বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৭ অপরাহ্ন

শহিদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্যের স্মরন সভা পালিত

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২
  • ৩১০ Time View

আব্দুল্লাহ আল মামুন, আব্দুল্লাহ আল মামুন : মাদারীপুরে লেখক,সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব শহীদ প্যারী মোহন আদিত্যের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরের মাদারীপুর প্রেস ক্লাবের আয়োজনে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাদারীপুর প্রেস ক্লাবের কোষাধক্ষ্য মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সভাপতিত্বে ও দৈনিক সোনালী বার্তা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মাদারীপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক এর জেলা প্রতিনিধি শাহজাহান খান এবং বিশেষ অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন, মাদারীপুর প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও ডিবিসি চ্যানেল এর জেলা প্রতিনিধি মনির হোসেন বিলাস। এসময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, তিনি ১৯৩৪ সালের ৫ জুন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মুকন্দ মোহন আদিত্য, মা মহামায়া আদিত্য। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই নাটক, যাত্রাপালা লেখা এবং অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। এলাকার সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তিনি মুখ্য ভূমিকায় থাকতেন। ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সৎসঙ্গের মুখপত্র ত্রৈমাসিক সৎসঙ্গ সংবাদ (বর্তমানে মাসিক) পত্রিকার সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া সাহিত্যবিষয়ক লেখালেখি ও জনকল্যাণমূলক কাজেও যুক্ত থাকতেন। সত্তরের জলোচ্ছ্বাসের পর তিনি সহযোগীদের নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একাত্তরের ১৮ এপ্রিল পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার সময় পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমে প্রবেশ করে। তাদের ছোড়া শেলের আঘাতে আশ্রম মন্দিরের চূড়া ভেঙে যায়। হানাদারদের আসার খবর পেয়ে সবাই নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। তাই সেবার প্রাণে রক্ষা পান সবাই। পাকুটিয়া আশ্রমে প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ছিল প্যারী মোহনের যোগাযোগ। তিনি গোপনে তাঁদের আশ্রয়, খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা করতেন।

একাত্তরের ৮ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের একটি দল দ্বিতীয় দফা হামলা চালায় পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমে। গুলি চালাতে চালাতে তারা সেখানে প্রবেশ করে। প্যারী মোহনের পেটে গুলি লাগলে ঘটনাস্থলেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে চেয়ে আহত প্যারী মোহনকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদাররা। বেয়নেটের আঘাতে সারা দেহ ক্ষতবিক্ষত হলেও তিনি মুখ খোলেননি। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সেদিন শুধু প্যারী মোহন নন, ওই আশ্রমে অবস্থানরত ব্যামাচরণ শর্মা নামের আরেক নিরীহ বাঙালিকেও হত্যা করে ঘাতকেরা।

আশ্রমে হত্যাকান্ডের পর পাকিস্তানি বাহিনী আশপাশের বাড়িঘরে লুটপাট করে। আতঙ্কে মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে যায়। প্যারী মোহনের মরদেহ তিন দিন পড়ে ছিল আশ্রমে। পরে স্থানীয় কয়েকজন গোপনে এসে তাঁর শেষকৃত্য করেন।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত রশীদ হায়দার সম্পাদিত স্মৃতি ১৯৭১ এর পুনর্বিন্যাসকৃত চতুর্থ খন্ডে প্যারী মোহন আদিত্য সম্পর্কে লিখেছেন তাঁর ছেলে নট কিশোর আদিত্য। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের গবেষক শফিউদ্দিন তালুকদারের একাত্তরের গণহত্যা-যমুনার পর্ব ও পশ্চিম তীর, জুলফিকার হায়দারের ঘাটাইলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং টাঙ্গাইলের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থে প্যারী মোহন আদিত্যের জীবনীতে শহীদ হওয়ার বিবরণ রয়েছে। প্যারী মোহন আদিত্যের স্মরণে পাকুটিয়া সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়ের সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাকুটিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সৎসঙ্গ আশ্রম পর্যন্ত সড়কটি ‘শহীদ প্যারী মোহন আদিত্য সড়ক’ নামকরণ হয়েছে। আদিত্যর কোন স্মৃতি অথবা চিহ্ন পৃথিবীর বুকে আজ আর নেই, এমনকি তাঁর কোন প্রতিকৃতিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত স্মিৃতি ৭১ গ্রন্থে তাঁর লেখা প্রকাশর পর এবং ১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর পৃথক ডাকটিকিটে শহিদ বুদ্ধিজীবীর প্রতিকৃতি নিয়ে প্রকাশিত হত স্মরক ডাকটিকিট। শহিদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্যের কোন প্রতিকৃতি না থাকায় স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করাও নম্ভব হয়নি।

আজ ৮ আগষ্ট রোববার, শহিদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্যের মৃত্যুবার্ষিকী। অর্ধশত বছর পূর্বে এদিন, পাকিস্তানি হানাদারা সৎসঙ্গ আশ্রমে গোলাগুলি শুরু করে এবং পেট্রোল ঢেলে আশ্রম, মন্দির, অফিস, বসত বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আশ্রমে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহযোগিতার কারণে তাঁকে প্রথমে গুলি করে এবং লাথি মেরে, এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অত্যার করে এবং আরও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান চায়। তবুও তিনি মুখ খোলেননি। পরে টেনে হিচরে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্বিবাদী-ঈশ্বরপ্রেমী মানুষটি নৃশংসভাবে হত্যা করে। এদিন সমস্ত কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় শহিদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৮ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৪২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit