শান্তা ইসলাম নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাপাশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মো. কপিল উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মরহুম মো. ফজলুল হকের ছেলে মো. কামরুল হাসান জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি গতকাল বুধবার কামরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান।
অভিযোগে জানা গেছে, জেলার পূর্বধলার কাপাশিয়া গ্রামের শিক্ষানুরাগী মো. ফজলুল হক নিজের এক দশমিক ২০ একর জায়গায় ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারি নিয়ম মোতাবেক মো. কপিল উদ্দিন খানকে প্রধান শিক্ষক, ছয়জন সহকারী শিক্ষক এবং একজন অফিস সহকারী নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনার কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তী ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। ১৯৯৯ সালে এমপিও ভূক্ত হয়। ওই বছরের ১ জানুয়ারী হতে পাঁচজন শিক্ষক একজন অফিস সহকারী ও একজন পিয়ন সরকারি বেতন পাওয়ার জন্য অনুমোদন হয়। ২০০০ সালে আরও তিনজন শিক্ষক এমপিওভূক্ত হন। ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়। ২০০৪ সালে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কানিজ উম্মে ফাতেমাকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সহকারী শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ না করেই সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি ২০১৯ সাল পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই কমিটির মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। কমিটি নিয়ে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা হলে ২০১৮সাল পর্যন্ত কোন কমিটি ছিল না। পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সভাপতি ফজলুল হক মারা যান। ২০১৯ সালে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষক সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ ও ২৫ এপ্রিল পরিচালনা কমিটির সভা দেখিয়ে একই বছরের ২জুন সাক্ষাৎকার বোর্ডের সভা দেখানো হয়।
একই বছরের ২০জুন নিয়োগ বোর্ডের অনুমোদন দেখিয়ে কম্পিউটার ও কৃষি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে প্রধান শিক্ষকের বাবা মো. ফয়েজ উদ্দিন খানকে একঝন সদস্য দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি মারা গেছেন ২০১১ সালে। ২০২০ সালে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষক কপিল উদ্দিন খান আবারও নিয়োগ বানিজ্য শুরু করেন। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে কোন কমিটি না থাকা সত্বেও ২০১২ সালে বেক ডেইটে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি তৈরী করে সভাপতি, ডিজির প্রতিনিধি এমনকি তৎসময়ের উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সকল সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেন।
প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীসহ ৯জনের অবৈধ নিয়োগ দিয়ে কোট টাকা উৎকোচ গ্রহন করেন প্রধান শিক্ষক কপিল উদ্দিন খান। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হকের ছেলে মো. কামরুল হাসান গত ১৪ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশষাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। কাপাশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কপিল উদ্দিন খান বলেন, অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে অভিযোগটি সত্য নয়। এ ব্যাপারে কামরুল হাসানের সাথে কথা হয়েছে। বিষয়টি তার সাথে মিট- মিমাংসার চেষ্টা চলছে।
পূর্বধলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার শফিকুল বারী বলেন, শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কোন এখতিয়ার আমার নেই। আমি নেয়োগ কমিটির একজন সদস্য মাত্র। প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ বোর্ড মিলে শিক্ষক নিয়োগ করে থাকে। বোর্ডের সদস্য হিসেবে আমি ও ডিজির প্রতিনিধি শুধু স্বাক্ষর করে থাকি।
কিউএনবি/আয়শা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৫৮