বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

হাঁটার গতির চেয়ে বাসের গতি কম

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০২২
  • ৬৭ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : রাজধানীর শান্তিনগরের উড়াল সেতুতে যানজটে আটকে আছে কয়েক শ গাড়ি। এগুলোর একটির যাত্রী হুমায়ুন আহাম্মেদ বারবার হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন। অসহ্য হয়ে আসন থেকে দাঁড়িয়ে সড়কের সামনের অবস্থা বুঝতে গিয়ে দেখলেন, চোখ যতদূর যায় পুরোটাই যানজট। আরো কিছু সময় অপেক্ষা করে মালিবাগ পৌঁছার পর বিরক্তি নিয়ে বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন তিনি। সকাল তখন প্রায় সাড়ে ১০টা। এই সড়কেরই উল্টো পাশে রামপুরা বাজারে মোটরসাইকেলে বসা মো. হাসান। যতই যানজট হোক, মোটরসাইকেল রেখে হাসানের হাঁটার উপায় নেই। তাই মোটরসাইকেল সঙ্গী করে রামপুরা কাঁচাবাজার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত এসেছেন ৪০ মিনিটে।

হুমায়ুন ও হাসানের মতো লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন যানজটের ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। যানজটের এমন ছবি একেবারে নতুন নয়। তবে অনেক দিন পর গত কয়েক দিন ধরে হঠাৎ করেই যানজট আবার তীব্র হয়ে উঠেছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতি। এমনিতেই গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল সাপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। এতে এদিন যেন যানজটের তীব্রতা আরো ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যায়। সরেজমিনে ঢাকার আজিমপুর, মিরপুর, ফার্মগেট, পল্টন, গুলিস্তান, রামপুরা, মগবাজার, বংশাল, শান্তিনগর, বিমানবন্দর সড়কসহ বেশ কিছু এলাকার প্রধান সড়ক ঘুরে যানজটের প্রায় একই রকম চিত্র দেখা যায়।

গুলিস্তান থেকে ভিক্টর ক্লাসিক নামের একটি বাসে উঠেছেন ফরিদ মিয়া। তাঁর বাসা চানখাঁরপুল। প্রতিদিন অফিস করতে রামপুরা পর্যন্ত যাতায়াত করেন। ফরিদ বলেন, ‘আগে হাতে ৪০ মিনিট সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হলেই হতো। এখন দেড় ঘণ্টায়ও অফিসে আসতে পারি না। ’আজিমপুরে কথা হয় রোমান আহাম্মেদের সঙ্গে। তিনি নিউ মার্কেটে একটি পোশাকের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। কয়েক দিন ধরে কামরাঙ্গীর চর থেকে হেঁটে নিউ মার্কেট পর্যন্ত যাতায়াত করছেন। যদিও তিনি আগে নিয়মিত বিজিবি ১ নম্বর গেট থেকে লেগুনায় নিউ মার্কেট আসা-যাওয়া করতেন।

রোমান বলেন, ‘লেগুনায় আজিমপুর আসতেই প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায়। কিন্তু হেঁটে ১৫ মিনিটেই এই পথ আসা যায়। আগে যখন লেগুনায় আসতাম, তখন ইডেন কলেজের সামনে এসে লেগুনা থেকে নেমে হাঁটা দিতাম। তা না হলে ইডেন থেকে নীলক্ষেত আসতেই আধা ঘণ্টা লাগবে। এখন পুরা রাস্তাই ২৫ মিনিটে হেঁটে চলে আসি। ’এমন যানজটের পেছনে মূলত সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে সড়ক বন্ধ থাকা, গাড়ি চলাচলের জন্য পথ ছোট হয়ে আসা এবং সড়কে মাত্রাতিরিক্ত মোটরসাইকেল বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর লম্বা সময় পর অনেক স্কুল খুলে যাওয়ায় সড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ আরো বেড়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, অতিমাত্রার যানজটের পেছনে অনিয়ন্ত্রিত ছোট ছোট যানকেও দায়ী করা যায়। বিআরটিএর (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) এখনই উচিত এসব ছোট যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ করা। ঢাকা শহরের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) আশঙ্কা করা হয়েছিল—২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে।

২০২০ সালে করা বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে পিক টাইমে চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। চলতি বছরে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটারে। উল্টোদিকে বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের হাঁটার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় এর চেয়েও বেশি।

বিশ্ববিখ্যাত গবেষণা প্রকাশনী সংস্থা ‘প্লাস ওয়ান জার্নাল’ এক গবেষণায় বলছে, ২০-২৯ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪.৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫.১ কিলোমিটার। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪.৮২ কিলোমিটার আর সত্তরোর্ধ্ব মানুষ ঘণ্টায় হাঁটতে পারেন ৪.৫ কিলোমিটার। এই সব বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৪.৮৩ কিলোমিটার, যেটি বর্তমানে পিক টাইমে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি।

মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘কিছু প্রধান সড়কে গাড়ি চলার গড় গতি ঘণ্টায় ৪.৮ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। দুই বছর আগেও এই গতি সাড়ে ছয় কিলোমিটার ছিল। এটা খুবই উদ্বেগজনক। আরএসটিপিতে যে আশঙ্কা ছিল, তা এখনই দৃশ্যমান। পরিকল্পিতভাবে সড়কে উন্নয়ন ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হবে। ’

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১১ই মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১০:২৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit