ডেস্ক নিউজ : জাহেলিয়াত যুগের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যবস্থাকে কোনোক্রমেই সামাজিক অবস্থার চেয়ে উন্নত বলা যেতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে তেজারত ব্যবসা-বাণিজ্যই ছিল আরব অধিবাসীদের জীবন ও জীবিকার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু দেশ থেকে দেশান্তরে গমনাগমন, মালপত্র পরিবহন, বাণিজ্যের উদ্দেশে ভ্রমণ পর্যটনের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা ইত্যাদি ব্যাপারগুলো এতই সমস্যাসংকুল ছিল যে নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা ছিল এক দুষ্কর ব্যাপার। তৎকালে মরুপথে গমনাগমন এবং মালপত্র পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ছিল উট।
উটের পিঠে চড়ে যাতায়াত এবং মালপত্র পরিবহনের ব্যবস্থাটি ছিল অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা ছাড়া পথও ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল। সব দিক দিয়ে সুসজ্জিত বড় বড় কাফেলা ছাড়া পথ চলার কথা চিন্তাই করা যেত না। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেকোনো সময় দস্যুদল কর্তৃক আক্রান্ত এবং যথাসর্বস্ব লুণ্ঠিত হওয়ার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতে হতো কাফেলার সবাইকে। অবশ্য হারাম মাসগুলোতে তাঁরা কিছুটা নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তা ছিল সময়ের একটি সীমিত পরিসরে সীমাবদ্ধ। কাজেই, বাণিজ্যনির্ভর হলেও নানাবিধ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য তাঁরা তেমন সুবিধা করতে পারতেন না। তবে হারাম মাসগুলোতে ‘উকাজ, জুল মাজাজ, মাজান্নাহ এবং আরো কিছু প্রসিদ্ধ মেলায় বেচাকেনা করে তাঁরা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতেন। ’
আরব ভূখণ্ডে শিল্পের প্রচলন তেমন এতটা ছিল না। শিল্প কারখানার ব্যাপারে পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় আরব দেশ আজও পেছনে পড়ে রয়েছে তুলনামূলকভাবে, সেকালে আরো অনেক বেশি পেছনে পড়ে ছিল। শিল্পের মধ্যে বস্ত্র, চর্মশিল্প, ধাতবশিল্প প্রভৃতি শিল্পের প্রচলন চোখে পড়ত। অবশ্য এ শিল্পগুলো ইয়ামান, হীরা ও শামরাজ্যের সন্নিকটস্থ অঞ্চলগুলোতেই প্রসার লাভ করেছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। কিন্তু সুতাকাটার কাজে সব অঞ্চলের মহিলাদেরই ব্যাপৃত থাকতে দেখা যেত। আরব ভূখণ্ডে অভ্যন্তর ভাগের লোকেরা প্রায় সবাই পশু পালন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। মরু প্রান্তরের আনাচে-কানাচে যেসব স্থানে কৃষির উপযোগী ভূমি পাওয়া যেত সেসব স্থানে কৃষিরব্যবস্থা ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সমস্যাটি সব চেয়ে জটিল ছিল তা হচ্ছে, মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যম জীবনমান উন্নয়ন, মহামারি ও বোগব্যাধি দূরীকরণ কিংবা অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজে অর্থ-সম্পদের খুব সামান্য অংশই ব্যয়িত হতো। সম্পদের সিংহ ভাগই ব্যয়িত হতো যুদ্ধবিগ্রহের কাজে। কাজেই, জনজীবনে সুখ, শান্তি বা স্বাচ্ছন্দ্য বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সমাজে এমন এক শ্রেণির লোক ছিল যাদের দুবেলা দুমুঠো অন্ন এবং দেহাবরণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বস্ত্রখণ্ডের সংস্থানও সম্ভব হতো না। (সূত্র : নবীদের কাহিনি)
তিনি নবুয়ত লাভের পর ঈমানের আহ্বানের পাশাপাশি এমন কিছু পদক্ষেপ নিলেন, যা তৎকালীন অর্থনীতিতে বদলে দিয়েছিল। বিশেষত সে কর্মসূচির ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে মদিনার অর্থনীতি সাফল্য লাভ করে। রাসুল (সা.)-এর দেওয়া কর্মসূচি হলো উপার্জনে হালাল ও হারাম নির্ধারণ, সুদ উচ্ছেদ, ব্যাবসায়িক অসাধুতা উচ্ছেদ, জাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন, বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা, মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন, উত্তরাধিকার নীতি প্রণয়ন, রাষ্ট্রের ন্যায়সংগত হস্তক্ষেপের বিধান ইত্যাদি।
কিউএনবি/আয়শা/২৬ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:৫৫