বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন

ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ রোগের লক্ষণ ও করণীয়

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২
  • ১১৪ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : ঘুমের মাঝে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো একটি জটিল সমস্যা হলো স্লিপ এপনিয়া। স্লিপ এপনিয়া হলে ঘুমের মাঝে দশ সেকেন্ড থেকে কিছু মিনিট সময় ধরে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। আর এ সমস্যাতে ঘুমের মাঝে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক জেগে ওঠে এবং ঘুম ভেঙে যায়। 

আর ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) হচ্ছে ফুসফুসের একগুচ্ছ রোগ। এ রোগের মাঝে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস ও এম্ফাসিমা দীর্ঘস্থায়ী অ্যাজমা। এটি সাধারণত আটকে থাকা বা সরু শ্বাসনালি অথবা অভ্যন্তরীণ কাঠামোর প্রদাহ অথবা ফুসফুসের বায়ু থলির ক্ষতির কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। 

দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টের রোগ সিওপিডি। সিওপিডিতে শ্বাসকষ্ট ঘুমকে প্রভাবিত করতে পারে বিভিন্নভাবে। যারা সিওপিডিতে ভুগছেন, তারা বেশিরভাগ কম/বেশি ঘুমের সমস্যার অভিযোগ করেন। সামগ্রিকভাবে সিওপিডিতে আক্রান্ত ব্যক্তির ঘুমের গুণগত মান ও সময় কমে যায়, রাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং তারা প্রায়ই জেগে উঠতে পারেন। 

এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন ইনজিনিয়াস পালমো ফিটের স্লিপ কনসালট্যান্ট ডা. ফাতেমা ইয়াসমিন।

ফুসফুসের জার্নালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত সিওপিডি রোগী স্লিপ এপনিয়ায় ভোগেন। স্লিপ এপনিয়ার সঙ্গে সিওপিডি যুক্ত হলে চিকিৎসকরা এটিকে ‘ওভারল্যাপ সিনড্রোম’ হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন। সিওপিডি রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। স্লিপ এপনিয়ার সঙ্গে সিওপিডি যুক্ত হলে এটি উচ্চ রক্তচাপ, পালমোনারি হাইপারটেনশন, অ্যারিথমিয়া, হার্ট ফেইলিওর এবং চিকিৎসা না করা হলে স্ট্রোকের দিকে নিয়ে যায়। স্লিপ এপনিয়া আক্রান্ত রোগীদের পালমোনারি হাইপারটেনশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পালমোনারি হাইপারটেনশন হলো এক ধরনের ফুসফুসের উচ্চ রক্তচাপ। এটি ফুসফুসের ধমনিতে এবং হৃৎপিণ্ডের ডানদিকে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। 

পালমোনারি হাইপারটেনশনের রোগীদের শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা এবং বুকে চাপ অনুভব করে। চিকিৎসা না করালে, সিওপিডির মতো পালমোনারি হাইপারটেনশন ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খারাপ হয়। স্লিপ এপনিয়াতে সৃষ্ট প্রদাহ সিওপিডিতে প্রদাহকে আরও খারাপ করতে পারে।

ধূমপান স্লিপ এপনিয়া এবং সিওপিডি উভয়ের সঙ্গেই জড়িত। ধূমপান প্রদাহকে ট্রিগার করে, উভয় অবস্থার ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত ওজন স্লিপ এপনিয়ার ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়। এটি পুরুষদের মধ্যে স্লিপ এপনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া সিওপিডির রোগীদের রাতের লক্ষণগুলো সাধারণত উপেক্ষা করা হয়। রোগটি শনাক্ত করার প্রয়োজনে সিওপিডিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে যদি কোনো রাতের উপসর্গ থেকে থাকে সেগুলো অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে অবহিত করা প্রয়োজন। এ উপসর্গগুলোর মধ্যে যে কোনো একটির উপস্থিতি যদি সিওপিডির রোগীর মাঝে থাকে তবে চিকিৎসকে জানানো প্রয়োজন :

* রাতে নাক ডাকা

* রাতে হাঁপানি বা দম বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অনুভব করা

* সকালে মাথাব্যথা

* দিনেরবেলা অতিরিক্ত ঘুম

* স্থূলতা

* দিনেরবেলা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকা

* দিনেরবেলা কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পাওয়া

* পালমোনারি হাইপারটেনশন

* ডানদিকের হার্ট ফেইলিওর

* পলিসিথেমিয়া (রক্তে লাল রক্ত কোষের উচ্চ ঘনত্ব)

* ডায়াবেটিস, হার্ট ফেইলিউর বা স্ট্রোকের ইতিহাস

এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক ঘুমের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর ঘুমের অসুবিধাগুলোর ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারবে। পলিসোমনোগ্রাফি অথবা স্লিপ টেস্ট একটি সর্বাধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতি যার মাধ্যমে খুব সহজেই এ রোগটি নির্ণয় করা যায়। ঘুমের পরীক্ষার/স্লিপ এপনিয়া পরীক্ষা, যা পলিসোমনোগ্রাফি (PSG) নামেও পরিচিত। এটি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরন, রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা এবং ঘুমের পর্যায় এবং ঘুমের মাঝের পরিবর্তনগুলো ব্যাপকভাবে ধারণ করা হয়। 

এ পরীক্ষাটি দ্বারা ঘুমের মাঝে কখন, কতবার এবং কী ধরনের শ্বাস বন্ধ হচ্ছে তা বোঝা যায়। আবার কিছু রোগীর জন্য একটি বিকল্প হলো হোম স্লিপ টেস্ট (এইচএসটি), যেখানে রোগীরা তাদের নিজের বাসায় এবং নিজের বিছানায় ঘুমাতে পারে (যদিও পরীক্ষাটি ল্যাবে করানো উত্তম)। রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসার মাধ্যমে উপসর্গগুলোর তীব্রতা কমাতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। চিকিৎসার লক্ষ্য হলো শ্বাস-প্রশ্বাস এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা উন্নত করা এবং রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমানো। 

চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার/পিএপি (PAP) থেরাপি, অক্সিজেন থেরাপি, ব্রঙ্কোডাইলেটর এবং পালমোনারি রিহাবিলেশন। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বহুল প্রচলিত চিকিৎসা হলো পিএপি (PAP) ডিভাইস এর ব্যবহার। এ মেশিনটি দ্বারা ঘুমের মাঝে শ্বাস বন্ধ সমস্যাটি দূর করা যায়। মেশিনটি দ্বারা একটি নির্দিষ্ট চাপে বাতাস প্রবাহ হয়, যা রোগীর নাক বা নাক-মুখ দিয়ে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে এবং স্লিপ এপনিয়া হতে বাধা দেয়। রাতের ভালো ঘুম এবং জীবনের মানের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত চিকিৎসায় রোগের লক্ষণগুলো কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলোর ঝুঁকি কমায়।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০২ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit