শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
মে দিবস উপলক্ষে জেলা শ্রমিক লীগের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত রাঙামাটিতে রশিতে মস্তক ঝুলানো, দেহ বিচ্ছিন্ন মরদেহ উদ্ধার ভোট দিতে একসঙ্গে ঢালিউডের ‘তিন কন্যা’, জানালেন প্রত্যাশা ইরানে হামলা নিয়ে যা জানালেন ইসরায়েলি কর্মকর্তা লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকেই সমর্থন জানাতে পারে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘুরা শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল: পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার চেষ্টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে: কাতার লিসবনে শত প্রভাবশালীর একজন মেরিনা তাবাসসুমের প্রদর্শনী ইরানে ইসরাইলের হামলা, শেষ মুহূর্তে জেনেছে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে

রুপা মোজাম্মেল এর স্মৃতিচারণঃ শৈশব স্মৃতি

রুপা মোজাম্মেল। কানাডা প্রবাসী।
  • Update Time : বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১১৬১ Time View

 শৈশব স্মৃতি
—————
ছোট বেলায় পুতুল সবাই খেলে। আমিও খেলেছি বড় দুই বোনের সাথে মিশে খেলেছি। মাঝে মাঝে ওরা অবশ্য আমাকে খেলায় নিতে চাইতো না, আমি ছোট বলে। পুতুল নষ্ট করে ফেলবো তাই। মন খারাপ হতো খুব। ভাবতাম, কবে যে বড় হবো! আর আপুদের সাথে আরো বেশি খেলতে পারবো।

আমার আম্মা, সেলাই এর হাত খুব ভাল ছিল। তখনকার মহল্লার আন্টিরা অনুরোধ করে আম্মার কাছ থেকে তাদের জামা কাপড় সেলাই করিয়ে নিতেন। সেই সুবাদে অনেক রঙিন রঙিন ছাট কাপড় পেতাম পুতুলের শাড়ী কাপড় বানাতে। কত প্রিও প্রিও পুতুল ছিল বলার ভাষা নেই! পুতুল গুলি যেনো কলিজার টুকরা ছিল এক একটা।

আমার আব্বু, একদম পুতুল খেলা পছন্দ করতেন না। সব সময় লুকিয়ে রাখতে হতো পুতুলের বাক্স। যদি আব্বুর চোখে পুতুলের বাক্স ধরা পরে, তাহলে আর রক্ষা নেই। চুপ করে আব্বু সমস্ত পুতুল বাক্স সহ আগুনে পুড়ে ফেলতেন। আর প্রিও পুতুল গুলো উঠানের বড়ই গাছে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখতেন কিছুক্ষণ আমাদের দেখানোর জন্য। আর কখনো যেনো পুতুল না খেলি।

আমরা তিন বোন সেই পুতুলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে জানালার গ্রিল ধরে অনেকক্ষণ কান্না করতাম। মনে মনে ভাবতাম বড় হয়ে অনেক পুতুল খেলবো। আব্বু আর কিছু বলতে পারবে না তখন। আমার কচি মন তখনও বুঝতো না, বড় হলে যে আর পুতুল খেলা হয়না!
কিছুদিন যেতে না যেতে আবার তৈরি হয়ে যেতো পুতুলের বাক্স। আর এভাবেই চলতে থাকতো পুতুল খেলা আব্বুর আড়ালে।

আমার ছোট দুই ভাই, আমার থেকে একজন এক বছরের ছোট, আর আরেকজন দুই বছরের ছোট। যখন ওরা বাইরে গিয়ে খেলা শিখলো, আমারও নেশা ধরলো ওদের সাথে খেলার। মার্বেল, ডাং গুলি, ফুটবল, ক্রিকেট, পিং পং, লাটিম, ইয়ো ইয়ো যত্ত রকম ছেলেদের খেলা ছিল খেলতাম।

সবার সাথে পাল্লা দিয়ে খুশিতে খুশিতে ছয় ফুট ওয়াল থেকে লাফিয়ে নিচে পড়তাম, এক ছাদ থেকে লাফিয়ে অন্য ছাদে যেতাম। আবার খালার বাসায় বেড়াতে গেলে দুতলার কার্নিশ থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়তাম। ব্যাথা পাওয়ার বা হাত পা ভাঙার কোনো ভয়ই ছিল না! শুধু গাছে উঠতে পারতাম না। কখনো যদি উঠে পরতাম, তাহলে আর নামতে পারতাম না। হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকতাম, কেউ গাছের নিচ দিয়ে গেলে, তারা আমার কান্না শুনে আমাকে নামাতো। তাই গাছে উঠার শখ শেষ মেশ বাদই দিলাম।

মার্বেল ছিল খুবই প্রিও খেলা, খেলতে গিয়ে একটা ছরা শিখলাম মহল্লার ছেলেদের কাছ থেকে। খেলায় উইনার হতে হলে ছড়াটা অবশ্যই জানতে হবে। তা না হলে কুড়িটি মার্বেল কখনোই উইন করা যাবে না। একটা মার্বেল দিয়ে আরেকটা মার্বেল মারতে হবে, আর ছড়াটা বলতে হবে, খেলার নিয়মটা এমনই ছিল।

বাসায় এসে ছড়াটা যখন আয়ত্ত করতে বার বার আউরাচ্ছিলাম, হঠাৎ আম্মা এসে এমন মাইর দিল আর আঙ্গুল উচিয়ে শাষানি দিল “আবার যদি কখনো শুনি এইসব মুখে এনেছিস আর মার্বেল খেলতে গিয়েছিস, তাহলে হাতের আঙ্গুল ভেঙে ফেলবো আর মুখের সব দাত ফেলে দিবো, মনে থাকে যেনো!” আমার অবুঝ মন বুঝতেই পড়লোনা আম্মা কেনো মারলো! শুধু তো একটা খেলার ছড়াই ছিল! তাতে এত্ত মাইর দেয়ার কি হলো! শরীরে মাইরের ব্যাথা নিয়ে এবার মনে মনে মুখস্ত করছি —

এগারো তে এক ঘুরানী
বারো তে ভাতবারনী
তেরো তে ত্যান্দর
চোদ্দ তে চু***নি
পনেরো তে পানের খিলি
ষোলো তে শবরী কলা
সতেরো তে সন্ন্যাসী
আঠারো তে আমের আঠা
উনিশ এ বনবাস
বিশ এ এক কুড়ি।

 

 

লেখিকাঃ রুপা মোজাম্মেল লেখাপড়া শেষ করে কানাডা প্রবাসিনী হয়েছেন। পুরো পরিবার নিয়ে কানাডায় থাকেন, সেখানেই তাঁর কর্ম জীবন। লেখালেখি করেন নিয়মিত। জীবনের খন্ডচিত্র আঁকতে পারদর্শিনী রুপা মোজাম্মেল। আজকের গল্পটি তাঁর কাছ থেকে সরাসরি সংগৃহিত।

 

 

 

কিউএনবি/বিপুল/১১.০১.২০২৩/ রাত ৮.৪৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

April 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit