বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫২ অপরাহ্ন

“পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি” চুক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে আপোষহীন ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ২৪ Time View

জালাল আহমদ : বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক `আপোষহীন’ নেতৃত্বের নাম।রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত তিনি কোন আপোষ করেন নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রাষ্টীয় অতিথি ভবন পদ্মায় “পার্বত্য শান্তি চুক্তি” স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় সংসদের সব বিরোধী দল কে ঐক্যবদ্ধ করে একযোগে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ।

আওয়ামী লীগের নানা ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে ঐতিহাসিক “পার্বত্য লংমার্চ” কর্মসূচি সফল করতে আপোষহীন ছিলেন তিনি। বিএনপি দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে “পার্বত্য শান্তি চুক্তি” করতে চাইলে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যেই চুক্তি করতে পারতো। কিন্তু সেটা করে নি বিএনপি ।

ঐতিহাসিক পার্বত্য লংমার্চ দিবস:

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রাষ্টীয় অতিথি ভবন পদ্মায় “পার্বত্য শান্তি চুক্তি” সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির আগে এবং পরে বিএনপি বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আন্দোলন করে আসছিলেন ।চুক্তি সম্পাদনের পরই তৎকালীন বিরোধী দল গুলোর পক্ষ থেকে একে দেশ বিক্রির “কালো চুক্তি” আখ্যা দিয়ে এ চুক্তির বিরুদ্ধে প্রবল গণ- আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। বেশ কয়েকটি হরতালসহ নানা কর্মসূচী দেয়া হয়। ১৯৯৮ সালের ৯ জুন পার্বত্য শান্তি চুক্তিকে দেশ বিক্রির কালো চুক্তি আখ্যা দিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চ করে।

প্রেক্ষাপট ও বিশালতা বিবেচনায় এই লংমার্চটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় লংমার্চ। ৯ জুন ১৯৯৮ সাল সকাল ৮ টায় পল্টন ময়দান থেকে হাজার হাজার গাড়িতে শুরু হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমূখে ঐতিহাসিক সেই লংমার্চ যাত্রা। লংমার্চ শুরুর কিছুক্ষণ পর কাঁচপুরে আটকে দেওয়া হয় শাসক দলের সন্ত্রাসীদের দ্বারা। আগের রাতেই নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান কাঁচপুর এলাকায় গুলি করে বেশকিছু গাড়ীর চাকা পাংচার করে রাস্তা আটকে দেয় ও রাস্তায় সশস্ত্র অবস্থান নেয়।। ফলে রাস্তায় সৃষ্টি হয় প্রবল যানজট। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আটকে পড়া গাড়িতে লুটপাট চালায়।

অনেক ট্রাক, বাস রাস্তার মাঝে আড়াআড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়। সশস্ত্র “শামীম ওসমান” বাহিনী রাস্তায় অবস্থান নেয়। ফলে আটকে যায় বিশাল লংমার্চ। এর আগে শামীম ওসমান কে রাজনৈতিক মহলে নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার মানুষ চিনতো।কিন্তু এই ঘটনার পর সারাদেশে সন্ত্রাসীদের “গডফাদার” হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

এদিকে লংমার্চটি যখন কাঁচপুরে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল তখনও লংমার্চের গাড়ি বহরের শেষ প্রান্ত পল্টন ময়দানে অবস্থান করছিল। এই একটি ঘটনায় প্রমাণ করে কি বিশাল ছিল সেই লংমার্চের ব্যাপ্তি? এদিকে বাধাগ্রস্ত হবার পর ৭ দলীয় জোটে অবস্থানকারী সরকারী দালালরা লংমার্চ সেখানেই সমাপ্তি ঘোষণা করে ফিরিয়ে নেবার ষড়যন্ত্র শুরু করেন । কিন্তু ৭ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত সে ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দেয়। বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা করেন, যতদিন না পর্যন্ত এই সরকার রাস্তার বাঁধা সরিয়ে নিয়ে লংমার্চ সচল করার উদ্যোগ না নেবে,ততদিন পর্যন্ত তিনি রাস্তায় অবস্থান করবেন। জোট নেত্রীর এ ঘোষণায় মুহুর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। লংমার্চকারীদের মধ্যে নতুন প্রণোদনা সৃষ্টি হয়।

লংমার্চ অবস্থানকারীদের জন্য রাস্তার আশেপাশের গ্রামবাসীরা খাবার সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে। মুহুর্তেই রাস্তার পাশে বড় বড় চুলা তৈরী হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ লংমার্চকারীদের জন্য কোথাও খিচুড়ি, কোথাও গরু জবাই করে রান্না শুরু হয়। শুকনা খাবার, খিচুড়ি ইত্যাদি খেয়ে লংমার্চকারীরা রাস্তায় অবস্থান করে। নেতৃবৃন্দ মাইকে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে থাকেন।

বিভিন্ন স্থানে মাইকে জাতীয় পর্যাযের শিল্পীরা সংগ্রামী সঙ্গীত, ছড়া, কবিতা পাঠ করে লংমার্চকারীদের চাঙ্গা করে রাখেন।সেই লংমার্চের আট সদস্য বিশিষ্ট প্রচার কমিটির সদস্য ছিলেন- যার নেতৃত্বে ছিলেন জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী ও অভিনেতা ওয়াসীমুল বারী রাজিব(মৃত)। অবশেষে বার ঘন্টা পর সন্ধ্যায় সরকার অবরোধ সরিয়ে নেয়।

নতুন করে যাত্রা শুরু করে লংমার্চ। লংমার্চকারীদের কাছে রাখা শুকনো খাবার এরই মধ্যে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু নতুন খাবার সংগ্রহের কোনো সুযোগ তাদের ছিল না। গভীর রাতেও ঢাকা -চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ রাস্তার পাশে দাড়িয়ে লংমার্চকে স্বাগত জানায়। জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কয়েকটি স্থানে গভীর রাতেরই পথসভায় ভাষণ দেন। রাস্তায় বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ লোক গাড়ী নিয়ে লংমার্চে শরীক হন।

লংমার্চে শাসকদলীয় সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে
সারারাত বিরামহীন সফরের পর ফরজরের নামাজের সময় লংমার্চ বহরটি চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। সেই সকালেও হাজার হাজার চট্টগ্রামবাসী রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে লংমার্চ বহরকে স্বাগত জানায়। সেখানে চট্ট্রগ্রামের লালদিঘী ময়দানে বিশাল এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ৭ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে লংমার্চ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন অংশ খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে , জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন অংশ রাঙামাটির উদ্দেশ্যে এবং জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন অংশ বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

লংমার্চ পার্বত্য এলাকায় প্রবেশ করলে মোড়ে মোড়ে বাঙালীরা পাহাড়ী লেবুর শরবত, লেবু, কলা, কাঁচা আম দিয়ে লংমার্চকারীদের ক্ষুধা তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ৭ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে স্থানে পার্বত্য চুক্তির আওতায় শান্তিবাহিনী অস্ত্র সমর্পনের নাটক করেছিল ,সেই খাগড়ছড়ি স্টেডিয়ামে লাখো লাখো লোকের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

তিনি সুস্পষ্টভাবে পার্বত্য শান্তি চুক্তিকে “কালো চুক্তি” আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে সরকার দেশের এক দশমাংশ ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়েছে। ৭ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, “তাদের সরকার ক্ষমতায় এলে এই দেশবিরোধী পার্বত্য চুক্তি বাতিল করা হবে।”বেগম খালেদা জিয়া আজ নেই। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বেগম খালেদা জিয়ার এই লংমার্চ এখনো মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে ।

লেখক : সাংবাদিক এবং গবেষক ।

কিউএনবি/আয়শা/৩১ ডিসেম্বর ২০২৫,/বিকাল ৫:৫৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit