এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় দুর্নীতির অভিযোগে কাজী গোলাম মোস্তফা নামে এক প্রধান শিক্ষককে দ্বিতীয়বার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি পৌর শহরের ছারা পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ১০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ছয়মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার তাকে বরখাস্ত করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।এদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব হতে অব্যহতির দেওয়ার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এস এম সাইফুর রহমান বাবুল উপজেলা পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক এসএম সাইফুর রহমান বাবুল স্বাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তপত্র বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর যশোরের জেলা প্রশাসক, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, যশোরের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিকশিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে দেয়া হয়েছে।সেই সাথে ওই প্রধান শিক্ষককে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষায় ছারা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়ার জন্য ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্বাক্ষরিত পৃথক একটি লিখিত আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দেওয়া হয়েছে।
বহিষ্কারাদেশ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনাকে গত ১৩ এপ্রিল তারিখে বহিষ্কার আদেশের পর ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যা¤েপ আপনার নিজের দোষ স্বীকার করা, ক্ষমা প্রার্থনা, অনুতপ্ত হওয়া ও ভবিষ্যতে বিধি বহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত না হওয়ার অঙ্গিকারের প্রেক্ষিতে গত ৯ জুন তারিখের পরিচালনা কমিটির ৮নং সভায় তদন্ত কমিটির চুড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এ শর্তে সাময়িকভাবে আপনার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ইতিমধ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বের আপনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সেখানে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আপনি নিন্মোক্ত কার্যক্রমগুলো করেছেন বলে প্রমানিত হয়। প্রাক্তন সভাপতির দুইটি ও বর্তমান সভাপতির তিনটি স্বাক্ষর জাল করেছেন যা প্রমাণিত। ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সকল সদস্যের অসংখ্য স্বাক্ষর জাল করেছেন যা প্রমাণিত। বিধি বহির্ভূতভাবে পরিচালনা কমিটির নির্বাচনের প্রক্রিয়া করেছেন। জেলা পরিষদের অনুদানের তিন লাখ টাকা স¤পূর্ণ বেআইনিভাবে উত্তোলন ও আত্মসাৎ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসের ৯৫ হাজার টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করেননি। প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটা, স্টীলের বেঞ্চ বিক্রির টাকা এবং অ্যাসাইনমেন্টের খাতা বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করেন না। বেতন রেজিস্টার বহি নেই। উন্নয়নমূলক কাজে নিজে সভাপতি হয়ে নিজের স্বাক্ষরে প্রকল্প কমিটি করেছেন। শিক্ষার্থীদের বেতন বহি বা রশিদ ব্যবহার করেন না। সর্বোপরি আবারো বিধি বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির অনুমতি ছাড়া নতুন পরিচালনা কমিটি গঠনের জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ, মাইকিং, পেপারিং ইত্যাদি কার্যক্রম করেছেন, রেজুলেশন বহিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কমিটির কোন সদস্যের উপস্থিতি ছাড়াই তিনটি রেজুলেশন নিজ হাতে লিখে রেখেছেন সেখানে ৩৮ জন অভিভাবকের ভোটার পরিবর্তন করেছেন তাতে আপনার স্বাক্ষর রয়েছে।
এছাড়া ৩১ আগস্ট কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ও ৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটির নিকট মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এমতাবস্থায় এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রমের জন্য বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিচালনা কমিটির ৮ সেপ্টেম্বর তারিখের ৯ নম্বর সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে পুনরায় সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। কেন আপনাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।একই সাথে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক প্রভাত কুমার মিশ্রকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করা হলো।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসএম সাইফুর রহমান বলেন, বিভিন্ন অভিযোগে ১৩ এপ্রিলপ্রধান কাজী গোলাম মোস্তফাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় এবং ১০ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্যচৌগাছা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহিদুর রহমান বকুলকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি গত ৫ সেপ্টেম্বর তদন্তরিপোর্ট প্রদান করেছেন। তার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে তাকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, এখন একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলবো।এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামান বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর অফিস শেষ এমন একটি চিঠি পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বের বিষয়টি নিয়মানুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কমিটির সভাপতি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এ বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, বহিষ্কার/সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষকের পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। ম্যানেজিং কমিটি বহিষ্কার সংক্রান্ত বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি অন্য প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তাব করবেন। এরপর শিক্ষাবোর্ড তাকে অনুমোদন দিবেন।
কিউএনবি/অনিমা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১০:৫৫