আলি হায়দার (রুমান) ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি : মায়ের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে আছে। একমাত্র শিশু সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগল হয়ে পড়েছেন এক মা। ভোলাহাট উপজেলার হোসেনভীটা (চোটাদহ)গ্রামের দরিদ্র মোসাঃ সেলিনার বিয়ে হয় একই উপজেলার চরধরমপুর গ্রামে। ফুটফুটে মারুফের জন্ম হয়। ১ মাস বয়সে মারুফের মা মোসাঃ সেলিনাকে তালাক করে তার বাবা মোঃ মোহফুল। এরপর দরিদ্র মা মারুফকে সাথে নিয়ে দরিদ্র বাবার বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। ক্ষুধার যন্ত্রনায় গরু ছাগল পালসহ অন্যের বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালিয়ে চলতো মোসাঃ সেলিনার সংসার। ছোট্ট মারুফ ধীরে ধীরে বড় হলে মায়ের কাজে সহযোগিতা করতে থাকে।
মারুফের মা মোসাঃ সেলিনা অভিযোগ করে বলেন, তাঁর শিশু সন্তান প্রতিদিনের মত ২৫ ফের্্ুরয়ারী শুক্রবার প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ী থেকে গরু চরাতে নিয়ে যায় বাঘ্ঘলা গোফুর হাজীর বাগানে। এখানেই ঘটে যায় র্মমান্তি এক ঘটনা। উপজেলার হোসেন ভিটা (বাগানপাড়া) গ্রামের মৃতঃ আতাউর রহমানের ছেলে ঘাতক মোঃ রানাউল (৫০) তাঁর জমির লাগানো খেসারী মারুফের চরানো গরু দিয়ে খাওয়ার অজুহাতে বেলা আড়াইটার দিকে ঘাড় মটকে হত্যা করে গামছা দিয়ে আম গাছের একটি নিচু ডালের সাথে ঝুলিয়ে দেয়।
খেসারি পাহারাদার চোটাদহ বাগান পাড়া গ্রামের মোঃ আজিজুলের স্ত্রী মোসাঃ মাজিরন(৩৫) ও তাঁর ছেলে মোঃ মিনহাজুল(৮) পাহারা দেন।
এ সময় মোঃ রানাউল মারুফকে তাঁদের চোখের সামনে হত্যা করে। ছোট শিশু মিনহাজ ঘটনাটি দেখে সাড়ে ৩টার দিকে মারুফের মাকে জানায়।খবর পেয়ে আহাজারি করতে করতে সেখানে ছুটে যায় মারুফের মা। তিনি মারুফকে আম গাছের সাথে ঝুলে থাকতে দেখে লোকজনকে ডেকে দ্রুত স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ফুটানীবাজারের মোঃ শহিদুল ইসলামের কাছে নিয়ে গেলে মৃত্যু দেখে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বলেন। তিনি আরো বলেন, পথিমধ্যে চাকপাড়া গ্রামের আরেক পল্লী চিকিৎসককে দেখালে তিনিও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মারুফকে মৃত্য ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শি মোসাঃ মাজিরন বলেন, জুমার নামাজের পর মোঃ রানাউল জমিতে এসে মারুফের ঘাড় মটকে হত্যা করার পর গামছা গলায় পেঁচিয়ে আম গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ সময় রানাউল তাঁকে দেড় লাখ টাকার লোভ দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কথা বলেন। এরপরও যদি বাড়াবাড়ি করে তবে মা-ছেলে দু’জনকেই হত্যা করার হুমকি দেয় বলে জানান।প্রত্যক্ষদর্শি মোঃ মিনহাজুল বলেন, আমাকে রানাউল মারুফের শরীরে কামড় দিতে বলেন। তার কথা মত আমি হাতে একটি কামড় দি। পরে মারুফকে দু’পায়ে চেপে ধরে ঘাড় মটকে দেয় রানাউল। মারুফের ঘাড় মটকে দিলে সে আর নড়চড়া করে না। তখন গামছা গলায় পেঁচিয়ে আমের গাছের ডালে ঝুলিয়ে সাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় রানাউল।
এদিকে অভিযুক্ত মোঃ রানাউলের বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়ানি। তিঁনি কোথায় আছেন জানিনা বলে তাঁর স্ত্রী জানান।ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান,খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে সুরতহাল রির্পোট তৈরী করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রির্পোট পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।এদিকে ঘাতক মোঃ রানাউলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূল শাস্তির দাবীতে ২৭ ফের্রুয়ারী পাঁচশতাধী নারী-পুরুষ ও শিশুরা থানায় যান।
কিউএনবি/অনিমা/২রা মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ৮:৪২