বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৭ পূর্বাহ্ন

দ্রুত রিজিক বৃদ্ধির আমল ও পাঁচ পরীক্ষিত দোয়া

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১২ Time View

ডেস্ক নিউজ : রিজিক শুধু অর্থ নয় বরং শান্তি, স্বাস্থ্য ও সন্তুষ্টিও রিজিকের অংশ। যখন আমরা নামাজ, ইস্তিগফার, সাদকা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখি তখন রিজিক বাড়ে। আর দোয়া হলো সেই দরজা, যা আল্লাহর রহমতের খাজানা খুলে দেয়। কুরআন-হাদিস থেকে আমরা এ কথারই প্রমাণ পাই। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّ اللّٰهَ یَرۡزُقُ مَنۡ یَّشَآءُ بِغَیۡرِ حِسَابٍ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বেহিসাব রিজিক দান করেন।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ৩৭)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ رِزۡقُهَا وَ یَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَ مُسۡتَوۡدَعَهَا ؕ كُلٌّ فِیۡ كِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ

‘যমীনে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর উপর নেই, তিনি জানেন তাদের থাকার জায়গা কোথায় আর কোথায় তাদেরকে (মৃত্যুর পর) রাখা হয়, সব কিছুই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।’ (সুরা হূদ: আয়াত ৬)

দ্রুত রিজিক বৃদ্ধির ৫ আমল

রিজিক কেবল পরিশ্রমের ফল নয় বরং এটি মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত এক বরকতময় দান। তবে আল্লাহ তাআলা সেই বান্দাকে ভালোবাসেন, যে হালাল উপায়ে চেষ্টা করে, তাকওয়ায় জীবন কাটায় এবং দোয়া ও আমলের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধির দোয়া করে। রিজিক বাড়ানোর জন্য কুরআন ও সুন্নাহে এমন কিছু সহজ কিন্তু শক্তিশালী আমল রয়েছে, যা অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ জীবনে বরকত, প্রশান্তি ও প্রাচুর্য নেমে আসে। আজ আমরা জেনে নেব— দ্রুত রিজিক বৃদ্ধির ৫টি কুরআনি আমল। যেগুলো আল্লাহ নিজেই কুরআনে শিক্ষা দিয়েছেন তার প্রিয় বান্দাদের জন্য।

১. নিয়মিত তাকওয়া ও নামাজে স্থিরতা রাখা

তাকওয়া মানে আল্লাহভীতি, নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকা ও ফরজ আদায়ে অটল থাকা। তাকওয়া অবলম্বনকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা রিজিকের এমন দরজা খুলে দেন, যা সে চিন্তাও করেনি। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

‘যে আল্লাহভীরু হয়, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং এমন উৎস থেকে তাকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করে না।’ (সুরা আত-তালাক: আয়াত ২-৩)

২. চাশতের নামাজ আদায় করা

সালাতুল দোহা বা চাশতের নামাজ। যা সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে ২/৪ রাকাত আদায় করা হয়। এটি রিজিক বৃদ্ধির জন্য বিশেষ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ… وَيُجْزِئُ مِنْ ذَٰلِكَ رَكْعَتَانِ يُرَكِّعُهُمَا مِنَ الضُّحَى

‘মানুষের প্রতিটি অস্থির ওপর সদকা আদায় করা আবশ্যক… আর দুটি রাকাত দোহা নামাজই এর জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম ৭২০)

৩. নিয়মিত ইস্তিগফার করা

নিয়মিত ‘أستغفر الله’ বলা শুধু পাপ মোচনই নয় বরং বরকত ও রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কুরআনি আমল। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ…

‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি বৃষ্টি (রিজিক/ফলমূল) দেবেন, সম্পদ ও সন্তান দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।’ (সুরা নুহ: আয়াত ১০-১২)

৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে রিজিক কমে যায়, আর সুসম্পর্ক বজায় রাখলে রিজিক বেড়ে যায়। জীবনে বরকত আনে। সুতরাং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা শুধু একটি নৈতিক দায়িত্ব নয় বরং রিজিক ও জীবনের বরকতের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

مَن أحبَّ أن يُبْسَطَ له في رزقِه، ويُنسَأَ له في أثرِه، فليصِلْ رحِمَهُ

‘যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক বৃদ্ধি পাক এবং আয়ু দীর্ঘ হোক, সে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখুক।’ (বুখারি ২০৬৭)

৫. আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা (তাওয়াক্কুল) রাখা

তাওয়াক্কুল মানে সব চেষ্টা করার পর ফলাফল আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেওয়া। যে এভাবে ভরসা করে, আল্লাহ তার রিজিক খুলে দেন এমনভাবে যা সে কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা আত-তালাক: ৩)

রিজিক বৃদ্ধির ৫ পরীক্ষিত দোয়া

দোয়া ১: হালাল রিজিক ও বরকতের জন্য

এই দোয়া রিজিকের হালালতা ও বরকতের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী ও সহিহ দোয়া। হাদিসে এসেছে-

اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আ’ন হারামিকা; ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আ’ম্মান সিওয়াকা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হালাল রিজিক দিয়ে হারাম থেকে আমাকে বাঁচাও এবং তোমার অনুগ্রহে আমাকে অন্যদের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে মুক্ত রাখো।’ (তিরমিজি ৩৫৬৩)

দোয়া ২: হালাল ও উপকারী রিজিকের দোয়া

নবী (সা.)-এর সকালবেলার দোয়া। তিনি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর এ দোয়াটি পড়তেন। হাদিসে এসেছে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ’; ওয়া রিজকান ত্বইয়্যেবা; ওয়া আ’মালান মুতাক্বাব্বালা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিজিক এবং গ্রহণযোগ্য আমলের জন্য প্রার্থনা করি।’ (ইবন মাজাহ ৯২৫)

দোয়া ৩: কাজ ও উপার্জনে মুসা (আ.)-এর দোয়া

এই দোয়ার পর আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.)-কে আশ্রয়, কাজ ও বিবাহের সুযোগ দিয়েছিলেন। তাই এটি রিজিক, চাকরি, ও জীবনের স্থিতির জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর একটি দোয়া। কুরআনে এসেছে-

رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ

উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিন ফাক্বির।’

অর্থ: ‘হে আমার রব! নিশ্চয়ই আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাজিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সুরা আল-কাসাস: আয়াত ২৪)

দোয়া ৪: রিজিক ও কল্যাণে বরকতের জন্য দোয়া

اللَّهُمَّ بَارِكْ لِي فِي رِزْقِي، وَارْزُقْنِي مِنْ حَيْثُ لَا أَحْتَسِبُ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লি ফি রিজকি; ওয়ারজুক্বনি মিন হাইছু লা আহতাসিবু।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার রিজিকে বরকত দান করুন এবং এমন উৎস থেকে রিজিক দিন যা আমি কল্পনাও করি না।’ এটি দোয়াটি কুরআনের সুরা আত-তালাকের ৩নং আয়াতের মর্ম থেকে গৃহীত।

দোয়া ৫: সার্বিক কল্যাণ, বরকত ও সুরক্ষার জন্য দোয়া

রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া নিয়মিত পড়তেন, কারণ উদ্বেগ, ঋণ ও অক্ষমতা রিজিকের পথে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ

উচ্চারন: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি; ওয়া আউজুবিকা মিনাল আঝজি ওয়াল কাসালি; ওয়া আউজুবিকা মিনাল ঝুবনি ওয়াল বুখলি; ওয়া আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিঝালি।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুঃখ ও উদ্বেগ থেকে, দুর্বলতা ও অলসতা থেকে, কাপুরুষতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের অত্যাচার থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি ৬৩৬৯)

রিজিক (رزق) বা জীবিকা আল্লাহ তাআলার এক অমূল্য নিয়ামত। প্রতিটি মানুষের রিজিক আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত করে রেখেছেন, কিন্তু আল্লাহ ভালোবাসেন সেই বান্দাকে, যে হালাল উপায়ে পরিশ্রম করে ও দোয়া ও আমলের মাধ্যমে তার কাছে প্রাচুর্যের আবেদন করে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১২ নভেম্বর ২০২৫,/রাত ১১:

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit