ডেস্ক নিউজ : সিরাজগঞ্জে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মচারী ও আইনজীবীদের মধ্যে একটি প্রীতিকর ঘটনা নিয়ে উভয় পক্ষে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জুডিশিয়াল কর্মচারীদের বিচার দাবি করে আইনজীবীরা সকল আদালত বর্জন করেছেন। আর জুডিশিয়াল কর্মচারীরা আদালত প্রাঙ্গণে সভা করে আইনজীবীদের বিচার দাবি করেছেন। রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ আদালতপাড়ায় এসব ঘটনা ঘটে। ঘটনার বিষয়ে জানাতে সিরাজগঞ্জ আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ পান্না বলেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (১) এর স্টেনোগ্রাফার ইউসুফ আলী মামলা পরিচালনায় আইনজীবী আবুল কালামের কাছে ঘুষ দাবি করেন। আইনজীবী তা দিতে অস্বীকার করায় বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে স্টেনোগ্রাফার ইউসুফ আলী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে আইনজীবীর চেম্বারে ঢুকে তাকে মারপিট করেন। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী আইনজীবী প্রতিকার চেয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত আবেদন করেন। সমিতির পক্ষ থেকেও বিষয়টি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা জজ মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়।
এ অবস্থায় জেলা জজ মহোদয় আজ রবিবার সকাল ১০টায় তাঁর কক্ষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র আইনজীবীদের আমন্ত্রণ জানান। আমরা সেই আমন্ত্রণও গ্রহণ করেছিলাম। কিন্ত একই সময়ে জজ কোর্ট ও মাজিস্ট্রেট কোর্ট কর্মচারীদের ব্যানারে একদল উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসী কর্মচারীরা একটি আপত্তিকর ব্যানার নিয়ে কোর্ট চত্বরে মিছিল বের করে এবং অফিস কক্ষসহ সকল এজলাসে তালা লাগিয়ে সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।
এ অবস্থায় আইনজীবী সমিতিতে তাৎক্ষণিক জরুরি সভা করা হয়। সভার সিদ্ধান্তমোতাবেক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত স্টেনোগ্রাফার ইউসুফকে গ্রেপ্তার, কোর্ট ও অফিস কক্ষে তালা লাগানোর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের এবং কোর্ট প্রাঙ্গণে ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত জেলা জজের সাথে সাক্ষাত এবং সকল আদালত বর্জন কর্মসুচি পালন অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ সন্মেলনে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মীর রুহুল আমিন বাবু ও জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমানসহ অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নাজির বেলাল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ১৫/২০ জন আইনজীবী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (১) এর এজলাসের ভেতরে ঢুকে স্টেনোগ্রাফার ইউসুফ আলীকে মারপিট করে এবং নথিপত্র তছনছ ও টেবিল চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। মারপিটে আহত ইউসুফ আলীর মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে এবং তার বাম হাতের হাড় ভেঙে গেছে। সে বর্তমানে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সকল কর্মচারীরা মিলে ব্যানার টাঙিয়ে প্রতিবাদ সভা করেছি। ওই সভা চলাকালে আইনজীবীরা এসে আমাদের কাছ থেকে ব্যানার নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। আদালতপাড়ার কয়েকটি স্থানে লাগানো ব্যানারও খুলে ফেলেছে তারা। বিষয়টি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়কে অবগত করে আমরা ঘটনার বিচার দাবি করেছি। তবে আদালত ও অফিস কক্ষে তালা ঝুলানোর কথা অস্বীকার করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃহস্পতিবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (১) আদালতের ভেতরে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে আজ রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জুডিশিয়াল কর্মচারীরা আদালত ও অফিস কক্ষের রুম আটকে প্রতিবাদসভা ও কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করে। পাশাপাশি আইনজীবীরাও কোর্ট বর্জন কর্মসুচি পালন করছে। দুপুর ১টার পর থেকে বর্তমানে আদালতপাড়ার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (১) আদালতে অপ্রীতিকর ঘটনার সময় সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে কামারখন্দ উপজেলার চরগাড়াবাড়ি গ্রামের মৃত নজাব মুন্সীর ছেলে মহির উদ্দিনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই আইনজীবী আবুল কালাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (১) এর স্টেনোগ্রাফার ইউসুফ আলীকেও আসামি করা হয়েছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদত হোসেন প্রামানিকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
কিউএনবি/আয়শা/১৬ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:০৯