জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : করোনা মহামারীর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় যথাসময়ে কুকুরের অপসারণ এবং বন্ধ্যাত্বকরণ করা যায় নি। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কুকুরের উৎপাত ব্যাপক বেড়েছে। কুকুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ টি আবাসিক হল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, টিএসসি, কার্জন হল এলাকা, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার,ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, সূর্যসেন হল ক্যাফেটেরিয়া, মধুর ক্যান্টিন,মল চত্বর সহ বিভিন্ন এলাকায় ঝাঁক বেঁধে কুকুরের দল পাহারা দিচ্ছে।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে লাইব্রেরী খোলার প্রথমদিনে পারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র মোতাহার হোসেন সহ পাঁচজন আহত হয়েছিল। এ বছর জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের এক ছাত্র মধুর ক্যান্টিনের সামনে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় কুকুরের আক্রমণের মুখে পড়ে। কুকুরের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে মোটর সাইকেল ইউটার্ন করতেই তিনি গুরুতরভাবে আহত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কুকুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে খাবারের সহজলভ্যতা। এখানে আবাসিক হলের ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া এবং খাবারের দোকানগুলোতে পঁচা -বাসি খাবারের স্বাদ নিতে কুকুরের দল এখান থেকে অপসারণ করলেও আবার ফিরে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মাঝখানে পঁচা খাবারের ডাস্টবিন থাকায় এখানে সবসময় একদল কুকুর থাকে।তারা কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যত্রতত্র ময়লা -আবর্জনা পড়ে থাকায় কুকুরের দল পুরো ক্যাম্পাসে হানা দেয় ।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কুকুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, নাস্তা এবং খাবারের পাত হাতে নিলেই কুকুর এবং বিড়ালের দল এসে হাজির হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের ছাত্র আজিজুল হক জানান, ” শহীদুল্লাহ হলে গলায় বেল্ট পড়া এক বাঘা কুকুরের ঘাড়ে জঘন্য রকমের জখম হয়েছে। পাশ দিয়ে গেলে গন্ধে টিকা যাচ্ছে না। এই কুকুরটি কখনো হলের রিডিং রুমের ভিতর এবং কখনো ক্যান্টিনের আশেপাশের নির্জন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে। অন্য একটি কুকুর মারাত্মক আহত অবস্থায় পড়ে আছে। উঠে দাড়াতেই পারছে না। শুধু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।ক্যাম্পাসে কোন Dog Rescue Team থাকলে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কুকুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্যাম্পাসে কুকুর অপসারণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভেটেনারি ডিপার্টমেন্টের কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কুকুর সরিয়ে নেয়া এবং ভ্যাকসিনেটেড কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভেটেনারি ডিপার্টমেন্টের প্রধান পদটি খালি থাকায় এ কাজে বিঘ্ন ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তফা জানান,ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি ডিপার্টমেন্টের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে।তারা এখানে এসে সরেজমিনে হল এবং আবাসিক এলাকা গুলো কয়েকবার পরিদর্শন করেছে। কিন্তু তাদের এ সংক্রান্ত প্রজেক্ট চালু করতে একটু সময় লাগবে।কারণ তাদের ভেটেরিনারি ডিপার্টমেন্টের প্রধান পদটি খালি ছিল।তারা প্রয়োজনীয় লোকবল,গাড়ি এবং ঔষধ নিয়ে এসে ক্যাম্পাস থেকে কুকুর সরিয়ে নিবে ।
এদিকে নবাগত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি অফিসার ডাক্তার সাজ্জাদ করিম জানান, কুকুরের উৎপাত রোধ করতে আমরা কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আজকে (৬ সেপ্টেম্বর ,২০২২) এ সংক্রান্ত একটি মিটিং ছিল। আমরা কুকুরকে ভ্যাকসিনেটেড, কুকুর অধিক এলাকা থেকে কম এলাকায় অপসারণ এবং কুকুরকে বন্ধ্যাত্বকরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমরা আগামী মাস থেকে এই কাজ শুরু করব।