সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩২ অপরাহ্ন

রাজহাঁস থেকে শুরু করে রানির যা পাবেন চার্লস

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৮৭ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাজ্যের সিংহাসনে থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ জীবনকে নানাভাবে যাপন এবং উপভোগের জন্যও সুপরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বিত্তশালী নারীদের একজন। তার ছিল অনেক রাজপ্রাসাদ, রত্ন— ছিল অনেক ভূসম্পত্তি। তবে একই সঙ্গে তিনি অনন্য অনেক অপ্রত্যাশিত জিনিসেরও মালিক ছিলেন। এর সব কিছুই এখন উত্তরাধিকার সূত্রে চলে যাবে নতুন রাজা চার্লসের কাছে। খবর বিবিসির।

রানি এলিজাবেথ নিজস্ব এক পোশাকের স্টাইল তৈরি করেছিলেন, যেটি পরবর্তীকালে পশ্চিমা দুনিয়ার নারী নেত্রীদের ফ্যাশনের মানদণ্ড হয়ে উঠেছিল। তিনি দুই ইঞ্চি হিলের জুতা পরতেন এবং তার স্কার্টের ঝুল থাকত হাঁটুর নিচে, সেই সঙ্গে স্কার্ট উড়ে যেন কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সে জন্য ঝুলটা বেশ ভারি করেই তৈরি করা হতো। তিনি উঁচু টুপি পরতেন, তবে টুপির কানা হতো ছোট। রানিকে মাথায় টুপি, স্কার্ফ বা মুকুট ছাড়া দেখতে পাওয়া ছিল বিরল ঘটনা। তার পছন্দ ছিল ফিকে রঙ- প্রায়শই ফিকে হলুদ বা ফিকে নীল। এতে তাকে বেশ মানাতো এবং এই স্টাইলটা যেন ক্ষমতাবান নারীদের আদর্শ ফ্যাশন হয়ে উঠেছিল।

নীল নাকি রানির সবচেয়ে পছন্দের রঙ ছিল এবং তিনি কোনো খেলাধুলার অনুষ্ঠানে সাধারণত এই রঙের পোশাকেই যেতেন। রানির মৃত্যুর পর এখন তার পোশাক কোথায় রাখা হবে তা স্পষ্ট নয়। সাবেক রানি ভিক্টোরিয়া বা রাজপরিবারের জনপ্রিয় সদস্য প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানার পোশাক অনেক মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে। রানির পোশাকের আলমারির সবচেয়ে পরিচিত একটি জিনিস সম্ভবত তার হাতব্যাগ।

যখনই তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যেতেন, তার পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একটি হাতব্যাগ সঙ্গে রাখতেন। এমনকি তার সর্বশেষ যে ছবি সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়, সেখানেও তার হাতে আছে একটি ব্যাগ। ব্যাগ নির্মাতা কোম্পানি লনারের মালিক জেরাল্ড বোডমে বলেন, রানি ছিলেন এক চমৎকার নারী, তার ছিল এক বিরাট ক্যারিশমা। রানির হাতব্যাগে কী থাকে, তা নিয়ে বহুদিন ধরেই জল্পনা ছিল। অনেকে দাবি করেন, এতে সবসময় একটি ভাঁজ করা পাঁচ পাউন্ডের নোট থাকত, যাতে রোববার গির্জায় চাঁদা সংগ্রহের সময় দান করা যায়। আর থাকত একটি লিপস্টিক ও আয়না।

আর নাকি থাকত একটি মোবাইল ফোন, যাতে তিনি তার নাতি-নাতনিদের ফোন করতে পারেন। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে যত সাদা ক্ষীণ-স্বরের রাজহাঁস আছে, যেগুলোতে মালিকানার চিহ্ন দেওয়া নেই, আইন অনুযায়ী সেগুলোর সব মালিক রাজা বা রানি। প্রতি বছর লন্ডনের টেমস নদী বরাবর রাজহাঁস গণনা করা হয়, এই জরিপকে বলা হয় আপিং। রাজহাঁস গণনার এই জরিপ চলছে দ্বাদশ শতাব্দী থেকে। ব্রিটিশ রাজপরিবার মুক্ত জলাশয়ের সব অচিহ্নিত ক্ষীণ-স্বরের রাজহাঁসের মালিকানা দাবি করছে। তারা এটি করেছিল নিজেদের ভোজের জন্য যেন রাজহাঁসের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

রানির মৃত্যুর আগে গত ৩০ বছর ধরে তিনি রাজহাঁস চিহ্নিতকরণের কাজ করেছেন। উপকূল থেকে নদী বা সাগরের তিন মাইলের ভেতরে যেসব ডলফিন পাওয়া যায়, সেগুলোর মালিকও রাজপরিবার। এই মালিকানার আইনি ভিত্তি ১৩২৪ সালে রাজা দ্বিতীয় অ্যাডওয়ার্ডের সময় থেকে। এই আইন এখনো চালু আছে এবং তিমি ও ডলফিনকে তাই ‘রাজকীয় মাছ’ বলে গণ্য করা হয়। রাজা চার্লস তার মায়ের মৃত্যুর পর এখন এই বন্য প্রাণীগুলোরও মালিকানা পাবেন।

রানির কুকুর প্রেম নিয়ে অনেক কথাই বলা হচ্ছে। সারাজীবনে তিনি নাকি ৩০টির বেশি কর্গি জাতের কুকুর পুষেছেন। তবে আরেকটি প্রাণীও তার মন জয় করেছিল; তার ছিল অনেক ঘোড়া। রানি ঘোড়ায় চড়তে শিখেছিলেন পেগি নামের ছোটখাটো আকারের এক শেটল্যান্ড ঘোড়ায়। তার দাদা রাজা ষষ্ঠ জর্জ চতুর্থ জন্মদিনে এটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন।

খুব অল্প বয়স থেকেই ঘোড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন রানি এলিজাবেথ। তবে তিনি পরে উত্তরাধিকার সূত্রে এক রাজকীয় আস্তাবলের মালিক হয়েছেন। রয়্যাল স্টাড নামে পরিচিত স্যান্ড্রিংহ্যামের এই আস্তাবল আসলে ঘোড়দৌড়ের জন্য উপযুক্ত ঘোড়ার এক প্রজনন কেন্দ্র। ঘোড়দৌড়ের বাজিতে বিজয়ী রানির অনেক ঘোড়ার জন্ম এখানে। রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতায় রানি ঘোড়ায় টানা গাড়ি ব্যবহার করতেন, অথবা তার পছন্দ অনুযায়ী তৈরি বেন্টলি কার, যেটি চালাতো তার গাড়িচালক।

তবে রানি যখন কোনো আনুষ্ঠানিক রাজকীয় দায়িত্ব পালন করছেন না, তখন তাকে প্রায়শই ল্যান্ড রোভার চালাতে দেখা যেত। তার প্রয়াত স্বামী প্রিন্স ফিলিপ এবং তিনি, দুজনেই গাড়ি চালাতে বেশ পছন্দ করতেন। তারা বিশেষভাবে পছন্দ করতেন জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভারের তৈরি গাড়ি- যে ব্রিটিশ ব্র্যান্ডের মালিকানা এখন চলে গেছে ভারতীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ টাটার হাতে।

রানি হওয়ার আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবক লরি ড্রাইভার এবং মেকানিক হিসেবে কাজ করেছেন। অনেক সময় নিজের ড্রাইভিং দক্ষতা দিয়ে তিনি তার অতিথিদের বিনোদন দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে রানি সৌদি আরবের যুবরাজ আবদুল্লাহকে ব্যালমোরাল প্রাসাদে মধ্যহ্নভোজে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পরে তিনি তার অতিথিকে ২০ হাজার হেক্টরের এই বিশাল এস্টেট ঘুরে দেখাতে নিয়ে যান।

সাবেক এক ব্রিটিশ কূটনীতিক শেরার্ড কোপার-কোলস’ তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, যুবরাজ আবদুল্লাহ শুরুতে ইতস্তত করলেও পরে রানির গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে উঠলেন। এর পর রানি যখন ড্রাইভিং সিটে এসে বসলেন, তখন যুবরাজ আবদুল্লাহ রীতিমতো বিস্মিত, রানি স্কটল্যান্ডের উঁচু পাহাড়ি পথ ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, আর সারাক্ষণ কথা বলছিলেন। যুবরাজ আবদুল্লাহ একটু ভয় পেয়ে গেলেন এবং রানিকে ধীরে চালাতে বলছিলেন। সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে অতি সম্প্রতি, আর এ ঘটনা তার বহু আগের।

ব্রিটিশ পত্রপত্রিকার অনুমান-রানির সংগ্রহে যেসব গাড়ি ছিল, তার মূল্য এক কোটি পাউন্ডের বেশি। তার জীবনকালে তিনি ৩০টির বেশি ল্যান্ডরোভার বদলেছেন।

সানডে টাইমস ২০২২ সালে ধনীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে রানির ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৪২ কোটি ৬০ লাখ ডলার বলে অনুমান করা হয়।

ব্যালমোরাল প্রাসাদের মতো কিছু কিছু সম্পত্তি রাজপরিবারের পারিবারিক সম্পত্তি। রানি মারা গেছেন এই ব্যালমোরাল প্রাসাদে।

এই সম্পদের বেশিরভাগটাই ভূমি মালিকানা, মূল্যবান রত্ন, স্ট্যাম্প এবং মূল্যবান শিল্প সংগ্রহে বিনিয়োগ করা।

রাজপরিবারের মালিকানায় আছে বহু রাজকীয় প্রাসাদ এবং বিপুল পরিমাণ সরকারি জমি। ক্রাউন এস্টেট নামে পরিচিত এসব জমি অবশ্য রাজা বা রানির ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় এবং তারা এর কোন অংশ বিক্রি করতে পারেন না।

যুক্তরাজ্যের উপকূল হতে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বেশিরভাগ সমুদ্রতলের মালিকানাও ক্রাউন এস্টেটের হাতে। এর মানে হচ্ছে যুক্তরাজ্যে যেসব কোম্পানি অফশোর বায়ু-বিদ্যুৎ কল বসাচ্ছে, তাদেরকে রাজকোষে এর জন্য রয়্যালটি দিতে হচ্ছে।

রাজকীয় রত্মভান্ডার থেকে পৃথক একটি রত্নের সংগ্রহ আছে। এর বেশিরভাগটাই এখন রানির কাছ থেকে রাজা চার্লসের মালিকানায় চলে যাবে।

রানি নিজেই চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলাকে রাজকীয় সংগ্রহের সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো একটি মুকুট দিয়েছেন।

রাজা চার্লস রানি এলিজাবেথের অলংকার সংগ্রহের বেশিরভাগটারই মালিকানা পাবেন। তবে রাজপরিবার বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞের ধারণা, রানিকে হয়তো তার দুটি অলংকারসহ কবর দেওয়া হবে।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মূল্যবান রত্ন এবং অলংকারের একটি বড় অংশ উত্তরাধিকার সূত্রে পাবেন তার ছেলে চার্লস।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৩৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit