রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৬ অপরাহ্ন

কুবিতে ফের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২৫

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১৭৮ Time View

ডেস্কনিউজঃ পূর্ব ঘটনার জের ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ফের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের এক কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় রামদা, রড, হকি স্টিক, দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় আহতরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে সংঘর্ষের পর আমি সারারাত ধরে হলেই অবস্থান করি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু দুপুরে ছেলেরা খাওয়ার জন্য বের হলে তারা হামলার শিকার হয়। যার ফলে তা আবারও সংঘর্ষে রূপ নেয়। আমার হলের সবাইকে আমি হলে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

তবে গতরাতের ঘটনার পর থেকে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মিহির লাল ভৌমিক এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই হলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যায় নজরুল হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করে বঙ্গবন্ধু হলের এক ছাত্রলীগকর্মী। সে ঘটনার জের ধরে করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। শুক্রবার রাতের ঘটনার পর উভয় হলের ফটক বন্ধ রাখে প্রশাসন। শনিবার দুপুরের খাবারের জন্য কয়েকজন বিচ্ছিন্নভাবে হল থেকে বের হতে থাকেন। দুপুর ২টার দিকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও নজরুল হল ছাত্রলীগকর্মী তানভীর আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে খেতে গেলে তাকে মারধর করেন বঙ্গবন্ধু হলের কয়েকজন কর্মী। এই ঘটনার জের ধরে ফের উত্তপ্ত হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর দুই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন প্রধান ফটকে।

সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো. সায়েম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খাইরুল বাশার সাকিব, একই হলের সাংগঠনিক সম্পাদক পাপন মিয়াজী, ছাত্রলীগ কর্মী কাউছার, সেলিম, মিরহাম, রাশেদ, বিজয় ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ ও একই হলের ছাত্রলীগকর্মী বায়েজিদ আহমেদ বাপ্পী, ফয়সাল, কামরুল, সাগর দেবনাথ, এমরান, আশিক, জামান, জয়রাজ, তানভীর, নাহিয়ান, নাজিমসহ দুইপক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়। এরমধ্যে বায়েজিদ আহমেদ বাপ্পীর মাথায় ১৬টি সেলাই দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।

সংঘর্ষের বিষয়ে কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হলের ছেলেরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালাচ্ছে। তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্রমণ করছে। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

বঙ্গবন্ধু হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার সাকিব বলেন, আমাদের একজন জুনিয়রকে পেয়ে তারা আক্রমণ করেছে। এরপর তারা সবাই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে আমাদের কয়েকজনের উপর হামলা চালায়। আমরা এর বিচার চাই৷

এদিকে ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ নিয়মিত ক্যাম্পাসে থাকেন না। গতকাল থেকে কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও তিনি দুপুরে ক্যাম্পাসে আসেন।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, আমি নিজেও আহত। একা এখানে কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা। আমার একার পক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেই, এমনটাই অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ বিকেল পাঁচটায় উপাচার্য প্রক্টরিয়াল বডি ও দুই হলের প্রশাসনকে নিয়ে সভা ডাকেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, প্রক্টরিয়াল বডি ও দুই হলের প্রশাসন সবসময় এখানেই ছিল। আমরা আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিলাম, এরমধ্যেই তারা আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ছাত্রনেতারাসহ সবাই মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা সমাধান করার চেষ্টা করছে। সমাধান না হলে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী সেলিম রেজাকে পথ থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল রায়হান। নামাজ শেষে রায়হানের এমন আচরণের বিষয়ে জানতে চান বঙ্গবন্ধু হলের সেলিম রেজা, রিফাতসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এ সময় দুই হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে শনিবার মধ্যরাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয় ১০ জন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

কিউএনবি/বিপুল/১০.০৯.২০২২/ রাত ৯.১৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit