শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

গাছের সার হিসেবে মানুষের মলের ব্যবহার

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২
  • ১৩৩ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মলমূত্রের যথাযথ ব্যবহার এখনও শিখে উঠতে পারেনি পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই। মেক্সিকোর মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশেই পর্যাপ্ত স্যানিটেশন প্রণালীর অভাবের কারণে মলমূত্র অপরিশোধিত অবস্থায় নদ-নদী, হ্রদ বা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। মেক্সিকোর ঐতিহ্য মেনে কিছু মানুষ সেই বর্জ্য কাজে লাগিয়ে চাষাবাদের উদ্যোগ নিচ্ছেন।

আর যার উল্লেখ্যোগ্য প্রমাণ হতে পারে টোমাস ভিলানুয়েভা ও তার পরিবার। চাষি হিসেবে টোমাস ভিলানুয়েভা ও তার পরিবারের কাছে মানুষের মল মোটেই অস্বস্তির কারণ নয়। এমনকি খাবার টেবিলেও তারা সে বিষয়ে কথা বলেন। কারণ সালাদের পাতা ও শাকসবজিও মানুষের মলের পুষ্টির সাহায্যে গজানো হয়েছে।

টেপেটিক্সটলা নামে মেক্সিকোর ছোট এক অঞ্চলে নিজস্ব খামারে ফলমূল ও শাকসবজি ফলানো হয়। সেখানে সার হিসেবে শুধু নিজস্ব মলের কম্পোস্ট ব্যবহার করা হয়।

ফসল নিয়ে টোমাস ভিলানুয়েভা এতই সন্তুষ্ট যে, তিনি সেগুলি নিয়ে গান গাইতে গাইতে সরাসরি খেত থেকে রান্নাঘরে আসেন। স্ত্রী লিলিয়ানা আরান্দা সেটা দিয়ে খামারের সব শ্রমিকের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করেন। খাওয়ার সময় পানিসহ সব প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

এমন কৃষিকাজের ব্যাখ্যা করে টোমাস ভিলানুয়েভা বলেন, “এভাবে আমরা একটা চক্র অনুযায়ী চলছি। মাটিতে যা ফলন হয়, তা হজম করে শেষে মাটিতেই ত্যাগ করা হয়। কম্পোস্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যা মাটি থেকে এসেছে, তা আমরা আবার মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। এভাবে চক্র পূর্ণ হয় এবং জীবন চলতে থাকে।”

খামারে উৎপাদিত শাকসবজি পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর বাজারে বিক্রি করা হয়। বেড়ে ওঠার জন্য গাছপালার পুষ্টির প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই জৈব খামারে খনিজ কৃত্রিম সারের প্রবেশ নিষেধ। দাম বেশি হবার পাশাপাশি সেগুলো মাটির জন্যও ভালো নয় বলে টোমাস নিশ্চিত।

এবার চুলুন দেখে নেওয়া যাক ফলন বৃদ্ধিতে মানুষের মলের ব্যবহার-

নিজের টিমের সঙ্গে ড্রাই টয়লেটে জমা মলের সঙ্গে পাথরের মিহি গুঁড়া বা খড়ের মতো প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে উর্বর কম্পোস্ট সারে রূপান্তরিত করেন টোমাস। এর জন্য অনেক সময় ও পরিশ্রম লাগে। কম্পোস্ট প্রক্রিয়ার সময় ব্যাকটেরিয়া তাপমাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেয়।

সেই উত্তাপের ফলে সম্ভাব্য রোগের জীবাণুরও মৃত্যু হয়। নানা ধরনের কপি, বিট, ব্রকোলি, লেটুস পাতা, ফলমূলসহ অনেক কিছুর ফলন হয়।
মেক্সিকোর মোরেলোস রাজ্যে অকোটেপেক অঞ্চলেও মল কাজে লাগানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। স্থপতি হিসেবে সেসার আনিয়োর্ভে সেখানে নতুন এক পরীক্ষা চালিয়েছেন।

 তিনি বলেন, “২০ বছর আগে আমি এক ইকোলজিকাল বসত এলাকা গড়ে তুলেছিলাম৷ ড্রাই টয়লেটসহ বসতবাড়ি যে পানি দূষিত করে না, আমি সেটা দেখাতে চেয়েছিলাম।”

এমন টয়লেটে প্রস্রাব ও মল আলাদা করে জমা হয় এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয় না। পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালীর সঙ্গেও এই টয়লেট যুক্ত নয়।
 ড্রাই টয়লেটের ব্যবহারকারী হিসেবে ডালিয়া আনিয়োর্ভে ডিয়াস বলেন, “কমোডের সামনে প্রস্রাব ও পেছনে মল প্রবেশ করে৷ মলের উপর শুধু কিছু মাটি ফেলে দিতে হয়।”

মেক্সিকোয় মলমূত্রের একটা বড় অংশই অপরিশোধিত অবস্থায় হ্রদ, নদনদী ও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে৷ সেসার এমনটা মোটেই পছন্দ করেন না। 
তার মতে, ড্রাই টয়লেটই সমাধানসূত্র হতে পারে৷ তিনি ওয়ার্কশপের মাধ্যমে এমন টয়লেট তৈরি ও ব্যবহার বুঝিয়ে বলেন। তবে মানুষের মল অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে বড় চ্যালেঞ্জ বটে।

সূত্রঃ ডয়েচে ভেলে

কিউএনবি/অনিমা/২৩.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:০৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit