খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুরে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ও তার স্ত্রীকে ভূমিহীনের ৪৬ শতাংশ খাস জমি বরাদ্দা দেয়া হয়েছে। ভূমি বন্দোবস্তো আইন অনুযায়ী ৯ শতাংশের বেশি জমি যাদের রয়েছে তারা সরকারের কৃষি খাস জমি বরাদ্দ নিতে পারবেন না। কেদারপুরের বাসিন্দা রায়হান শরীফ ও তার স্ত্রী রাসিদা রহমানের অন্তত দুই একর জমি রয়েছে। রয়েছে মসলার কারখানা, বিপনি বিতান সহ বসবাসের বিলাশবহুল পাকা দ্বিতল ভবন।
সরকারি ওই খাস জমির পাশেই বিভিন্ন মানুষের পরিত্যক্ত জমিতে অন্তত দুই শতাধিক নদী ভাঙনে গৃহহীন পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু তারা আবেদন করেও সরকারের খাস জমি পাননি। এমন পরিস্থিতিতে গৃহহীন ব্যক্তিরা ঝুপরি ঘরে অসহায় ভাবে জীবন যাপন করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কেদারপুরের বাসিন্দা রায়হান শরীফ কেদারপুরে মজিদ শাহ দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মজিদ শাহের নাতি। তিনি শরীফ ফুড প্রোডাক্টস নামে একটি মসলার ফ্যাক্টরির মালিক। তার পাশে অবস্থিত টিন সেডের একটি বিপনি বিতানেরও মালিক তিনি। ওয়ারিস সূত্রে বাবা ও মায়ের কাছ থেকে অন্তত দুই একর জমি পেয়েছেন। বাড়িতে রয়েছে দ্বিতল পাকা ভবন।
রায়হান শরীফ ও তার স্ত্রী রাসিদা রহমান ২০১৮ সালে কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভূমিহীন সনদ সংগ্রহ করেন। এর পর কেদারপুর মৌজার ৪৬ শতাংশ কৃষি খাস জমি পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। জেলা প্রশাসকের ভূমি শাখা থেকে নড়িয়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও কেদারপুর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তার কাছে আবেদনের তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এরপর সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা তাদের দুইজনকে ভূমিহীন উল্ল্যেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার প্রেক্ষিতে ভূমি বন্দোবস্তো জেলা কমিটি ২০১৯ সালে তাদের দুই জনের নামে ৪৬ শতাংশ খাস জমি বরাদ্দ দেয়। এর পর ২০১৯ সালের ১৯ মে নড়িয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ওই জমি নড়িয়া সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে নিরানব্বই বছরের জন্য দলিল করে দেন।
জানতে চাইলে কেদারপুর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আলী আকবর হোসেন বলেন, আমি শুনেছি রায়হান শরীফ খাস জমি বন্দোবস্তো নিয়েছেন। আমি তখন সেখানে কর্মরত ছিলাম না। ২০১৮ সাল পর্যন্ত নড়িয়ার কেদারপুরে ব্যাপক নদী ভাঙন ছিল। ৩ বছরে তখন নড়িয়া উপজেলায় ১৫ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়। যার মধ্যে কেদারপুরেই ১ হাজার ২ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ ওই সকল পরিবার বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি, বিভিন্ন বাগান, সড়কের পাশে আশ্রয় নেন। তারা অনেকে খাস জমি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেও পাননি।
কেদারপুরের চরজুজিরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন মোকলেস খান (৬৫)। তার বসত বাড়ি ও সফলি জমি ছিল ৫০ শতাংশ। ২০১৮ সালে সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। রায়হান শরীফ যে জমিটি বরাদ্দ নিয়েছেন তার পাশে একটি বাগানের কিছু জমি ভাড়া নিয়ে ঝুপরি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে থাকেন। মোকলেস খান বলেন, কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। নদীতে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন রিকসা চালাই। সরকারের কাছে জমি চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। তারা ধনিদের খাস জমি দেয়। আর আমরা যারা নিঃস্ব তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি।
কেদারপুরের রায়হান শরীফের কাছে বিষয়টি জানতে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কোন মন্তব্য করতে চান না বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এর পর একাধিক বার ফোন করলেও তিনি আর ফোন ধরেননি। জানতে চাইলে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, কি ভাবে একজন ধনি ব্যক্তিকে ভূমিহীনের জমি বন্দোবস্তো দেয়া হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখব। আর কেউ যদি আবেদন করেন তাহলে এ বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীনদের দেয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/০৪ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:৩৩