বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২১ অপরাহ্ন

দেশে পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে, কোনো ভোগান্তি হবে না: প্রধানমন্ত্রী

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২
  • ৯৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে এবং রিজার্ভ জনসাধারণের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার সরকার জনগণের কল্যাণে সম্ভাব্য সবকিছু করবে, কাউকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক যে আমাদের রিজার্ভ থেকে (দেশবাসীর কল্যাণে) খরচ করতে হবে। আমাদের কাছে এত পরিমাণ রিজার্ভ মানি আছে তা দিয়ে আমরা পাঁচ মাসের জন্য খাদ্য আমদানি করতে পারি। যদিও যে কোনো দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে তিন মাসের খাদ্য আমদানির রিজার্ভ থাকতে হয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ৫ম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

চাল, গম, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল এবং ভ্যাকসিন আমদানিসহ জনগণের কল্যাণে এই রিজার্ভ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ রিজার্ভের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছে এবং তারা চা-স্টলে ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় রিজার্ভ নিয়ে আলোচনা করছে। কোভিড-১৯, ভর্তুকি দেওয়া, কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধ করায় এই টাকা ব্যয় হয়েছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে রিজার্ভ রেখে গিয়েছিলেন তা থেকে আওয়ামী লীগ ২০০৮ এ নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করে তখন সেই রিজার্ভ ছিল ৫ বিলিয়নের কিছু ওপরে। করোনাকালে যেহেতু আমদানি বন্ধ ছিল, রেমিট্যান্স সরকারিভাবে এসেছে, কোনো হুন্ডি ব্যবসা ছিল না, কোনো রকম খরচ ছিল না তাই আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। তবে, বাংলাদেশ তাদের সব ঋণ সব সময় সঠিকভাবে পরিশোধ করে এসেছে এবং একবারের জন্যও ঋণখেলাপি হয়নি। 

সরকারের যত সমস্যা হোক এই অবস্থাটা তার সরকার ধরে রাখতে পেরেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। দেশের কাজ বেড়েছে তাছাড়া ভ্যাকসিন ক্রয় এবং করোনা মোকাবিলার আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে- এগুলোর জন্য টাকা খরচ হয়েছে। পানির মতো টাকা খরচ করতে হয়েছে। তারপরে এখন আমাদের খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। তার জন্য অধিক দামে আমদানিতে অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, যতই দাম বাড়–ক সরকার ইউক্রেন-রাশিয়া, কানাডা থেকে এই যুদ্ধকালীন সময়ে গম কিনে আনছে। এজন্য ২শ ডলারের গম ৬শ ডলারে কিনতে হচ্ছে। ভোজ্যতেল সেই ব্রাজিল থেকে শুরু করে পৃথিবীর যে দেশে পাওয়া যায় আমরা নিয়ে আসছি। মানুষের ভোগ্যপণ্য প্রাপ্তিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার।

‘রিজার্ভ শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার শ্রীলংকাকে কিছু সহযোগিতা করেছে এবং আরও অনেক দেশ বাংলাদেশের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। তিনি সেসব দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
তিনি বলেন, ‘এখন যেটুকু রিজার্ভ সেটা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন, সেটা আমাদের রাখতে হবে।’

সরকার প্রধান এর ব্যাখ্যায় বলেন, রিজার্ভ রাখা লাগে কেননা যদি কোনো দৈব দুর্বিপাক হয় সে সময় ৩ সাসের খাবার যেন আমদানি করা যায়। আর সেজন্য আমাদের খাদ্যপণ্য যাতে মোটেই আমদানি করতে না হয় তার জন্য তিনি দেশবাসীকে যার যেখানে যতটুকু জমি আছে তাতে ফসল ফলিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এক ইঞ্চি জমি ফেলে রাখবেন না। যে যা পারেন উৎপাদন করেন। নিজেরা সাশ্রয় করেন। নিজের খাদ্য নিজে জোগান দিন।

তবে, তারা একটা গুজব ছড়াচ্ছে ব্যাংকে টাকা নেই, ব্যাংকে টাকা পাওয়া যাবে না, আর সবাই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ঘরে রাখছে। আসলে ঘরে টাকা রাখা মানে চোরকে সুযোগ করে দেওয়া। কাজেই চোরকে সুযোগ করে দেবেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এই বিশ্ব মন্দার মাঝেও উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতিও রয়েছে তবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। 

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাচিপ’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বক্তৃতা করেন। 

মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে তিনি স্বাচিপ’র স্থায়ী কার্যালয়ের ফলক উন্মোচন করেন।

পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এবং জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা অন্তত তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই জাতির পিতা হত্যার বিচার করতে পেরেছি। কিন্তু এখনো কিছু খুনি রয়ে গেছে। আমেরিকায় এক খুনি রয়ে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বারবার চেষ্টা করছি, যেহেতু তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে। আমেরিকা সেই খুনিকে লালন-পালন করছে, অবশ্য আমেরিকার কারবারই এরকম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর যেখানেই থাক যেভাবেই হোক এদের ধরে এনে সাজা অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। সেটাই আমি চাই।’
তিনি বলেন, খুনিদের একজন কানাডায়, একজন আছে আমেরিকায়, আর দুজন পাকিস্তানে। আরেকজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না কখনো ইন্ডিয়াতে কখনো জার্মানিতে বিভিন্ন জায়গায় মোসলেহ উদ্দিন অবস্থান করেছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এদের ধরে আনার।
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৩২টি øাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত হাসপাতালের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২টি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, সংক্রামক-অসংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সরবরাহ এবং সংরক্ষণ করার জন্য ডিজিটাল ‘হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম’ স্থাপন করেছি, যেন দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী দুর্যোগের আগেই প্রেরণ করা যায়।
তিনি বলেন, সরকার ‘মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম’ চালু করেছে- এর আওতায় দরিদ্র-হতদরিদ্র মায়েদের প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী যাবতীয় সেবা, যাতায়াত খরচ এবং পুষ্টিকর খাবারের অর্থ দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কমিউনিটি স্কিলড বার্থ অ্যাটেন্ডেন্ট (সি.এস.বি.এ) প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে এবং সিনিয়র স্টাফ নার্সদের ৬ মাসের মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চালু করার পাশাপাশি ৩০০০ মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টি করে মিডওয়াইফদের পদায়ন করেছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ছিল সরকারি ৫৮৯টি এবং বেসরকারি ২ হাজার ২৭১টি যা ২০২২ সালে সরকারি ৬৮ হাজার ৩৪৫টি এবং বেসরকারি ১ লাখ ৫ হাজার ১৬৮টিতে উন্নীত করা হয়েছে। সরকারি ডাক্তার ছিল ১২ হাজার ৩৮২ জন যা ৩০ হাজার ১৫২ জনে উন্নীত করা হয়েছে। নার্সের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৩৭৭ জন যা ৪৩ হাজার ১৫ জনে উন্নীত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিশ্বের জন্য রোল মডেল, এ পর্যন্ত ১৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯ জনকে প্রথম ডোজ, ১২ কোটি ৫১ লাখ ৯ হাজার ৬২৯ জনকে ২য় ডোজ, এবং ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার ২৭৫ জনকে বুস্টার ডোজ প্রদান করা হয়েছে। তিনি সবাইকে বিশেষ করে চিকিৎসকদেরকেও বুস্টার ডোজ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে, ‘কোভিড-১৯ রিকভারি সূচকে’ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবার উপরে এবং বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে ভালো করছে সেই তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।

তার সরকার ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা’ এবং ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা চায়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে যেবার শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে এবং সেবারই প্রথম দেশে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। 

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এবং এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর আমাদের দেশের মানুষেরও অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না, কেননা ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকেও আমরা আমদানি শুরু করেছি। যদিও স্যাংশনের কারণে ডলারে পেমেন্টে অসুবিধা হচ্ছে তারপরেও বিকল্প কি ব্যবস্থা করা যায় আমরা সে পদক্ষেপও নিচ্ছি। 

কিউএনবি/অনিমা/২৫ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ১০:২৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit