ডেস্কনিউজঃ কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফের ওপারে মর্টারশেল ও গোলাগুলির বিকট শব্দের ঘটনায় নতুন করে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালি ও খারাইগ্যাঘোনা সীমান্তবর্তী এলাকার মিয়ানমারের ওপারে বেশিই ঘটেছে এ গোলাগুলির ঘটনা। এপারের সীমান্তে এলাকায় বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ভারী গোলার শব্দ শোনা গেছে। এরপর কিছুটা কমলেও শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অনবরত চলতে থাকে মর্টারশেল ও ভারী অস্ত্রের ফায়ারের শব্দ। এমনটি জানিয়েছেন সীমানাবর্তী এলাকার লোকজন।
হোয়াইক্যং খারাংখালি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল খালেদ (৪০)বলেন, ‘রাত ৩টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মিয়ানমারের ওপারে মংডু থানার আওতায়ধীন নাকপুরা ও কুমুরবিলে ভারী গোলার বিকট শব্দ এপারের হোয়াইক্যং খারাংখালি সীমান্ত এলাকা থেকে শোনা গেছে। গোলার বিকট শব্দের ঘটনায় নতুন করে এপারেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হোয়াইক্যং ৮নম্বর ওয়ার্ড নাছের পাড়ার বাসিন্দা আব্দু শুক্কুর (৩৭) বলেন, ‘সীমান্তের ওপারের নাফনদীর একদম কাছাকাছি এলাকায় থেমে থেমে রাতভর গোলার শব্দ শোনা গেছে। এতে সীমান্ত ঘেঁষা চিংড়ি ঘেরে থাকা অনেক লোকজন সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে। তাদের মাধ্যমে আরও জানতে পারি, বিকট মর্টারশেলের গোলার শব্দে তারা চিংড়ি ঘের ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে আসে। ওপারের ফায়ারিং মনে হচ্ছিল আমাদের কাছাকাছি এসে গড়ছে।’
হোয়াইক্যং ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, ‘গত দেড় মাসে তুমব্রু সীমান্তে মর্টারশেল ও গোলাগুলির ঘটনায় কিছুটা আতঙ্কিত ছিলাম। কারণ আমাদের বাসও সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি। গতরাত থেকে আমাদের খারাংগ্যাঘোনা এলাকার সীমান্তের মিয়ানমারের ওপারের রাতভর থেমে থেমে ভারী গোলার শব্দে এলাকার সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসরত লোকজন ভীতির মধ্যেই রয়েছে।’
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ‘সীমান্তের লোকজনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির বিকট শব্দ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়ও শোনা গেছে। এ ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু বিজিবি এপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গোলগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। বিষয়টা আমরা জানার চেষ্টা করছি।’
গত দেড়মাসের অধিক সময় ধরে মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির সঙ্গে সেদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলছে। তাদের অভ্যন্তরীণ হামলায় ব্যবহৃত গোলা কয়েক দফায় এসে পড়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে। প্রথমে শুধু ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের ওপারে গোলার শব্দ হলেও পরবর্তীতে তা উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের ওপারেও ছড়িয়ে পড়ে। এখন টেকনাফের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির শব্দ পূর্বের মতো সীমান্তের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সেনারা অভিযানের নামে বর্বরতা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গা ঢল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ওই সময় ৭-৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও ৩-৪ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ১২ লাখের বেশি। গত পাঁচ বছরে সোয়া লাখের বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে। ফলে তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কিউএনবি/বিপুল/৩০.০৯.২০২২/রাত ৯.১৬