বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ী এক নারীকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই টানা হেঁচড়া করে ধরে আনা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এক পর্যায়ে ওই নারী পুলিশের সামনেই কীটনাশক পান করে। পরে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সোমবার রাত ১১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তবে পুলিশের দাবি, ওই নারী মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সাল থেকে একটি মাদক মামলা রয়েছে। সোমবার উপজেলার একটি জমি থেকে ২০কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। যার মালিক ওই নারী ও তার স্বামী। তবে ওই নারীর পরিবারের দাবি, তিনি মাদক ব্যবসায়ী নন। ওই নারীর নাম মৌসুমী আক্তার (২৫)। তিনি উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের আইয়ুব খানের মেয়ে ও আমিন মিয়ার স্ত্রী। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নিজ ঘরে পুলিশের সামনেই কীটনাশক পান করেন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথম আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত ১১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় লোকজন, গৃহবধূর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আখাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক আলী ও সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল আজিজ সঙ্গে মহিলা পুলিশসহ ৮/১০ জন পুলিশ উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে মৌসুমীর বাবার বাড়িতে যান। সেসময় পুলিশ সদস্যরা তাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যায়িত করে বাড়ি থেকে টানা হেঁচড়া করে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ সদস্যের কাছে থানায় নিয়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করে মৌসুমী। তার দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে এবং স্বামী পাগল জানিয়ে কেন থানায় যাবে জানতে চাই মৌসুমী। ওসি তাকে ধরে নিয়ে যেতে বলেছে বলে জানায় এএসআই আজিজ। টানা হেঁচড়া শুরু করে ধরে নিয়ে যেতে না চাইলে এক পর্যায়ে নিজ ঘরেই পুলিশের সামনেই কীটনাশক পান করে ওই নারী।
সেসময় পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে পৌঁছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাত আটটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত ১১টার দিকে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়। ঢাকায় নেওয়ার সময় ওই গৃহবধূর সঙ্গে এ্যাম্বুলেন্সে আখাউড়া থানার উপপরিদর্শক আবদুল সালেক উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান,“ওই গৃহবধূ মাদক ব্যবসায়ী। ওসি স্যার আমাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। চিকিৎসক ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। আখাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান জানান, রোগীর শরীরের রক্তচাপ অনেক কমে গিয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল মোনেম জানান, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
মৌসুমীর মা শাহানা বেগম জানান, তার মেয়েকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে মহিলা পুলিশসহ ৮-১০ পুলিশ সদস্য বাড়িতে আসে। পুলিশ সদস্যরা মেয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেসময় পুলিশ সদস্যরা থানার ওসির কথা বলে মেয়েকে ধরে নিয়ে যেতে টানা হেঁছড়া করতে থাকে পুলিশ সদস্যরা। হার্টে ব্লক আছে এবং তাকে নেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন জাহান। অপমান সইতে না পেরে ক্ষোভে পুলিশের সামনেই বিষ পান করে মেয়ে। তিনি জানান, পুলিশের সামনে বিষপান করলেও কেউ তাকে ফেরাতে আসেনি। বরং পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে সরে পড়েন। তার মেয়ের নামে কোনো মামলা বা কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। তারা শুধু শুধু এই কাজ করেছে। তিনি এ ঘটনার বিচারের দাবি করেন। গৃহবধুর দেবর মো. রায়হান বলেন, আমার ভাবী পুলিশকে বলেছে যে তার নামে কোনো মামলা নেই। কেন থানায় যাবেন তিনি? এরপর পুলিশ সদস্যরা ঘরের সব জিনিসপত্র উলটপালট করে দেয়। ভাবীকে নিয়ে যেতে প্রায় ১ ঘন্টা টানা হেঁচড়া করে।
পরে ঘরের কোনো এক জায়গা থেকে নিয়ে তিনি বিষ পান করেন। তখন পুলিশ দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুল ইসলাম বলেন, ওই নারীর সঙ্গে পুলিশের এক সদস্য রয়েছে। তাঁর অবস্থা এখন ভালো। সোমবার বিকেলে উপজেলা কলেজপাড়া থেকে শহিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তির জমি থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ২০কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। মাদকের মালিক ওই নারী ও তার স্বামী বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ওই নারী মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই।
কিউএনবি/আয়শা/২৪ জানুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৬:৫২