মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

ঈদের আনন্দ নেই হাওরের বানভাসিদের

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১০ জুলাই, ২০২২
  • ১৭৩ Time View

ডেস্কনিউজঃ দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সুনামগঞ্জের দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের। সারাদেশে আনন্দ, উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদুল আজহা উদযাপন হলেও ঈদের আনন্দ নেই হাওরপাড়ের বানভাসিদের। গত ঈদে যারা পশু কোরবানি দিয়েছেন বন্যায় বসতবাড়ি হারিয়ে এবার তাদের অনেকেই আছেন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত।

ঈদের আগে বাড়িঘরে ফিরতে পারেননি অনেকেই। এখনও অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। বন্যার পানি কমলেও কারও কারও বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় ঘরে ফেরার মতো অবস্থা নেই। ঘরের চাল পড়ে আছে মাটিতে। ঘরের ভেতর ও আশপাশে নোংরা আবর্জনা জমে তৈরি হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অনেকের আবার ঘরের চিহ্নটুকু ও নেই। বানের পানিতে ঘর ভেসে গেছে। এমন অবস্থায় নিরুপায় হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রেই কাটাতে হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে দিন গুণছেন কবে বাড়ি ফিরবেন।

অন্তত ৭ হাজার বাসভাসি মানুষের ঈদ কেটেছে আশ্রয় কেন্দ্রে ও অন্যের বাড়িঘরে। যদিও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার দাবি, জেলার ৭৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ হাজার মানুষ রয়েছে। তবে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও অনেক মানুষ আশপাশের প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রিত আছেন।

জানা যায়, সারাদেশে উৎসবমূখর পরিবেশ ঈদুল আজহা উদযাপন হলেও নানা সংকটে আছেন সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের বানভাসি কয়েক লাখ মানুষ। এবারের ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত তারা। বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলার ৮৮ ইউনিয়নের ২৮৮৮টি গ্রামের প্রতিটিতেই শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৩০ লাখ মানুষ ও ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৪টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৫ হাজার ২৮৮টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও হাজারও পরিবার পানিবন্দি আছে। ৭৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ হাজার মানুষ অবস্থান করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের চাল, নগদসহ ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ৫ হাজার পরিবারকে নগদ ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ২ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মঈন উদ্দিন (৬৭) বললেন, ‘জীবনে এ রকম ঈদ দেখছি না। পাহাড়ি ঢল ও বানের পাইন্নে ১৮টা পরিবারের ঘরবাড়ি, ধান-চাউল, হাড়ি-পাতিল, কাপড়-ছোপড় সব ভাসাইয়া লইয়া গেছে। গত বছরের ঈদও আমি গরু কোরবানি দিছি। বন্যায় ঘরবাড়ি হারাইয়া এবারের ঈদও মানুষের বাড়িঘরে আছি।’

একই গ্রামের রুশিয়া বেগম (৩৫) বলেন, ‘বানের পাইন্নে সবকিছু ভাসাইয়া নিয়া গেছে। বাচ্ছা-কাচ্ছা নিয়া খুব অসুবিধায় পড়ছি। কীভাবে ঘর-দোয়ার ঠিকঠাক করতাম আই কীভাবে খাইয়া বাঁতাম ও বাচ্ছা-কাচ্ছারে লেখাপড়া করাইতাম। ঈদের দিন নতুন কাপড়ই কিনতাম পারছি না। বাইচ্ছা থাকলে আগামী বছর ঈদ করমু।’

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া শহরের সুলতানপুর গ্রামের হালিমা খাতুন (৬০) বলেন, ‘খুব অসহায় অইয়া পরছি। ঘরদরজা বন্যার পানিত পইরা সব নষ্ট অইয়া গেছে। পানি কমলে ও ঘর-দোয়ার হুকাইলে বাড়িত যাইতাম। খুউব কষ্টে অইতাছে, আশ্রয় কেন্দ্রে থাকি ঈদ করতাছি।’

তবে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ রোববার দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আমবাড়ি, সৈয়দপুরসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী এবং বন্যার্ত মানুষের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস ও ঈদের উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। ঈদের উপহার হিসেবে তিনি পোলাও চাল, তেল, পেঁয়াজ, মাংসের মশলা, সেমাই, চিনি ও গুড়া দুধ বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বন্যার্ত মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সার্বিক খোঁজখবর নেন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল, যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে দ্রুত তাদের বাড়িঘর মেরামতের। ঈদের আগেই যেন তারা বাড়িঘর মেরামত করে বসবাস করতে পারেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এবং ৫ হাজার পরিবারের মাঝে ১০ হাজার টাকা করে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ২ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঈদের সময় যাতে খাদ্য কষ্ট না হয় সে জন্য ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে ১০ কেজি করে ১২০০ টন চাল দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ১৩৫৬ টন জিআর চাল ও ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকেও ৫৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে আরও মানুষ ঢেউটিন ও নগদ টাকা পাবে। আজ বন্যার্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের উপহার সামগ্রী ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। মানুষের খোঁজখবর নিয়েছি।

কিউএনবি/বিপুল/১০.০৭.২০২২/ রাত ১০.৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit