ডেস্ক নিউজ : সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে রোববার (২৩ নভেম্বর) পঞ্চম দিনে আয়ারল্যান্ডকে ২১৭ রানের ব্যবধানে হারালো বাংলাদেশ। তাতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে শেষ করলো স্বাগতিকরা। সিলেটে প্রথম ম্যাচে আইরিশদের ইনিংস ও ৪৭ রানের ব্যবধানে হারিয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
চতুর্থ দিন শেষেও মনে হচ্ছিল সহজে জয় তুলে নেবে বাংলাদেশ। ৫০৯ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে গতকালই ১৭৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ক্রিজে জাত ব্যাটার বলতে ছিলেন কার্টিস ক্যাম্ফার। কিন্তু পঞ্চম দিনে তিনি যে আঠার মতো পিচ আঁকড়ে ধরবেন সেটা হয়তো কেউই কল্পনা করতে পারেনি। তার উপর সতীর্থরাও তাকে দিয়েছে যোগ্য সঙ্গ।
আগের দিন ৪ ওভারের পর আজ সকালে আরও ১৪ ওভার সঙ্গ দেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। শেষ পর্যন্ত লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তাকে সাজঘরে ফেরান তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৪ উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আড়াইশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একই সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে তিনি যৌথভাবে ২৫০ উইকেটের রেকর্ড গড়েন। তার সমান ৫৭ ম্যাচে রেকর্ডটি আগে গড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ।
ম্যাকব্রাইনের পর জর্ডান নেইল এসে ১৪ ওভার সঙ্গ দেন ক্যাম্ফারকে। শেষ পর্যন্ত তাকে বোল্ড করে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাকব্রাইন ৫৩ বলে ৩ চারের মারে ২১ আর নেইল ৪৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করেন। এরপর ক্রিজে আসেন হোয়ে। তিনি তো ছাড়িয়ে যান আগের দুইজনকেও। একপ্রান্ত আগলে রেখে ক্যাম্ফারও নিশ্চিত মনে ফিফটি তুলে নেন। ফিফটির পথে এগোচ্ছিলেন হোয়েও। দুজনের ব্যাটে দ্বিতীয় সেশন প্রায় উইকেটশূন্যই কাটিয়ে ফেলার পথে ছিল আইরিশরা।
যেখানে এক সেশনে খেলা হয় ১৮০ বলে সেখানে তারা প্রায় ২০০ বল মোকাবিলা করেছিল। তাতে জয় হাতছাড়া হওয়ার ছিল বাংলাদেশের। চা বিরতির আগে আর মাত্র ২-১ ওভার ছিল। তখনই সব শঙ্কা, সব অপেক্ষার অবসান ঘটান মুরাদ। হোয়েকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেনি এ ব্যাটার। ১০৪ বলে ৪ চারের মারে ৩৭ রানে থামে তার ইনিংস। পরের বলেই বোল্ড হন ম্যাথিউ হামফ্রিস। তাতে জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
২৫৯ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন ক্যাম্ফার। লড়াকু এ ইনিংসে তিনি গড়েন অনন্য এক রেকর্ড। মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ বল মোকাবিলা করার রেকর্ড। এ মাঠে রেকর্ড গড়ে আয়ারল্যান্ডও। চতুর্থ ইনিংসে সফরকারী দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান (২৯১)। আগেরটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার ২৪৪ রান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪৭৬ রানের জবাবে ২৬৫ রান করেছিল আয়ারল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।
তাতে আইরিশদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫০৯ রান। শেষ পর্যন্ত ২৯১ রানে থামে তারা। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন লর্কান টাকার। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে চার ব্যাটার ফিফটি হাঁকান। আয়ারল্যান্ডের হয়ে ফিফটি হাঁকান দুজন। ৪ উইকেট করে উভয় ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ৮টি উইকেট নেন তাইজুল।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুরাদ নেন ৬ উইকেট। আইরিশদের পক্ষে ম্যাকব্রাইন দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন (৬ ও ১) ৭ উইকেট। এই টেস্ট ম্যাচটি ছিল মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট। প্রথম ইনিংসে ১০৬ আর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচটি স্মরণীয়ও করে রেখেছেন তিনি। দুটি দারুণ ইনিংসে নির্বাচিত হয়েছে ম্যাচসেরা।
কিউএনবি/আয়শা/২৩ নভেম্বর ২০২৫,/বিকাল ৫:২২