানা প্রাচীর… আমরা কি তবে ইউরোপে একটি দুর্গ চাই?’
কিউএনবি/আয়শা/১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/রাত ৮:৩৮