আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এরদোয়ান সন্তুষ্ট নন এবং সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ পেতে আরো বেশ কয়েকটি ধাপ বাকি রয়েছে। গতকাল আঙ্কারায় দ্বিপাক্ষিক শীর্ষসভায় সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসনকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এই বার্তা দেন। সুইডেনের ন্যাটো আবেদনের বিরুদ্ধে ভেটো তুলে নিতে তুর্কি প্রেসিডেন্টকে রাজি করানোর জন্য মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন একটি সুস্পষ্ট মিশন নিয়ে আঙ্কারা গিয়েছিলেন।
উলফ ক্রিস্টারসন গত সোমবার তার ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সুইডেনকে অবশ্যই নতুন আইনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে আরো কিছু করতে হবে, যা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগ দেওয়ার সব পথ বন্ধ করবে।
সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর বিলস্ট্রোম বলেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার জন্য সুইডেনের পররাষ্ট্র নীতিতে ‘সর্বোচ্চ মূল্য’ দেওয়ার সামিল। সুইডিশ সরকার সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থাকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে যা অবশ্যই রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান এবং তুর্কি সরকারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌছে দেবে বলে বিলস্ট্রোম আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এমনকি বেশ কিছু সুইডিশ রাজনৈতি বিশ্লেষক মনে করেছিলেন যে, আসন্ন আঙ্কারা শীর্ষসভায় সার্বিক পরিস্থিতি সুইডেনের অনুকূলই থাকবে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের উপদেষ্টা ফাহরেটিন আলতুন সুইডেনের দৈনিক আফটনব্লাডেটে তার একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন যে, সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ লাভের পক্ষে তুরস্কের ‘হ্যাঁ’ বলার জন্য দুটি শর্তপূরণের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরী।
সুইডেনের জন্য তুর্কিদের সবচেয়ে কঠিন দাবী কি ছিল, সে সম্পর্কে নিবন্ধে সরাসরি কিছু উল্লেখ করা না হলেও, সন্ত্রাসী সংগঠনের যারা সুইডেনে আশ্রয় বা বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন, তাদের তুরস্কে প্রত্যর্পণ করতে হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে ক্রিস্টারসন প্রথমে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের বিশাল সমাধি পরিদর্শন করে তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং সমাধির অতিথি বইতে লিখেন, ‘তুরস্ক প্রজাতন্ত্রে ভ্রমনে আসা অত্যন্ত সম্মানের বিষয়, যা আগামী বছর ১০০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে’।
সেখানে তিনি সাংবাদিকদের একটি বিবৃতিও দেন, যা বেশিরভাগ তুর্কি মিডিয়াতে একটি বড় প্রভাব ফেলে। তার এই বক্তব্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে বড় অক্ষরে প্রকাশ করে।
তিনি বলেছিলেন, সুইডেন সন্ত্রাসী সংগঠন পিকেকে এবং পিওয়াইডির সাথে কোন ধরণের সংযোগ অথবা সংলাপে জড়িত হবে না।
কিন্তু একই দিন ক্রিস্টারসন যখন তুরস্কের পার্লামেন্টের স্পিকার মুস্তাফা সেন্টপের সাথে সাক্ষাত করেন, তখন কিছু উদ্বেগজনক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় এবং পরিস্থিতি সুইডেনের অনেকের আশার মতো ভালো নাও হতে পারে বলে সন্দেহ দেখা দেয়।
স্পিকার মুস্তাফা সেন্টপ অভিযোগ করেন, পিকেকে, পিওয়াইডি, ওয়াইপিজি এবং গুলেন আন্দোলনকে সুইডেনে “প্রচার, অর্থায়ন এবং সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম” করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু তিনি অভিযোগ করেন যে, তুরস্ক যে ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণের জন্য সুইডেনকে অনুরোধ করেছিল, তাদের বিষয়েও কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বলেছেন, প্রত্যর্পণ ছাড়া কোনও সুইডিশ ন্যাটো সদস্যপদ হতে পারে না এবং তুরস্কের এই দাবিটি এখনও প্রাসঙ্গিক।
শীর্ষসভা শেষে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে এরদোয়ান এবং ক্রিস্টারসনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছিল, যখন তুর্কি রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি পরবর্তী বৈঠকে আরো সাফল্যের প্রত্যাশা করছেন। অবস্থার প্রেক্ষাপটে বোঝা যায় যে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এখন সুইডেনের প্রতি একের পর এক দাবি করা চালিয়ে যেতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুইডিশ সরকার সেই পথে চলতে কতটুকু প্রস্তুত!
কিউএনবি/আয়শা/০৯ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:৩৮