ডেস্কনিউজঃ নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগে প্রতিবেশী চাচাতো ভাই ফরহাদ হোসেন শাহ (৫৩) ও তার ছেলে থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জামিউল আলীম জীবনকে (২১) মারপিট করা হয়। এ ঘটনায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি জীবনকে অবশেষে শুক্রবার দুপুরে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তার লাশ বাড়ি এসে পৌঁছেনি। শনিবার সকাল ১১টায় স্থানীয় আমতলি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম জীবনের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেন, জীবন মঙ্গলবারই মারা গেছেন। চেয়ারম্যান আসাদকে বাঁচাতে নাটক সাজিয়ে জীবনকে মৃত ঘোষণা না করে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রেখে দেয়া হয়েছিল। লাশ নিয়ে এই নাটক কারা সাজিয়েছে তা প্রকাশ করতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগ আসাদকে বাঁচানোর চেষ্ঠা করছে বলেও তিনি দাবি করেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার থেকে জীবনের দুই চাচা এস এম ফিরোজ ও ফকরুদ্দিন দফায় দফায় দাবি করেছেন, জীবন জীবিত নয়, জীবন মারা গেছে। তাদের অভিযোগ ইচ্ছে করে রাজনৈতিক কারণে জীবনকে মৃত ঘোষণা করা হয়নি।
জীবনের সাথে হাসপাতালে থাকা তার আরেক চাচা ফয়জুল্লাহ শাহ বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ঘটনার পরের দিনই তার ভাতিজা মারা গেছে কিন্তু হামলাকারী নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদকে নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার জন্য একটি মহলের পরিকল্পনা মতো জীবনকে মৃত ঘোষণা না করে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট ভেন্টিলেটার দিয়ে রেখে দেয়া হয়েছে।
বুধবার নলডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নলডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র শরিফুল ইসলাম পিয়াস তার ফেসবুক পেজে জীবনের লাশের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দিয়ে লেখেন, জীবন আর নেই, ওপারে ভালো থাকিস ভাই আমার।
জীবনের চাচা নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম ফিরোজ বলেছেন, অনেক নাটকীয়তার পর শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে জীবনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে আহত ফরহাদ হোসেন শাহর স্ত্রী জাহানারা বেগম উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট দুই ভাই ও অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনের নামে নলডাঙ্গা থানায় তার স্বামী-সন্তানকে মারপিটের অভিযোগে লিখিত এজাহার জমা দেন। এর আগে সোমবার রাতে উপজেলার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে এই মারপিটের ঘটনা ঘটে।
আহত ফরহাদ হোসেন শাহ ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন শাহের ছেলে এবং নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম ফিরোজের আপন ভাই। নিহত জামিউল আলীম জীবন নলডাঙ্গা শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজের বিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। দেড় বছর আগে বিয়ে করা জামিউল আলীম জীবনের তিন মাস বয়সী রুপম নামে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
জীবনের মৃত্যুর খবর আসার পর নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান বিরোধী গ্রুপ চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজারের জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের ভেতর থেকে মাইকের যন্ত্রাংশ চুরি হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে চুরির সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যান সালিশি বৈঠক বসিয়ে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তার প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জামিউল আলিম জীবনকে জোরপূর্বক দোষী সাব্যস্ত করেন।
পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জীবন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেন। এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জীবন আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদসহ তার লোকজন তাকে ডেকে পাঠায়। একপর্যায়ে তার সাথে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এবং চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট ভাই ফয়সাল ও আলিম আল রাজি এবং তার লোকজন জীবনকে কিল-ঘুষিসহ মারপিট করতে থাকে। খবর পেয়ে তার বাবা ফরহাদ হোসেন ছেলেকে ছাড়াতে এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করতে থাকে চেয়ারম্যান। হামলাকারীরা রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে তাদের আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। পরে স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং আহত জামিউল আলীম জীবনকে মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউতে রাখা হয়।
আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই এসএম ফকরুদ্দিন ফুটু জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান সরকারি লোক হয়েও নিজের আক্রোশ মেটাতে তিন ভাই ও অন্য লোকজন নিয়ে তাদের নির্মমভাবে মারপিট করেছে। যার জেরে সদ্য বিবাহিত যুবক জামিউল আলীম জীবন মারা গেলো। তিন মাস বয়সী সন্তান রুপমকে নিয়ে তার কলেজ পড়ুয়া স্ত্রী বিধবা হয়ে গেল। আমি দ্রুত চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। জামিউল আলীম জীবন নলডাঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। বিয়ে ও বাচ্চা হওয়ার কারণে সে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড থেকে অব্যহতি নিয়েছিল।
এসব ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো: আসাদুজ্জামান আসাদ জীবন ও তার বাবা নেশাখোর আখ্যায়িত করে বলেন, জীবন ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা বলেছেন। তাকে ডেকে এনে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেন পেছন থেকে চেয়ারম্যানকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। এমন সময় আত্মরক্ষা করতে পালটা মার দেয়া স্বাভাবিক বিষয়। তবে আহত পিতা-পুত্র বেশি অসুস্থতার নাটক করছেন বলে চেয়ারম্যান দাবি করেন। তবে মঙ্গলবার রাত ৮টায় জীবনের প্রথম মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
কিউএনবি/বিপুল/২৩.০৯.২০২২/ রাত ১০.১৬