সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪২ অপরাহ্ন

বিসমিল্লাহর বিস্ময়কর বরকত ও তাৎপর্য

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৪ Time View

ডেস্ক নিউজ : বিসমিল্লাহর বরকত অনেক বেশী, ইহতে রয়েছে অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য । হযরত নূহ (আ:)  এর জমানায় তার জাতির উপর গজব এসেছিল। আকাশ থেকে অনবরত ভারি বৃষ্টি শুরু হল এবং যমীন ডুবে গেল। সেই বিপদের সময় হযরত নূহ (আ:)  তার সঙ্গীদের কে নিয়ে আল্লাহর নামে নৌকায় আরোহণ করলেন।  আল্লাহ বলেন, যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌযানে আরোহণ করবে তখন বল, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহরই যিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন যালিম সম্প্রদায় হাতে। 

আর বল, হে আমার রাব্ব! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করিয়ে নিন যা হবে কল্যাণকর, আর আপনি শ্রেষ্ঠ অতরণকারী। (সূরা আল মু’মিনূন, আয়াত:২৮-২৯) মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে, আর সে বললঃ তোমরা এতে আরোহণ কর, এর গতি ও এর স্থিতি আল্লাহরই নামে, নিশ্চয়ই আমার রাব্ব ক্ষমাশীল, দয়াবান। (সূরা হুদ, আয়াত-৪১)   আমরা যদি যে কোন ভাল কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ শরীফ পড়ি, তাহলে সেই কাজের অনেক সফলতা আসবে এবং বিপদ আপদ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করবে। প্রিয় পাঠক, আমরা বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানবো, ইনশাআল্লাহ।

বিসমিল্লাহর ফজিলত ও  বিস্ময়কর প্রভাব

হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,  প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার শুরুতে  বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। (মুসনাদে আহমাদ , ১৪/৩২৯) বিসমিল্লাহ একটি  শক্তিশালী আমল। এর মাধ্যমে শয়তানের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। অকল্যাণ ও অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 
আবু মুলাইহ থেকে বর্ণিত, তিনি একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একবার নবী (সা.)-এর সঙ্গে  তাঁর আরোহীর পেছনে বসা ছিলাম। এমন সময় আরোহী পা ফসকে পড়ে গেল। তখন আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। নবী (সা.) বলেন, শয়তান ধ্বংস হোক এরূপ বলো না, কেননা এতে সে নিজেকে খুব বড় মনে করে এবং বলে আমার  নিজ শক্তি দ্বারা এ কাজ করেছি; বরং এরূপ মুহূর্তে বলবে ‘বিসমিল্লাহ’। এতে সে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায়, এমনকি মাছিসদৃশ  হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস -১৯৭৮২) 

খাওয়া দাওয়াসহ যেকোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হলে সেই কাজে শয়তানের অংশীদারি থাকে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে  শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে। (মুসলিম, হাদিস- ৫৩৭৬)  অন্য একটি হাদিসে এসেছে ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর  বিসমিল্লাহ বলা হয় না।’ (মুসলিম,হাদিস-২০১৭) 

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে প্রথম ওহি  নাজিলের সময়ও এ উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জিবরাঈল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাঈল (আ.)  বলেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ  আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) বলেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ (তাফসীর ইবনে কাসীর,পৃষ্ঠা- ২৬৩)
বিসমিল্লাহ মর্যাদা রক্ষা
দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার, যা নির্ধারিত  সময়ের পর কোনো প্রয়োজন হয় না, আবার  প্রয়োজন শেষে পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকে, কিন্তু বর্তমানে বরকত লাভের আশায় সেগুলোতেই আমরা বিসমিল্লাহ লিখে এর অমর্যাদা করছি। মনে রাখতে হবে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোরআনের একটি মর্যাদাপূর্ণ আয়াত। কোরআনের অন্য আয়াতের মতো এর প্রতি  যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। তাই এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আরবি বাংলা কোন ভাবে লেখা উচিত নয়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া-৫/৩২৩)  চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখার শুরুতে  বিসমিল্লাহির রারাহমানির রাহিম লেখা সুন্নাত।

 
কিন্তু  অনেক জায়গা বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ লেখা থাকে। এটা জায়েজ নয়। এতে বিসমিল্লাহর বরকত ও ফজিলত কিছুই  পাওয়া যাবে না। এ রীতি পরিহার করা উচিত। কারো কারো ‘বিসমিহি তাআলা’ লেখার অভ্যাস আছে। এতে আল্লাহর নাম স্মরণ করার সওয়াব পাওয়া  যাবে, তবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখার স্বতন্ত্র সুন্নাত আদায় হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া-৮/২৪) ফাতাওয়া উছমানি ১/১৬৩)  মোটকথা লিফলেট, পোস্টার বা কোনো  ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত  সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে ‘বিসমিল্লাহ’ না লিখে বরং তা আরম্ভ করার সময় শুধু মুখে  ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করে নিলে এর ফজিলত ও  বরকত পাওয়া যাবে। (শারহু মুসলিম নববী-২/৯৮)
রোম সম্রাটের কাহিনী
ছওলতে ফারুকী নামক কিতাবে আছে, রোম সম্রাট কায়সার ইসলাম গ্রহণের পর একদা আমীরুল মোমেনীন হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)- এর সমীপে এই আর্জি পেশ করিলেন, হুযুর! সব সময় আমার ভীষণ মাথাব্যথা থাকে, চিকিৎসার অনেক চেষ্টা করিয়াছি, কিন্তু কোনই ফল হয় নাই। সম্রাটের এই আরজনামা পাইয়া হযরত ওমর (রাঃ) একটি কাল টুপি সেলাই করাইয়া দিলেন। আমীরুল মোমেনীনের তরফ হইতে একটি টুপি আসিতেছে এই সংবাদ পাইয়া সম্রাট খাছ নিয়তে ভক্তিভরে কিছু পথ আগাইয়া গেলেন এবং পরম শ্রদ্ধার সহিত সহিত টুপিটি গ্রহণ করিয়া মুকুটের মত স্বীয় মস্তকে পরিধান করিলেন আর অমনি তাঁহার দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা দূর হইয়া গেল। যতক্ষণ টুপিটি তাঁহার মস্তকে শোভা পাইত, ততক্ষণ তিনি আরামে থাকিতেন। 
আর যখনই উহা মাথা হইতে খুলিয়া রাখিতেন, তখন আবার মাথাব্যথা আরম্ভ হইত। এই অবস্থা দেখিয়া সম্রাট বিস্মিত হইলেন, এবং খুঁজিতে লাগিলেন- টুপির এই মাহাত্ম্যের আসল রহস্য কোথায়! খুঁজিতে খুঁজিতে তিনি দেখিলেন, টুপির সঙ্গে এক টুকরা কাগজ জড়ানো এবং উহাতে বিসমিল্লহির রাহমানির রাহীম কথাটি লিখিত রহিয়াছে। বুঝা গেল, বিসমিল্লাহ শরীফের বরককতে ব্যথা-যন্ত্রণা এবং সকল রোগও নিরাময় হইয়া থাকে। হযরত মাওলানা রুমী মসনভীতে বলেনঃ তাসমিয়া আমদ এলাজে হার মারাজ, গুদরাওয়া হারকাস কে খানাদ হার গারাজ। অর্থাৎ, বিসমিল্লাহ শরীফে হইল যাবতীয় রোগের মহৌষধ, যেই ব্যক্তি ইহা পাঠ করিবে, তাহার সকল মকছুদ পূর্ণ হইবে। আসুন আমরা যে কোন ভাল কাজের শুরুতে বেশী বেশী বিসমিল্লাহ শরীফ পড়বো এবং বরকত লাভ করবো। 
লেখক: আলেম, গবেষক

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১১:২২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit