ডেস্ক নিউজ : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে আবদুল মান্নান নামে এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে তার বিধবা শ্বাশুড়ি শাহিদা বেগমের ঘর পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় মান্নান ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শাহিদা বেগম। এ ঘটনায় ১৫ জুন শাহিদার বাবা আলী হোসেন কমলনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহিদা চরলরেন্স ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড লরেন্স গ্রামের ভক্তেরপাড়ার বাসিন্দা। তার স্বামী দুলাল হোসেন মারা যাওয়ার পর থেকে ভক্তেরপাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে একটি টিনশেড ঘরে বসবাস করেন তিনি। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫ বছর আগে একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল খালেকের ছেলে মান্নানের সঙ্গে শাহিদার মেয়ে নুপুর আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে প্রতিবন্ধী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রায় ৩ বছর আবুধাবিতে প্রবাসজীবন ছিল মান্নানের। সেখানে থাকা অবস্থায় মোবাইলে স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেওয়ার জন্য তিনি বায়না ধরেন। কিন্তু তার স্ত্রী দেননি।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সংসারের খরচ ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে ছেলেকে নিয়ে নুপুর মায়ের বাড়িতে চলে আসেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তিনি তার ব্যক্তিগত কিছু ছবি স্বামীর কাছে পাঠান। কিন্তু মান্নান ছবিগুলো ইমোতে স্ত্রীর স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। গত ৬ মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর থেকে স্ত্রীকে এক লাখ টাকা যৌতুক দেওয়ার জন্য চাপ দেন। বিধবা মায়ের কাছে টাকা চাওয়া সম্ভব নয় বললে মান্নান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। নিজের ছেলেকে মেরে ফেলবেন হুমকি দেন। ঘরে আগুন দিয়ে নুপুর ও তার মাকে হত্যার হুমকিও দেন তিনি। পরে গত ১৪ জুন দিবাগত রাত ১টার দিকে তিনি পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন বিধবা শাশুড়ির ঘরে। আগুনে পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় মান্নান ও তার সহযোগী বেলালের বিরুদ্ধে আলী হোসেন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
শাহিদা বেগম জানান, ঘটনার দু’দিন আগেই মান্নান তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ভয়ে নিজ ঘর ছেড়ে মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে তিনি বাবার ঘরে ঘুমাতে যান। মধ্যরাতেই পেট্রোল ঢেলে আগুন দেন মান্নান। এতে তার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শাহিদার বাবা আলী হোসেন বলেন, আমার ছেলেরা মান্নানকে বিদেশ নিয়েছিল। সেখান থেকে এসে সে নাতনিকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় সে আমার মেয়ের ঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। আমার মেয়ে, নাতনি ওই ঘরে থাকলে আগুনে পুড়ে মারা যেত। আমি মান্নানের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
অপর অভিযুক্ত বেলালের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দা নজির আহম্মদ বলেন, বেলাল ও মান্নানকে একসঙ্গে দেখেছি। বাজার থেকে পেট্রোল কিনে তারাই আগুন লাগিয়ে ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। বক্তব্য জানতে আবদুল মান্নানকে ফোন দিলে তিনি দেখা করে কথা বলবেন বলে কল কেটে দেন। তার দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, রাতের অন্ধকারে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। কে বা কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে, কেউ তা দেখেনি। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/১৮.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১:৪১