ইউনুস রিয়াজ, গবি প্রতিনিধি :একটি দেশের মূল অধিবাসীরাই মূলত আদিবাসী।যাদের নিজস্ব আলাদা সমাজ-সংস্কৃতি রয়েছে। বৈষম্যে, বঞ্চনা আর প্রতিকূলতা মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকা এ জাতিগোষ্ঠীদের অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে প্রতিবছর ৯ আগস্ট পালিত হয় বিশ্ব আদিবাসী দিবস। এ দিবস ঘিরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা কি ভাবছে তা তুলে ধরছি, আমি ইউনুস রিয়াজ………
আদিবাসীদের নিজ মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ দিতে হবে
‘আদিবাসীরাই কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের প্রকৃত নাগরিক। বাদবাকি যত জাতি, যা কিছু আছে তারা দখলদার জনগোষ্ঠী। অথচ, সময়ের পরিক্রমায় এই প্রকৃত জাতিরাই নিজেদের অধিকার, অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।আমাদের দেশে প্রায় ৪৫ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। প্রত্যেকেরই নানা ধরনের সমস্যার শিকার হতে হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষা। ভাষার সঙ্গে শিক্ষা সরাসরি যুক্ত। আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষা এবং বর্ণমালা রয়েছে। অথচ সেসবের মধ্যে কিছুকিছু ভাষার চর্চা না হওয়ার কারণে সেগুলো প্রতিনিয়ত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের যদি নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয় তাহলে তারা তাদের চারপাশের পরিবেশের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে। সবশেষে এতটুকুই বলবো সরকার শুধু বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতি ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ভুমিকা পালন নয় বরং আরও জোরদার করবেন এটাই আমাদের আদিবাসীদের প্রত্যাশা।‘
বিদুষী চাকমা
৫ম সেমিস্টার
ব্যাচঃ৯ম
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ ।
আদিবাসী হিসেবেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেতে চাই
বাংলাদেশ সরকার এই আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে তাদের আখ্যায়িত করেছেন।এছাড়াও গত ১৯ জুলাই ২০২২ইং তারিখে বাংলাদেশ সরকারের ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়’ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যাতে বলা হয়েছে ৯ আগষ্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কোন সেমিনার, টকশো এবং সংবাদপত্রে কোন প্রকারে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার বা উল্লেখ করা যাবে না। যদিও এই জনগোষ্ঠী উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে নয় বরং আদিবাসী হিসেবেই নিজেদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেতে চায়।
আক্য মং মারমা,
সেমিস্টারঃ ২য়,
ব্যাচঃ২৭তম,
বাংলা বিভাগ ।
চাকমাদের নিজস্ব সত্তা টিকিয়ে রাখতে পদক্ষেপ জরুরী
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হল চাকমা। চাকমারা প্রধানত থেরাবাদ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। চাকমারা নানা রকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে, বুদ্ধপুর্ণিমা ছাড়াও এদের অন্যতম প্রধান আনন্দ উৎসব হচ্ছে বিঝু। বাংলাদেশের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে চাকমাদের সংখ্যা বেশি। তবে বান্দরবানেও চাকমাদের উপস্থিতি রয়েছে।চাকমাদের প্রধান জীবিকা কৃষি কাজ।পার্বত্য চট্টগ্রামের সমতল অংশে স্বাভাবিক সেচ পদ্ধতিতে মৌসুমী কৃষি কাজ, এবং পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষের মাধ্যমে চাকমা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও রবিশস্য উৎপাদন করে থাকে। চাকমাদের ভাষার নামও চাঙমা ।চাকমাদের নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। চাকমারা ৪৬টি গোজা ও বিভিন্ন গুত্তি বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এই আদিবাসী দিবসে , আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে আশা করি।‘
মীনাক্ষী চাকমা,
সেমিস্টার: ৬ষ্ঠ
ব্যাচ:৩৭তম
মাইক্রোবায়োলজী বিভাগ ।
বৈষম্য, নীপিড়ন, বঞ্চনা মুক্ত জাতি হয়ে বাঁচতে চাই
‘জাতিসংঘের মতে আদিবাসী তারাই যারা – বহি আক্রমন বা উপনিবেশের আগে থেকেই নিজেদের এলাকা বা সীমানাকে সমাজের অন্য অংশ থেকে নিজেদের আলাদা মনে করে।এছাড়াও তারা বর্তমানে সেই সমাজের বা রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে আদিবাসীদের ইতিহাস ঘেটে যা বুঝা যায় আনুমানিক ৯৫৩ সনের দিকেই এরা এখানে বসতি গড়ে তুলে। আধিবাসীদের রয়েছে নিজস্ব সংকৃতি, ঐতিহ্য, বর্ণমালা। এছড়াও আদিবাসীদের বাসস্থান, জীবনসংগ্রাম, চালচলন অন্য জাতির তুলনায় ভিন্ন। কিন্তু বহিরাগত গোষ্ঠীদের দ্বারা দিন দিন আদিবাসীদের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। নানা দিক থেকেই তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আদিবাসী দিবস সামনে রেখে তাই বলতে চাই বৈষম্য, নীপিড়ন, বঞ্চনা মুক্ত জাতি হয়ে বাঁচতে চায়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নয় আদিবাসি পরিচয়ে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।‘
হায়রিং খুমী,
সেমিস্টারঃ ২য়
ব্যাচঃ২৭ তম
বাংলা বিভাগ।
কিউএনবি/অনিমা/০৬.০৮.২০২২/সকাল ১০.২২