জীবনের জন্যে বাঁচুন
————————–
মানুষ সব সময় পাওয়াতেই সুখ অথবা সাফল্য খুঁজে কিন্তু কিছু কিছু সুখ হারানো তেও পাওয়া যায়।
যুদ্ধক্ষেত্রে একজন যোদ্ধা যখন হাসতে হাসতে জীবন দিয়ে দেয় সেখানে জীবনের চেয়ে তাঁর মাঝে অন্যের প্রতি দায়বদ্ধতা, আদর্শ বা নীতিবোধ বেশী কাজ করে। এখানে অন্যের সুখের তরে নিজের জীবনকে বিসর্জন দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেন না। আমরা যদি যুদ্ধের ইতিহাস দেখি সবাই বৃহত্তর মানব কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।
একজন মা’ যখন নিজের সৌন্দর্যকে বিসর্জন দিয়ে সন্তান ধারণ করেন অনাগত সন্তানের জন্য শুভ কামনায় মগ্ন হন তখন এই ত্যাগ তাঁর মনেই আসে না। সন্তান জন্ম দান থেকে শুরু করে বেড়ে উঠা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত মঙ্গল কামনায় মায়ের যে ত্যাগ তা কখনো বিনিময় যোগ্য নয়।
সন্তান কখনো টের পায় না তাঁর সুখ, বেড়ে উঠা, ছোট ছোট আবদার পুরনে পিতার কতোখানি আত্মত্যাগ আর নির্ঘুম রাত ।
প্রিয় মানুষের কাছে যুক্তি-তর্ক, বিদ্যা-বুদ্ধিতে হেরে যাওয়ার সুখ সবাই চায়।পরবর্তী প্রজন্ম আগের প্রজন্মকে ছাড়িয়ে যাক সবাই তা কামনা করে ।
খুব অল্প সংখ্যক হলেও কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের মুখে হাসির মাঝে নিজের কান্না লুকায়। এরা নিজেদের কথা না ভেবে সারাক্ষণ অন্যের জন্য শুভকামনায় মত্ত থাকে। প্রতিদানের তুয়াক্কা করে না, অন্যের সাফল্যেই তাঁদের সুখ আর পাওয়া।
যাদের অনেক আছে তাঁদের বিলানো সহজ কিন্তু সীমিত সাধ্যে অন্যকে সাহায্য করার আনন্দ জীবনের পরিপূর্ণতা আর প্রাপ্তিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
সবাই যে অর্থবিত্ত, পরিচিতি আর ক্ষমতা চায় এমনটি নয়। নিভৃতচারী মানুষ যারা পরিবার, সমাজ কখনোবা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নিজের স্বার্থের বলি চড়ায় এরাও মাঝে মাঝে কষ্ট পায় কিন্তু গ্লানি তাঁদের স্পর্শ করতে পারে না কখনো।
সবক্ষেত্রে প্রতিশোধ নিতে নেই কিংবা সবার সব কথায় দুঃখ পেতে নেই । কারণ প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী বিচার করার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী আপনি নিজে জানেন আপনি কি । সব ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখানোর মানে হচ্ছে আপনি নিজেকে অযোগ্য লোকের কাতারে নামিয়ে নিয়ে এলেন ।
জীবনে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরতার একজন মানুষ পাওয়া বড় ভাগ্যের ব্যাপার। প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী হওয়া সহজ কিন্তু নির্ভরতা আর বিশ্বস্ততা এতোটা সহজ নয়।
নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব কেবলই আপনার সেখানে অতিউৎসাহী লোকদের আনাগোনা শান্তি এবং স্বস্তি বিঘ্নের কারণ ঘটাতে পারে। অতএব একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারে অন্যের প্রবেশাধিকার কিংবা অযাচিত নাক গলানোতে সতর্ক হোন।
মানুষ মূলত একাই । কারণ আপনাকে বুঝার ক্ষমতা কারো নেই, কেননা কেউ কোনদিন অন্য একজনকে পরিপূর্ণ বুঝতে বা নিজেকে বুঝাতে পারে না। অতএব এ নিয়ে মন খারাপ করার মানে নেই।
কেবল আজকের জন্য বাঁচুন, কে জানে কাল আছে কি নেই ?
লেখিকাঃ খুজিস্তা নূর ই নাহরীন নিয়মিত লেখালেখি করেন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর লেখা ঝড় তুলে। পূর্বপশ্চিমবিডিনিউজ এর সাবেক সম্পাদিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী খুজিস্তা নূর ই নাহরীন বর্তমানে মডার্ন সিকিউরিটিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর টাইমলাইন থেকে পোস্টটি সংগৃহিত।
কিউএনবি /বিপুল/ ১০.০৬.২০২২/ রাত ১১.৪৯