ডেস্কনিউজঃ ‘জেল-জুলুম’ উপেক্ষা করে আন্দোলন সফল করার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, ‘সবাইকে জেগে উঠতে হবে। আন্দোলন করতে গিয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিয়েছি, আমরা বাংলাদেশকে একটা উদার রাষ্ট্র তৈরি না করে ঘরে ফিরব না। বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।’
‘জেল-জুলুম যাই আসুক তা উপেক্ষা করে সামনে দিকে এগিয়ে যাব। ১০ দফা দাবি আদায় করব। বাধ্য করব এই সরকারকে পদত্যাগ করতে। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটা জাতীয় নির্বাচন করতে বাধ্য করব।’
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা বলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সভার আয়োজন করে বিএনপি।
এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। আমরা কি সেই লক্ষ্যে স্থির আছি? আমরা কি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই? বন্ধুরা যারা এখনো কারাগারে রয়েছেন তাদের মুক্ত করতে চাই? আসুন- তাহলে আর কালক্ষেপণ নয়, সাহস নিয়ে আগামী দিনগুলোতে রাজপথে থাকব। অবশ্যই জয়যুক্ত হব।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচন না করে ২০১৪ সালে, আর ২০১৮ সালে তার আগের রাতে নির্বাচন করে জনগণের সঙ্গে পুরোপুরি প্রতারণা করে ক্ষমতায় বসে আছে। যেমন করেই হোক তারা আবারো ক্ষমতায় যেতে চায়। সেখানেই মানুষ জেগে ওঠেছে। মানুষ এই সরকারের পতন চায়।’
বিজয় কিবোর্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের অপকীর্তির কথা বলে শেষ করা যায় না। পত্রিকায় দেখুন- বিজয় কিবোর্ড আত্মগোপন ও তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন। আমাদের যে মোবাইল স্মার্ট সেট সেখানে বিজয় কিবোর্ডকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কারণ এই বিজয় কিবোর্ডের মালিকানা হচ্ছে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, যিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। কত বড় ভয়ংকর কথা। দুর্নীতি কী পরিমাণ হতে পারে? কখনই একজন মন্ত্রী নিজের কোম্পানিকে সরকারের কোনো লাভজনক কাজের মধ্যে জড়াতে পারেন না এটাই হচ্ছে নিয়ম-নীতি-আইন। সেখানে তারা প্রকাশ্যে এই কাজটা করছে সরকারি ঘোষণা দিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ জানে আওয়ামী সরকার সম্পদ লুণ্ঠন করছে। সারা দেশের মানুষ জানে এই সরকারের লোকজন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। যাদের পায়ে চম্পল ছিল না তারা এখন রোজগার্ড গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটাই বাস্তবতা।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সেই ১৯৭৫ সালে বাকশাল করে গণতন্ত্র হত্যা করেছে। বর্তমানে দিনের ভোটে রাতে ডাকাতি করে এবং বয়কট নির্বাচনে তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। শুধু জাতীয় নির্বাচন হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র সাংঘর্ষিক।’
বিএনপি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিদার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের কথা শুনলে এ দেশের কিছু লোকের গাত্রদাহ হয়। বিএনপির শক্তি এই দেশের জনগণ। বিএনপির পক্ষে জনস্রোত দেখে আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকারের এত গাত্রদাহ যে, তারা বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার করে। মিথ্যা, বানোয়াট কথা বলে। আমি বলতে চাই, কোনো লাভ নেই।’
দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আহমেদ আজম খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কিউএনবি/বিপুল/১৯.০১.২০২৩/রাত ১১.১২