বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩২ অপরাহ্ন

দ্রুতই হারানো ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা, সাহায্য করছে কারা?

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী তাদের হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে অভিযান জোরদার করেছে। নিয়মিত বিমান হামলা পাশাপাশি চীনের সহায়তার ওপরও নির্ভর করছে তারা। ফলে চার বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ দেশটিতে নতুন মোড় নিয়েছে।

গত বছর চীনের সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রধান বাণিজ্য পথের ওপর অবস্থিত কিয়াকমে শহরটি দখল করেছিল তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি। বিরোধীপক্ষের জন্য এই বিজয়কে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হলেও সরকারি বাহিনী মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে শহরটি পুনরুদ্ধার করেছে।

এই মাসের শুরুতে টিএনএলএ-এর মুখপাত্র তার পার্ন লা বিবিসিকে জানান, এই বছর সামরিক বাহিনীর সৈন্য, ভারি অস্ত্র এবং বিমান শক্তি দুটোই বেড়েছে। আমরা সিপউ রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে কিয়াকমের পর সিপউও জান্তা বাহিনীর দখলে চলে গেছে। ফলে চীন সীমান্ত পর্যন্ত সড়ক পথের নিয়ন্ত্রণ আবার তাদের হাতে ফিরে এসেছে।

সামরিক বাহিনীর এই সাফল্যের পেছনে বেশ কিছু কৌশলগত পরিবর্তন কাজ করেছে। যেমন:

চীনা ড্রোন প্রযুক্তি: শুরুতে বিরোধীরা স্বল্প-মূল্যের ড্রোন ব্যবহারে সুবিধা পেলেও জান্তা বাহিনী চীন থেকে হাজার হাজার ড্রোন কিনেছে। তারা এখন এই ড্রোনগুলোকে মারাত্মক কার্যকরভাবে ব্যবহার করছে। যা তাদের আকাশপথে শ্রেষ্ঠত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

টানা বোমা হামলা: চীন ও রাশিয়ার সরবরাহ করা যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে জান্তা বাহিনী ক্রমাগত বোমা হামলা চালাচ্ছে। এতে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা এই বছর অনেক বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরেই কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

নতুন নিয়োগ: বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগের মাধ্যমে ৬০ হাজারের বেশি নতুন সদস্যকে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। যদিও তারা অনভিজ্ঞ, তবে তাদের সংখ্যা রণক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করেছে।

আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্টের বিশ্লেষক সু মন বলেছেন, বিরোধীরা আমাদের জানিয়েছে যে প্রায় ধারাবাহিক ড্রোন আক্রমণে তাদের অনেক সৈন্য মারা গেছে। তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের তথ্যও বলছে, সামরিক বাহিনীর বিমান হামলা আরও নির্ভুল হয়েছে। সম্ভবত ড্রোন দিয়ে এই হামলা পরিচালনা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং চীনের দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর জন্য ড্রোন বা এর যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে উঠেছে।

চীনের হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচন পরিকল্পনা

সামরিক বাহিনীর এই উত্থানের একটি প্রধান কারণ হলো চীন তাদের পুরো সমর্থন জানিয়েছে। মিয়ানমারে একটি স্থিতিশীলতা ফেরাতে এবং ডিসেম্বরে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চীন জান্তাকে সমর্থন দিচ্ছে।

চীন সামরিক নেতা মিন অং হ্লাইংয়ের সাথে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের একাধিক বৈঠকের ব্যবস্থা করেছে। নির্বাচনকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক মরগান মাইকেলস মনে করেন, চীন বিশৃঙ্খলা এবং যুদ্ধের বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, বেইজিংয়ের নীতি হল কোনো রাষ্ট্রীয় পতন নয়। যখন মনে হয়েছিল সামরিক জান্তা সরকার পড়ে যেতে পারে, তখন চীন এগিয়ে আসে।

চীনের আগ্রহ স্পষ্ট। তাদের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং মিয়ানমার হলো ভারত মহাসাগরে তাদের প্রবেশদ্বার, যা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের তেল ও গ্যাস সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

চলমান সংঘাত এবং মানবিক মূল্য

জান্তা বাহিনী তাদের মনোযোগ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন, প্রধান বাণিজ্য রুট এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন শহরগুলোতে কেন্দ্রীভূত করেছে। কিয়াকমে ও সিপউ উভয়ই নির্বাচনের জন্য মনোনীত স্থান।

তবে এই সংঘাতের মানবিক মূল্য অনেক বেশি। মরগান মাইকেলস জানান, সামরিক বাহিনী শুধু শুষ্ক অঞ্চলেই ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এবং জনগণের ওপর সামরিক বাহিনীর চাপানো সহিংসতা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনার পথকে আরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সূত্র: বিবিসি

কিউএনবি/অনিমা/২৩ অক্টোবর ২০২৫,/দুপুর ১২:১৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit