বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৭ অপরাহ্ন

ফ্রান্সের সামনে অ্যাটলাসের ক্ষুধার্ত সিংহ মরক্কো

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৮৯ Time View

স্পোর্টস ডেস্ক : দুটো দলই যেন ইমানুয়েল ম্যাখোঁর! সেমিফাইনালে ওঠার পর ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট তাঁর দল ও প্রতিবেশী মরক্কোকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘চলো, এবার আমরা গিয়ে সেমিফাইনাল শেষ করি। ’ একসময় ফরাসি উপনিবেশ ছিল মরক্কো। উনিশ শতকের মাঝামাঝি আলাদা হলেও মরক্কোর সঙ্গে ফ্রান্সের চমত্কার সম্পর্ক। অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সুবিধার টানে মরক্কোর লোকজন এখনো অভিবাসী হয়ে আসে ফ্রান্সে।

কয়েক দিন আগে প্যারিসে দুই পক্ষ একসঙ্গে বসে দেখেছে দুটো কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। সম্পর্কের উষ্ণতায় তারা বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগী হলেও খেলার মাঠে প্রবল প্রতিপক্ষ। স্পেন, পর্তুগালের মতো শক্তিমানদের বাড়ি পাঠিয়ে মরক্কো হয়ে উঠেছে টুর্নামেন্টের ‘রকি বালবোয়া’। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরাও অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে চায় না মরক্কোর ফাঁদে ধরা দিতে।

মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের চোখে মরক্কো কাতার বিশ্বকাপের ‘রকি বালবোয়া’। হলিউডের এই ছবিতে অখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধার হঠাত্ এক ঘুষিতে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনার মতোই মরক্কো মহাবিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিশ্বকাপে। ওয়ালিদের স্বপ্নের পরিধিও বেড়েছে, ‘স্বপ্ন দেখতে পয়সা লাগে না। আর স্বপ্ন না দেখলে উঁচুতে ওঠাও যাবে না। ইউরোপীয় দলগুলোর এখন বিশ্বকাপ জেতা অভ্যাস হয়ে গেছে। ’ ওয়ালিদের জন্ম ফ্রান্সে, খেলেছেনও ওখানে, সুবাদে ইউরোপীয় ফুটবলের নাড়ি-নক্ষত্র তাঁর জানা। এই নির্যাসটুকু তিনি মরক্কো দলে সঞ্চার করে আশরাফ হাকিমিদের চোখে বিশ্বকাপ ফাইনালের স্বপ্নের আবির লাগিয়ে দিয়েছেন। সুবাদে ‘অ্যাটলাস লায়ন’ সেমিফাইনালেও সত্যিকারের সিংহ হয়ে উঠতে পারে।

মরক্কোকে হালকাভাবে নিলে যে বিপদ হতে পারে সেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারেন রাফায়েল ভারান। ফ্রান্সের এই ডিফেন্ডার সতীর্থদের সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘মরক্কোকে এত দূর আসতে কেউ সুযোগ করে দেয়নি। নিজেদের যোগ্যতাতেই তারা আজ এখানে। আমাদেরও অনেক অভিজ্ঞতা আছে, আমরা যেন তাদের ফাঁদে পা না দিই। আরেকটা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের। ’

লড়াইয়ের সব অস্ত্রে শান দেওয়া আছে ফ্রান্সের। সর্বোচ্চ ৫ গোল করা কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন ফর্মের তুঙ্গে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের উত্তরণ হয়েছে জিরুদের গোলে। আন্তোয়ান গ্রিয়েজমান গোলের কারিগর হয়ে দারুণ খেলছেন। মধ্যমাঠে এনগোলা কান্তের অভাব বুঝতে দিচ্ছেন না চুয়ামেনি। তাতে নিখুঁত দেখাচ্ছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। টানা আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা যেন ফ্রান্সের জন্য শুধু সময়ের ব্যাপার। কাতারে তাদের বিপক্ষে বাজি ধরার লোকও খুব কম।

তবে মরক্কো থেকে আসা হাজার হাজার সমর্থকের মন রঙিন ফাইনালের স্বপ্নে। মরক্কোর শহর ক্যাসাব্লাংকা থেকে আসা তরুণী লামিয়ার বিশ্বাস, ‘কোনো ম্যাচে আমরা ফ্লুকে জিতিনি। সেমিফাইনালে এখন যেকোনো কিছুই করতে পারি। আমরা মানুষের হূদয় জিতে গেছি। এখন শিরোপার ম্যাচে গিয়ে নতুন রেকর্ড করবে মরক্কো। ’ উত্তর আফ্রিকার দল হয়েও মরক্কো কাতারে আফ্রিকান-আরব ফুটবলের শির উন্নত করে ফাইনালে গিয়ে নতুন বার্তা দিতে চায় ফুটবলবিশ্বকে। ফ্রান্সের তুলনায় কাগজে-কলমে পিছিয়ে থাকলেও মরক্কোর দুই মিডফিল্ডার আজ্জেদিন ওনাহি ও সোফিয়ান আমরাবাতের খেলা সবার চোখে পড়েছে। টুর্নামেন্ট শেষে আমরাবাতের কাছে আসতে পারে বার্সেলোনা-লিভারপুলের প্রস্তাবও।

সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পাবে মরক্কোর রক্ষণভাগ। পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি গোল হজম করেছে, সেটিও আবার আত্মঘাতী। আসলে তারা জানে নিজেদের সীমবদ্ধতা। প্রতিপক্ষের গোলমুখে ফিনিশিংয়ে নিজেদের দুর্বলতার কথা। শক্তিশালী রক্ষণভাগ তাই গোল না খেয়ে সব সময় দলকে ম্যাচে রাখার চেষ্টা করে। প্রতি-আক্রমণে কোনোভাবে প্রতিপক্ষের জালে একবার বল জড়াতে পারলেই বাকি কাজটুকু সেরে ফেলবে মরক্কোর রক্ষণভাগ। মোটা দাগে এটাই দলটির পরিকল্পনা।

তবে এই কৌশল ভাঙার অস্ত্র ফ্রান্সের আছে। এমবাপ্পে-জিরুদরা জানেন রক্ষণদেয়াল ভেঙে কিভাবে বল জালে পাঠাতে হয়। দুই দলের লড়াইয়ের পরিসংখ্যানেও এগিয়ে ফ্রান্স। পাঁচ ম্যাচে ফ্রান্সের জয় তিনটি, একটি করে ড্র ও হার। ২০০৭ সালে ফ্রান্সের মাঠে অনুষ্ঠিত দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ২-২ গোলে। ১৫ বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি দুই প্রতিবেশী। সম্পর্কের উষ্ণতায় তারা ‘নিকটাত্মীয়’ হলেও মাঠে তারা প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। একদিকে অভিজাত ফ্রান্স, অন্যদিকে অ্যাটলাসের সিংহ, যাদের প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত দেখাচ্ছে!

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৪ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:০০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit