বড়দা………
—————-
যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠেছি আমরা! কাকাতো ভাই-বোন মিলে ১০ জন। আমাদের ছয় ভাইবোনের মধ্যে আমি ছিলাম কাকাতো ভাই-বোনদের সমসাময়িক, আর তোরা বাকী পাঁচজন ছিলি সমসাময়িক! শুনেছি বাবার ঠাকুমাকে নাতিবৌ দেখানোর জন্য অপেক্ষাকৃত কম বয়সেই আমাদের বাবা-মায়ের বিয়ে দেয়া হয়েছিল!
মেঝোকাকা বাবার থেকে মাত্র আড়াই বছরেরে ছোট হলেও বিয়ে করেছিলেন অনেক পরে, আর তার পরপরই ছোটকাকাও বিয়ে করেন। আমি তাই হয়ে যাই কাকাতো ভাই-বোনদের সমসাময়িক! তোর মনে আছে বড়দা আমরা কখনো কাকাতো ভাইবোন হিসেবে বেড়েই উঠিনি! তুই আর বড়দি ছিলি আমাদের সকল আবদারের কেন্দ্রবিন্দু! তুই সবসময় আমাদের এই ছোট ছয় ভাইবোনের জন্য একইরকম পোশাক কিনতি! পুজোতে বাড়িতে সবার পোশাক একসাথে আসত, সে কী আনন্দ পোশাক দেখার!
বড়দি আর তুই সব ভাই-বোনকে আগলে রেখেছিস অসীম মমতায়! কোনোদিন কোনো ভাইবোন তোর মুখের উপর কথা বলেনি, তুই যা বলেছিস এক বাক্যে কোনোকিছু যাচাই না করেই সবাই মেনে নিয়েছে! একটা সময়ে নাকি ছোটরাও মুরব্বি হয়ে যায়! দেখেওছি তাই! বাবা, মেঝোকাকা, ছোটকাকাসহ সবাই একটা সময়ে এসে তোর কথার উপরই নির্ভর করত! আর, ঠাকুমাতো তোর বিষয়ে ছিল অন্ধ! পৃথিবী একদিকে আর তুই একদিকে! মৃত্যুর আগে তাই হয়তো তুই শুধু ঠাকুমাকে স্বপ্ন দেখতি যে তোকে নিতে এসেছে! সাথে মেঝোপিসিও!
একে একে কতোজন চলে গেল! প্রথমে বাবা, এরপর ঠাকুমা, বানুপিসি, মেঝোপিসি, মেঝোকাকা আর সবশেষে তুই! এদের সবার প্রতিই তোর ছিল আলাদা আকর্ষণ, আর তোর প্রতিও এদের ছিল আলাদা আকর্ষণ! তাই বুঝি তুই চলে গেলি এদের কাছে! আর যাদের ছেড়ে গেলি তাদেরওতো তোর প্রতি বড্ড টান, বড্ড মায়া, বড্ড ভালোবাসা! তুইতো জানতি সেটা বড়দা! তুই ভালো আছিসতো বড়দা সবার সাথে, ঘুমোচ্ছিসতো ঠিককরে! আমি জানি একদিন সবাইকেই যেতে হবে, এটাই বাস্তবতা! তবুও যে মন মানেনা বড়দা! বড়দা………….
লেখিকাঃ সঞ্চিতা গুহ চৈতি একজন শিক্ষিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর হিসাবে শিক্ষকতা করে আসছেন। লেখালেখি করেন। নিকট অতিতে তিনি হারিয়েছেন তাঁর প্রিয় বড়দাকে। সঞ্চিতা গুহ চৈতি’র ফেসবুক টাইমলাইন জুড়ে শুধু প্রিয় বড়দার জন্যে আহাজারির পোস্ট। আজকের এই লেখাটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহিত।
কিউএনবি/বিপুল/০৪.০৯.২০২২ /রাত ১১.২৫