ডেস্ক নিউজ : ১. নিশ্চয়ই আল্লাহ এক ও একক। তাঁর কোনো শরিক (অংশীদার) নেই।
২. তাঁর (আল্লাহর) মতো কিছুই নেই।
৩. কিছুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে না।
৪. তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আর কোনো (সত্য) ইলাহ নেই।
৫. তিনি কাদিম বা প্রাচীন, যার কোনো শুরু নেই. তিনি অনন্ত, যার কোনো অন্ত নেই।
৬. তাঁর (আল্লাহর) ক্ষয় নেই, ধ্বংস নেই।
৭. তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছু সংঘটিত হয় না।
৮. (মানুষের) কল্পনাসমূহ তাঁর (সম্পর্কে জানার জন্য) ধারে-কাছে পৌঁছাতে পারে না, এবং কারো জ্ঞান তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না।
৯. আর তিনি সৃষ্ট বস্তুর সদৃশ নন।
১০. তিনি চিরঞ্জীব, মৃত্যুবরণ করবেন না, চিরজাগ্রত, নিদ্রা যান না।
১১. তিনি (এমন) সৃষ্টিকর্তা, যাঁর সৃষ্টির প্রতি কোনো প্রয়োজন নেই, তিনি কোনো ধরনের ক্লান্তি ছাড়াই (সবার) রিজিকদাতা।
১২. তিনি নির্ভয়ে প্রাণ সংহারকারী এবং বিনা ক্লেশে পুনরুত্থানকারী।
১৩. সৃষ্টির বহু আগ থেকেই তিনি (আল্লাহ) তাঁর অনাদি গুণাবলি বিদ্যমান ছিলেন, আর সৃষ্টির কারণে তাঁর নতুন কোনো গুণের সংযোজন ঘটেনি এবং তিনি তাঁর গুণাবলিসহ যেমন অনাদি ছিলেন, তেমনি তিনি স্বীয় গুণাবলি অনন্ত থাকবেন।
১৪. সৃষ্টির কারণে তাঁর (আল্লাহর) গুণবাচক নাম ‘খালেক’ (সৃষ্টিকর্তা) হয়নি। বিশ্বজাহান সৃষ্টির কারণে তাঁর গুণবাচক নাম ‘বারী’ (উদ্ভাবক) হয়নি।
১৫. প্রতিপাল্যের অবর্তমানেও তিনি ছিলেন ‘রব’ বা প্রতিপালক, আর মাখলুক সৃষ্টির আগেও তিনি ছিলেন ‘খালেক’ বা সৃষ্টিকর্তা।
১৬. মৃতদের জীবন দান করার ফলে যেমন তাঁকে ‘জীবনদানকারী’ বলা হয়ে থাকে, তেমনি তাদের জীবনদান করার আগেই তিনি এই (জীবনদানকারী) নামের অধিকারী ছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি সৃষ্টিকুলের সৃজনের পূর্বেই ‘সৃষ্টিকর্তা’ নামের অধিকারী ছিলেন।
১৭. এটা এই জন্য যে তিনি সব কিছুর ওপর সমপূর্ণ ক্ষমতাবান এবং প্রতিটি সৃষ্টিই তাঁর অনুগ্রহপ্রার্থী। আর সব কিছুই তাঁর জন্য সহজ। তিনি কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী নন।
১৮. তিনি (আল্লাহ) স্বীয় জ্ঞানে সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন।
১৯. এবং আল্লাহ সৃষ্ট বস্তুর জন্য সব কিছুর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
২০. এবং তাদের জন্য মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করেছেন।
২১. সৃষ্টির আগে কোনো কিছুই তাঁর কাছে গোপন ছিল না। জীবজগতের সৃষ্টির আগেই তাদের সৃষ্টির পরবর্তী কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন।
২২। এবং তিনি তাদের তাঁর আনুগত্য করার আদেশ দিয়েছেন। অবাধ্যাচরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
২৩. আর সব কিছু তাঁর নির্ধারণ ও ইচ্ছা অনুসারে পরিচালিত হয়ে থাকে। তাঁর ইচ্ছা কার্যকর হয়েই থাকে। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া বান্দার কোনো ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয় না।
২৪. তিনি অনুগ্রহ করে যাকে ইচ্ছা হিদায়াত, আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন। অপমানিত করেন ও বিপদগ্রস্ত করেন।
২৫. আর সবাইকে তাঁর ইচ্ছা ও অনুগ্রহ এবং ন্যায়বিচারের মধ্যে ঘুর্ণয়মান।
২৬. তাঁর (আল্লাহর) সিদ্ধান্তের পরিবর্তনকারী কেউ নেই এবং তাঁর নির্দেশ বাতিল করার কেউ নেই। তাঁর নির্দেশকে পরাভূত করারও কেউ নেই।
২৭. তিনি (আল্লাহ) কারো প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সমকক্ষ হওয়ার ঊর্ধ্বে।
২৮. উল্লিখিত সব কিছুর ওপরই আমরা ঈমান এনেছি এবং দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করছি যে এসব কিছু আল্লাহর তরফ থেকে আগত।
২৯. নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.) তাঁর নির্বাচিত বান্দা, মনোনীত নবী এবং সন্তোষপ্রাপ্ত রাসুল।
৩০. তিনি [মহানবী (সা.)] নবীদের মধ্যে সর্বশেষ নবী, মুত্তাকিদের ঈমাম, রাসুলদের নেতা এবং সৃষ্টিকুলের মালিকের হাবিব।
৩১. আর তাঁর [মহানবী (সা.)] পরবর্তী যুগে নবুয়তের যেসব দাবি উত্থাপিত হয়েছে, তার সবই ভ্রষ্টতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ।
৩২. তিনি [মহানবী (সা.)] সত্য, হিদায়াত, নুর ও জ্যোতিসহ সব জিন ও মাখলুকের প্রতি প্রেরিত।
৩৩. নিশ্চয়ই কোরআন আল্লাহর কালাম। যা আল্লাহর কাছ থেকে কথা হিসেবে শুরু হয়ে এসেছে। তবে এর কোনো ধরন নির্ধারণ করা যাবে না। এই কালামকে তিনি তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি ওহি হিসেবে নাজিল করেছেন। আর ঈমানদাররা তাঁকে এ ব্যাপারে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন।
৩৪. যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানবীয় কোনো গুণ আরোপ করবে, সে কাফের হয়ে যাবে।
৩৫. আর জান্নাতিদের জন্য আল্লাহকে দেখার বিষয়টি সত্য। অর্থাৎ জান্নাতে আল্লাহকে দেখতে পাবে। তবে সে দেখা সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করে নয়, আর তার পদ্ধতিও আমাদের অজানা।
৩৬. আনুগত্য স্বীকার আর আত্মসমর্পণ ছাড়া কারো পা ইসলামের ওপর দৃঢ় থাকতে পারে না।
৩৭. যে ব্যক্তি জান্নাতিদের দ্বারা আল্লাহকে দেখতে পাওয়া সম্পর্কে কোনো ধারণার বশবর্তী হবে, (অথবা সেটাকে অনিশ্চিত বিষয় জ্ঞান করবে) অথবা নিজের বুঝ অনুসারে সে দেখার ভুল ব্যাখ্যা দেবে, তার ঈমান বিশুদ্ধ হবে না।
৩৮. আল্লাহ তাআলা সীমা, পরিধি থেকে ঊর্ধ্বে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সাজ-সরঞ্জাম থেকে মুক্ত। অন্য সৃষ্ট বস্তুর মতো ষষ্ঠ দিক বেষ্টিত হয় না।
৩৯. মিরাজ সত্য, নবী (সা.)-কে নৈশভ্রমণ করানো হয়েছিল, তাঁকে জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে ঊর্ধ্ব আকাশে উত্থিত করা হয়েছিল।
৪০. হাউস (পানির আধার) যা আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী (সা.)-কে তাঁর উম্মতের পিপাসা নিবারণার্থে প্রদান করে সম্মানিত করেছেন, তা অবশ্যই সত্য।
৪১. নবী (সা.)-এর শাফাআত, যা তিনি উম্মতের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন; তা সত্য।
৪২. ‘মি-ছাক’ (দৃঢ় অঙ্গীকার), যা আল্লাহ তাআলা আদম এবং তাঁর সন্তানদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন—তা সত্য।
৪৩. মহান আল্লাহ শুরু থেকে এবং এখন, সব সময়েই ভালো করেই জানেন। কত লোক জান্নাতে যাবে আর কত লোক জাহান্নামে যাবে। এতে ব্যতিক্রম হবে না। তাই এ সংখ্যা কমবেও না, বাড়বেও না।
৪৪. অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষের কৃতকর্ম সম্পর্কে আগ থেকেই অবহিত এবং যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজসাধ্য করে দেওয়া হয়েছে।
৪৫. ‘তাকদির’ সম্পর্কে আসল কথা এই যে এটা সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহর একটি রহস্য, যা নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফেরেশতা কিংবা প্রেরিত কোনো নবীও অবহিত নন। এ সম্পর্কে তথ্য আবিষ্কার করতে যাওয়া অথবা অনুরূপ আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া আশাহত হওয়ার কারণ। বঞ্চনার সিঁড়ি এবং সীমা লঙ্ঘনের ধাপ।
৪৬. (তাকদির বিষয়ে যা জানা ও যার ওপর ঈমান আনার প্রয়োজন), তা রহস্যময় কারণে সংক্ষিপ্তভাবে বিধৃত হয়েছে। আল্লাহর ওলি তথা বন্ধুদের এতটুকু জানাই প্রয়োজন। আর এটিই হচ্ছে জ্ঞানে সুগভীর প্রজ্ঞা বিভূষিতদের স্তর।
৪৭. আর আমরা লাওহে মাহফুজে ও কলমের ওপর ঈমান রাখি। আর যা আল্লাহ লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন, যা সংঘটিত হবে বলে আল্লাহ এ লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন। সব সৃষ্ট জীব একত্র হয়েও রোধ করতে চায় তারা সেটা করতে সক্ষম হবে না। পক্ষান্তরে, তাতে যে বিষয় সংঘটিত হওয়ার কথা তিনি লিখেননি, সব সৃষ্ট জীব একত্র হয়েও তা ঘটাতে পারবে না।
৪৮. বান্দার এ কথা জেনে রাখা উচিত যে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত যাবতীয় ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ব থেকে অবহিত আছেন। অতএব তিনি সেটাকে অকাট্য ও অবিচল তাকদির হিসেবে নির্ধারিত করেছেন। আসমান ও জমিনের কোনো মাখলুক এটাকে বানচালকারী অথবা এর বিরোধিতাকারী নেই, অনুরূপ একে কেউ অপসারণ অথবা পরিবর্তন করতে পারবে না।
৪৯. আরশ ও কুরসি সত্য।
৫০. আল্লাহ তাআলা আরশ ও অন্যান্য বস্তু থেকে অমুখাপেক্ষী।
৫১. তিনি সব বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে। সৃষ্টিজগৎ তাঁকে পূর্ণভাবে আয়ত্ত করতে অক্ষম।
৫২. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইবরাহিম (আ.)-কে খলিল বা অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং মুসা (আ.)-এর সঙ্গে কথোপকথন করেছেন।
৫৩. আর আমরা আল্লাহর ফেরেশতা, নবী-রাসুলদের ওপর প্রেরিত কিতাবের ওপর ঈমান রাখি। আমরা আরো সাক্ষ্য প্রদান করি যে তাঁরা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
৫৪. আমাদের কিবলাকে (বায়তুল্লাহকে) যারা কিবলা বলে স্বীকার করে আমরা তাদের মুসলিম ও মুমিন বলে আখ্যায়িত করি, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নবী (সা.) কর্তৃক নিয়ে আসা শরিয়তকে স্বীকার করে এবং তিনি যা কিছু বলেছেন তাকে সত্য বলে গ্রহণ করে।
৫৫. আমরা আল্লাহর সত্তা (জাত) সম্পর্কে অন্যায় গবেষণায় প্রবৃত্ত হই না। তাঁর দ্বিন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হই না।
৫৬. কোরআন সম্পর্কে আমরা কোনো তর্কে লিপ্ত হই না এবং সাক্ষ্য প্রদান করি যে কোরআন বিশ্ব চরাচরের রবের কালাম। এটা নিয়ে জিবরিল আমিন অবতীর্ণ হয়েছেন। অতঃপর তিনি তা সব রাসুলের নেতা মুহাম্মদ (সা.)-কে শিক্ষা দেন। এ কোরআন আল্লাহ তাআলার কালাম (বাণী), কোনো সৃষ্টির কথা এর সমতুল্য নয়। আর আমরা একে সৃষ্ট বলি না। এবং (এ ব্যাপারে) আমরা মুসলিম মিল্লাতের বিরুদ্ধাচরণ করি না।
৫৭. কোনো গুনাহর কারণে কোনো আহলে কিবলা (মুসলিমকে) কাফির বলে অভিহিত করি না; যতক্ষণ সে ওই গুনাহকে হালাল (জায়েজ) মনে না করে।
৫৮. আর আমরা বলি না যে ঈমান আনার পর কোনো গুনাহ করাতে ক্ষতি নেই।
৫৯. আমরা আশা করি যে সৎকর্মশীল মুমিনদের আল্লাহ ক্ষমা করবেন এবং স্বীয় অনুগ্রহে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা তাদের সম্পর্কে নিঃশঙ্ক হয়ে যাব না। আর তাদের জান্নাতি বলে ঘোষণাও করব না।
৬০. নিঃশঙ্ক ও নৈরাশ্যবোধ একজন মুসলিমকে ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। আহলে কিবলার জন্য সত্য পথ তো এতদুভয়ের মাঝামাঝি থাকার মধ্যেই নিহিত।
৬১. কোনো মানুষ ওই সব বিষয় অস্বীকার করলেই ঈমানহারা, যা স্বীকার করে সে তাতে প্রবেশ করেছে।
৬২. আর ঈমান হচ্ছে, মুখে স্বীকৃতি দেওয়া এবং অন্তর দিয়ে সত্যায়ন করা।
৬৩. ইসলামী শরিয়ত ও তার ব্যাখ্যায় যা রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রাপ্ত হয়েছে, তা সবই হক বা সত্য।
৬৪. ঈমান এক। আর ঈমানদার ব্যক্তিরা সে মৌলিক দিক থেকে সবাই সমান। তবে তাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য হয়ে থাকে।
৬৫. সব মুমিন দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওলি বা বন্ধু। আর তাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত সেই ব্যক্তি যে তাঁর বেশি অনুগত এবং কোরআনের বেশি অনুসারী।
৬৬. আর ঈমান (এর বিস্তারিত রূপ) হচ্ছে, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর গ্রন্থ, তাঁর রাসুলরা, শেষ দিবস এবং তাকদিরের ভালো-মন্দ, মিষ্টি ও তিক্ত, সবই আল্লাহর অনুমতিতে ঘটে থাকে; এ ঈমান রাখা।
৬৭. আর আমরা উল্লিখিত বিষয় সবটির ওপর ঈমান পোষণ করি। আমরা রাসুলদের মধ্যে (ঈমানের ক্ষেত্রে) কোনো তারতম্য করি না। তাঁরা যেসব বিধিবিধান নিয়ে এসেছিলেন তা সবই সত্য বলে স্বীকার করি।
৬৮. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের মধ্যে যারা (শিরক ছাড়া) কবিরা গুনাহ করবে তারা তাওবা না করলেও জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে না; যদি তারা তাওহিদ তথা একত্ববাদী হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
৬৯. আর আমরা প্রত্যেক সৎ ও পাপী মুসলিমের পেছনে নামাজ আদায় করা এবং প্রত্যেক মৃত মুসলিমের জন্য জানাজার নাামাজ আদায় করার পক্ষে মত প্রদান করি।
৭০. আমরা তাদের কাউকে জান্নাতি ও জাহান্নামি বলে আখ্যায়িত করব না। তাদের কারো বিরুদ্ধে আমরা কুফর ও শিরক অথবা নিফাকের সাক্ষ্য প্রদান করব না, যতক্ষণ এগুলোর কোনো একটি তাদের মধ্যে প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর না হয়। তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার আমরা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিই।
৭১. আমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতদের কারো বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার পক্ষে মত দিই না, যদি এমন কেউ না হয় যার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা ওয়াজিব।
৭২. আমির ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা বৈধ মনে করি না, যদিও তারা অত্যাচার করে। আমরা তাদের অভিশাপ দিব না এবং আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নেব না।
৭৩. আমরা আহলে সুন্নাত এবং জামাআতের অনুসরণ করব। আমরা জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং জামাআতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকব।
৭৪. আমরা ন্যায়পরায়ণ ও আমানতদার ব্যক্তিদের ভালোবাসব এবং অন্যায়কারী ও আমানতের খিয়ানতকারীদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করব।
৭৫. যেসব বিষয়ে আমাদের জ্ঞান অস্পষ্ট সেসব বিষয়ে আমরা বলব, ‘আল্লাহ তাআলা বেশি জানেন। ’
৭৬. সফরে ও গৃহে অবস্থানকালে আমরা হাদিসের নিয়মানুসারে মোজার ওপর মাসেহ করার পক্ষে মত প্রদান করি।
৭৭. মুসলিম শাসক ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক—তার অনুগামী হয়ে হজ ও জিহাদ করা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ দুটি জিনিসকে কোনো কিছুই বাতিল কিংবা ব্যাহত করতে পারবে না।
৭৮. আমরা কিরামান-কাতিবিন (সম্মানিত লেখকবৃন্দ) ফেরেশতাদের ওপর ঈমান রাখি, আল্লাহ তাআলা তাদের আমাদের ওপর পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।
৭৯. আমরা মৃত্যুর ফেরেশতার ওপর ঈমান রাখি। তাকে সৃষ্টিকুলের রুহ কবজ করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
৮০. আমরা শাস্তিযোগ্য ব্যক্তিদের জন্য কবরের আজাবের প্রতি ঈমান রাখি এবং এও ঈমান রাখি যে কবরে মুনকার-নাকির (দুই ফেরেশতা) মৃত ব্যক্তির রব, দ্বিন ও নবী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন।
৮১. কবর জান্নাতের বাগিচাসমূহের অন্যতম অথবা তা জাহান্নামের গহ্বরসমূহের অন্যতম।
৮২. আমরা পুনরুত্থান, কিয়ামত দিবসে আমলের প্রতিফল, (আল্লাহর সমীপে) পেশ করা, হিসাব-নিকাশ, আমলনামা পাঠ, সওয়াব, শাস্তি, পুলসিরাত এবং মিজান—এসবের ওপর ঈমান রাখি।
৮৩. (আরো ঈমান রাখি যে) জান্নাত ও জাহান্নাম পূর্ব থেকে সৃষ্ট হয়ে আছে। এ দুটি কোনো দিন লয় বা ক্ষয় হবে না। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং যাকে ইচ্ছা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আর তা হবে তার ন্যায়বিচার।
৮৪. ভালো-মন্দ উভয়টি বান্দার জন্য নির্দিষ্ট করে লেখা হয়েছে।
৮৫. ‘সামর্থ্য’ (যা প্রত্যেক কর্মের জন্য অপরিহার্য। আর তা) দুই ধরনের। (১) যে সামর্থ্য বান্দার কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট (কর্ম বাস্তবায়িত করার সময় থাকা অপরিহার্য) যেমন—কাজটির তাওফিক (যথাযথভাবে সম্পন্ন করার সুযোগ) তা কোনো সৃষ্টির গুণ হতে পারে না, (বরং তা শুধু আল্লাহর হাতে) এ ধরনের সামর্থ্য শুধু কার্য সম্পাদনের সময়েই অর্জিত হয়। পক্ষান্তরে (২) যে ‘সামর্থ্য’ বলতে বোঝায় বান্দার সুস্থতা, সচ্ছলতা, সক্ষমতা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিরাপত্তা, তা অবশ্যই কর্মের আগেই থাকা প্রয়োজন। আর এটার সঙ্গেই তাকলিফ (তথা বান্দার জন্য আল্লাহর নির্দেশনা) সম্পৃক্ত।
৮৬. বান্দাদের যাবতীয় কর্ম আল্লাহর সৃষ্টি এবং তা বান্দাদের উপার্জন।
৮৭. আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের ওপর তাদের সামর্থ্যের বেশি দায়িত্বভার ন্যস্ত করেন না।
৮৮. পৃথিবীতে যা কিছু সংঘটিত হয়, তা আল্লাহর ইচ্ছা, তাঁর জ্ঞান ও ফায়সালা এবং তাঁর বিধান অনুসারেই হয়ে থাকে। তাঁর ইচ্ছা সব ইচ্ছার ওপর। তাঁর ফায়সালা সব কৌশলের ঊর্ধ্বে। যা ইচ্ছা, তিনি তাই করেন। তিনি কখনো অত্যাচার করেন না। তিনি সর্ব প্রকার কলুষ ও কালিমা হতে পবিত্র এবং সব রকমের দোষ-ত্রুতিমুক্ত। তিনি যা করেন সে সম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না। পক্ষান্তরে, অন্য সবই স্বীয় কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
৮৯. জীবিত ব্যক্তিদের দোয়া এবং দান-খয়রাত দ্বারা মৃত বক্তিরা উপকৃত হয়ে থাকে।
৯০. তিনি (আল্লাহ) দোয়া কবুল করেন ও বান্দাদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন।
৯১. তিনি (আল্লাহ) সব কিছুর মালিক এবং কেউ তাঁর মালিক নয়। মুহূর্তের জন্যও কারো পক্ষে আল্লাহর অমুখাপেক্ষী হওয়া সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি মুহূর্তের জন্য আল্লাহর অমুখাপেক্ষী হতে চায়, সে কাফের হয়ে যাবে এবং লাঞ্ছিত হবে।
৯২. আল্লাহ তাআলা ক্রুদ্ধ এবং রুষ্ট হন, তবে তা মাখলুকের মতো নয়।
৯৩. আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিদের ভালোবাসি, তবে তাদের কারো ভালোবাসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করি না এবং তাদের কারো থেকে বিমুক্তি ঘোষণা করি না। তাঁদের সঙ্গে যারা বিদ্বেষ পোষণ করে অথবা যারা তাদের অসম্মানজনকভাবে স্মরণ করে আমরা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি। আমরা তাদের শুধু কল্যাণের সঙ্গেই স্মরণ করি। তাদের সঙ্গে মহব্বত রাখা দ্বিন ও ঈমান এবং ইহসানের অংশ। আর তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, কুফরি, মুনাফিকি ও সীমা লঙ্ঘন করার পর্যায়ভুক্ত।
৯৪. আমরা রাসুল (সা.)-এর পর সর্বপ্রথম আবু বকর (রা.) খেলাফতকে স্বীকৃতি দিই। অতঃপর পর্যায়ক্রমে ওমর ইবনুল খাত্তাব, ওসমান ও আলী (রা.)-কে খলিফা বলে স্বীকার করি। তাঁরাই ছিলেন সুপথগামী খলিফা ও হিদায়াতপ্রাপ্ত নেতা।
৯৫. রাসুলুল্লাহ (সা.) যে ১০ জন সাহাবির নাম উল্লেখ করে তাদের সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন, আমরা তাদের জন্য জান্নাতের সাক্ষ্য প্রদান করি। কারণ এ সম্পর্কে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) সুসংবাদ দান করেছেন এবং তাঁর উক্তি সত্য।
৯৬. যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবি, তাঁর পবিত্র স্ত্রীরা ও সম্মানিত বংশধরদের সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করে সে মুনাফিকি থেকে নিষ্কৃত।
৯৭. আগে গত হওয়া সালাফে সালেহিন আলেমরা এবং তাঁদের যথাযথ পদাঙ্ক অনুসারী কল্যাণের অধিকারী হাদিসবিদরা ও ফিকহের জ্ঞানের অধিকারী গবেষকদের আমরা যথাযথ সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করি। আর যারা এদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে, তারা সঠিক পথের পথিক নয়।
৯৮. আমরা কোনো ওলিকে কোনো নবীর ওপর প্রাধান্য দিই না; বরং আমরা বলি, যেকোনো একজন রাসুল সব ওলি থেকে শ্রেষ্ঠ।
৯৯. ওলিদের কারামত সম্পর্কে যে বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং যা বিশ্বস্তসূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আমরা তার ওপর ঈমান রাখি।
১০০. আমরা কিয়ামতের নিম্নলিখিত নিদর্শনাবলির প্রতি ঈমান রাখি—দাজ্জালের আবির্ভাব, আসমান থেকে ঈসা (আ.)-এর অবতরণ। আর আমরা পশ্চিম গগনে সূর্যোদয় এবং দাব্বাতুল আরদ নামক প্রাণীর স্বীয় স্থান থেকে আবির্ভাবের ওপর ঈমান রাখি।
১০১. আমরা কোনো ভবিষ্যৎ বক্তা অথবা কোনো জ্যোতিষীকে সত্য বলে বিশ্বাস করি না। এবং ওই বক্তিকেও সত্য বলে মনে করি না, যে আল্লাহর কিতাব, নবী (সা.)-এর সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখে।
১০২. আমরা (মুসলিম জাতির) ঐক্যকে সত্য ও সঠিক বলে মনে করি এবং তা থেকে বিচ্ছিন্নতাকে বক্রতা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করি।
১০৩. নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে আল্লাহর দ্বিন এক ও অভিন্ন। তা হচ্ছে ইসলাম।
১০৪. ইসলাম মধ্যপন্থী দ্বিন। (বিধিবিধানের) বাড়াবাড়ি ও শিথিলতার মাঝামাঝি তার অবস্থান। (আল্লাহর সত্তা, নাম ও গুণাবলি) সাদৃশ্য স্থাপন কিংবা অর্থহীন করার মাঝে তার অবস্থান। (জবর) তথা ক্ষমতাহীন বাধ্য ও (কাদর তথা) নির্ধারণহীনতামুক্ত এ দুয়ের মধ্যে তার অবস্থান। অনুরূপ (আল্লাহর ভয় ও ক্ষমার ব্যাপারে) নিশ্চিন্ততা ও নৈরাশ্যের মধ্যবর্তীতে তার অবস্থান।
১০৫. এগুলোই হচ্ছে আমাদের দ্বিন এবং আমাদের মৌলিক বিশ্বাস। প্রকাশ্যে এবং অন্তরে তা-ই আমরা ধারণ করি। ওপরে যা আমরা উল্লেখ করলাম এবং বর্ণনা করলাম যারাই তার কোনো কিছুর বিরোধিতা করে, তাদের সঙ্গে আমাদের (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের) কোনো সম্পর্ক নেই।
(আকিদাতুত তাহাবি থেকে সংক্ষেপিত)
কিউএনবি/আয়শা/৩১ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:০৫