খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর জেলার বেশিরভাগ ডাকঘর থেকে জরুরী চিঠি বিলি করা হয় না। সাধারণ ও নিবন্ধিত চিঠি মাসের পর মাস পড়ে থাকে ডাক ঘরে। কখনো আবার জমে থাকা চিঠি বা ডকুমেন্ট রাস্তার পাশে, ডাস্টবিনে বা পানিতে ফেলে দেয়া হয়। এমন অভিযোগে মাঠে নামেন প্রতিবেদক। মাঠ পর্যায়ে পোস্ট মাস্টার ও ডাক পিওনদের ভাতা গ্রহণ ছাড়া আর কোন দায়িত্ব পালন চোখে পড়েনি। বিন্দুমাত্র সেবা মিলছে না ডাক বিভাগের গ্রাহকদের।
জেলার প্রধান ডাকঘর সূত্র জানায়, জেলা ও উপজেলার ডাকঘর ছাড়া অন্যান্য ডাকঘরে কোন পোস্টমাস্টার বা পোস্টম্যান দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে না। ভাতা গ্রহণ তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। পরিদর্শণ কালে ডাকঘর গুলোতে হাজার হাজার অবিলিকৃত চিঠি ও ডকুমেন্ট বস্তাবন্দি পাওয়া যায়। এই অভিযোগে অনেকের চাকরিও চলে গেছে। তবুও তাদের মাঝে কোন পরিবর্তন আসেনা। অনেক পোস্ট মাস্টার ও ডাক পিওন তাদের কর্মস্থলে কখনও যায় না। সময়মত চিঠি না পেয়ে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বৃটিশদের করা আইন পরিবর্তন না হলে ডাক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে জেলা ডাক বিভাগ।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সদর উপজেলার কোয়ারপুর ডাকঘরে গিয়ে দেখা গেছে, এই ডাকঘরে পোস্ট মাস্টারের দায়িত্ব পালন করতেন জলিল মাঝি নামে এক ব্যক্তি। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সেই ডাকঘর পরিদর্শনে যায় পরিদর্শক মাকসুদুল ইসলাম। তখন সেখানে বস্তাবন্দি, পলিথিন ব্যাগে, কাগজের ব্যাগে ও পরিত্যাক্ত অবস্থায় হাজার হাজার অবিলিকৃত চিঠি পাওয়া যায়। এই অভিযোগে পোস্ট মাস্টারকে শতর্ক করে পোস্টম্যান মজিবরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই পদে দেলোয়ার খান নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেও দায়িত্বে অবহেলা করতে থাকে। এই বছরের শেষে ডাকঘর পরিদর্শণ হতে পারে আশঙ্কায় জমে থাকা অবিলিকৃত চিঠি ডাস্টবিন, রাস্তায় ও ঝোপঝারে ফেলে রাখা হয়েছে।
ভর্তাইসার গ্রামের আবু বকর মাদবর (৮৫) জানায়, তিনি নাতিদের মাদরাসায় নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় ডাক বিভাগের খামের একটি বান্ডেল পরে থাকতে দেখে কুড়িয়ে নেয়। পরে কুড়িয়ে পাওয়া খামগুলো ডোমসার বাজারের তুষার সাহার দোকানে রাখেন। তুষার সাহা জানায়, সেই বান্ডেলে ১৭টি নিবন্ধিত চিঠি ছিল। চিঠিগুলো শরীয়তপুর সহকারি জজ আদালত থেকে চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে ইস্যু করা হয়েছিল। সেই চিঠি বিলি না করে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়েছে। এমন কর্মকান্ড এই এলাকায় অহরহ ঘটে থাকে।
ভুক্তভোগী হাচেন আলী মাদবর নামে এক বৃদ্ধ জানায়, আদালত থেকে তার নামে একবার চিঠি পাঠায়। সেই চিঠি গায়েব করায় তিনি ডাক বিভাগে অভিযোগ করেন। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় পোস্ট মাস্টারের চাকুরী চলে গেছে। ডাক বিভাগ থেকে এখন আর সেবা পাওয়া যায় না। অসবরপ্রাপ্ত শিক্ষক শঙ্কর চন্দ্র ঘোষ, ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা মাদবরসহ অনেকেই জানায়, ডাক বিভাগের সেবার অপেক্ষায় থাকলে ক্ষতি হয়। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র, নিয়োগপত্র, আদালতের সমনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিঠি আসে এই ডাকঘরে। সেই চিঠি গায়েব হয়ে গেলে বড়ধরণের ক্ষতি হয়। এই সেবার মান ঠিক রাখার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।
পার্শ্ববর্তী রাজগঞ্জ ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, রশিদ নামে এক ব্যক্তি পোস্টম্যানের কাজ করছে। জানা যায় সেখানে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন পোস্টমাস্টার দায়িত্বরত রয়েছেন। বিগত এক যুগেও তাকে দায়িত্ব পালন করতে দেখেনি কেউ। অথচ প্রতি মাসে তিনি তার ভাতা তুলে নিচ্ছেন। এমন অনিয়ম প্রতিটি ডাকঘরে রয়েছে। শরীয়তপুর প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক মাকসুদুল ইসলাম বলেন, একজন পোস্ট মাস্টারকে ৪ হাজার ৫০০ ও ডাক পিওনকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা সম্মানি দেওয়া হয়। সম্মানি যাইহোক তাদের দায়িত্ব অনেক বড়। তারা কোন দায়িত্ব পালন করে না। পরিদর্শণে গেলে ডাকঘরে অবিলিকৃত হাজার হাজার চিঠি পাওয়া যায়। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনা। তাই এই অনিয়ম বেড়েই চলেছে।
অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আরো বলেন, নিজের চোখে দেখেছি। বিসিএস উত্তীর্ণ একটি ছেলের যোগদান পত্রটি বিলি করা হয়নি। তার আত্মনাত আজও আমায় যন্ত্রণা দেয়। দায়িত্বজ্ঞানহীন এই পোস্ট মাস্টার ও ডাক পিওনদের জন্য অনেকের অপূরনীয় ক্ষতি হয়। দায়িত্বে অবহেলার জন্য কোয়ারপুর ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার ও ডাক পিওনকে অব্যাহতি দিয়েছি। দোলোয়ার হোসেন নামে নতুন একজন ডাক পিওনকে নিয়োগ দিয়ে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৪ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:২৪