মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৯ অপরাহ্ন

ইউক্রেনের আরেক শহর পতনের মুখে

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০২২
  • ৫৮ Time View

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার ৪০ মাইল দীর্ঘ সামরিক বহর গতকাল পর্যন্ত কিয়েভ পৌঁছতে পারেনি। শেষ তিন দিন এই বহর মস্কোর প্রত্যাশিত গতিতে এগোতে পারেনি। এই সেনাদল কিয়েভে পৌঁছালে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে রুশ বাহিনী কিয়েভের আশপাশের শহরগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। সব জায়গায় তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। খারসন শহর রুশ দখলে চলে গেছে। আরেক বন্দরনগরী মারিওপোল ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। এই নগরীও পতনের মুখে ছিল।  

এদিকে রুশ আগ্রাসন শুরুর আট দিনের মধ্যেই ইউক্রেন থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ১০ লাখে উঠেছে।

খারসানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া

কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী খারসানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে রাশিয়া। গত বুধবারই রুশ বাহিনী এই ঘোষণা দেয়। সেদিন শহরটির মেয়র রুশ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, রুশ সেনাদের সঙ্গে পথে পথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন বাহিনী। তবে গতকাল মেয়র ইগর কোলিখায়েভ বলেছে রুশ সেনারা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেখানে কারফিউ জারি করে বাসিন্দাদের চলাফেরা সীমিত করা হয়েছে। খারসানে খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একজন বাসিন্দা বলেছেন, শহরটির বাসিন্দাদের খাবার, পানি এবং ওষুধ দিয়ে সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আহত বহু বেসামরিক নাগরিক ওই শহরে রয়েছে; চিকিৎসার জন্য যাদের ভালো কোথাও নেওয়া প্রয়োজন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ওষুধ নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ওই শহরে যেতে দিচ্ছে না রুশ বাহিনী। ২০১৪ সালে দোনেৎস্কে আমার এ অভিজ্ঞতা আছে। তারপর আমি খারসানে এসেছি। ’

এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশ সেনাদের বীরত্বের প্রশংসা করেছেন। তিনি নিহত সেনাদের ‘হিরো অব রাশিয়া খেতাব দিয়েছেন। রুশ বাহিনী এক সপ্তাহে মাত্র একটি শহর পুরো নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হলেও ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে অভিযান সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার সরকারের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে দেওয়া বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন এসব কথা বলেন। রোলিং নিউজ চ্যানেল রাসিয়া ২৪-এ প্রচারিত এ বক্তব্যে তিনি ইউক্রেনে ‘নব্য-নাৎসি’ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় রাশিয়ার সেনাদের ‘বীরত্বপূর্ণ’ কর্মকাণ্ডের কয়েকটি উদাহরণও দেন। পুতিন আরো বলেন, যুদ্ধে নিহত রুশ সেনাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

মস্কো বুধবার বলেছে, ইউক্রেনে সেদিন পর্যন্ত তার ৪৯৮ জন সেনা নিহত হয়েছে। এটি  ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সেনা নিহত হওয়ার ব্যাপারে রাশিয়ার দেওয়া প্রথম সংখ্যা। তবে ইউক্রেন বলছে, সংখ্যাটা কয়েকহাজার।

ইউক্রেনের আরেক বন্দরনগরী মারিওপোল ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী। এর আগে এই নগরে ব্যাপক অভিযান চালায় রুশ সেনারা। মারিওপোলের মেয়র বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হচ্ছে। হামলায় হতাহতদের উদ্ধার করার মতো কোনো অবকাশও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, শহরে বেসামরিক মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাদের বের হওয়ার পথ দিচ্ছে না রুশ সেনারা। সিএনএনের খবরে বলা হয়, খারসানের পর দ্বিতীয় শহর হিসেবে মারিওপোলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে রুশ বাহিনী।

খারসানের পর মারিওপোল রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে কৃষ্ণ সাগর থেকে কিয়েভের সড়ক যোগাযোগ ইউক্রেন বাহিনীর প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাবে।  

খারকিভে লড়াই

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন বাহিনী।
খারকিভের বাসিন্দা লিচোলিত বিবিসিকে বলেন, তিনি শহরটির মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। লড়াইয়ে নিয়মিত সেনা ও পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করা ও শহরটির বিভিন্ন সীমানায় লক্ষ রাখা তাঁর প্রধান কাজ। লিচোলিত বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আমরাই শহর নিয়ন্ত্রণ করছি। রাশিয়ার সেনারা সামরিক অপরাধ করছে। ’ তাঁর অভিযোগ, রুশ বাহিনী সামরিক লক্ষ্যবস্তু নয় খারকিভ শহরের এমন বিভিন্ন অংশে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কিয়েভমুখী সামরিক বহর এখনো দূরে।

কিয়েভের পথে থাকা বিশাল রুশ সামরিক বহর মস্কোর প্রত্যাশিত গতিতে এগোতে না পারায় সেটি এখনো রাজধানী থেকে দূরেই রয়েছে। প্রত্যাশিত গতিতে এগোতে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে জ্বালানি সংকট, পথে পথে নানাভাবে ইউক্রেনের প্রতিরোধের চেষ্টাসহ বিভিন্ন কারণ আসছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই বহর কিয়েভ থেকে ১৯ মাইল দূরে ছিল।

কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ এখনো ইউক্রেন বাহিনীর হাতেই রয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কিয়েভ শান্ত থাকলেও বুধবার দিবাগত রাতে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।

বাড়ছে প্রাণহানি

যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় দুই পক্ষেই প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ বাড়ছে। এদিকে রাশিয়া বুধবার প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে তার সেনাদের প্রাণহানি ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে। মস্কো বলেছে, তার ৪৯৮ সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৫৯৭ জন। তবে ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার পক্ষে হতাহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। এদিকে মস্কোর দাবি, রুশ অভিযানে ইউক্রেনের পক্ষের দুই হাজার ৮৭০ জন নিহত হয়েছে।

শরণার্থীর ঢল

ইউক্রেন ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থীর ঢল নেমেছে। গত দুই দিনে প্রায় দুই লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ইউক্রেন ছেড়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এর মধ্যে পোল্যান্ডেই ঢুকেছে পাঁচ লাখের বেশি শরণার্থী। সূত্র : এএফপি, সিএনএন ও বিবিসি

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৪ঠা মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১০:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit