আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে মস্কোয় বৈঠকে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বুধবার চীনের বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা নিজেই জানিয়েছেন পুতিন। বলেছেন, দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসার সম্ভাবনা কখনোই ‘বাতিল করেননি’ তিনি। তবে পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, যদি কোনো শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে সামরিক উপায়ে লক্ষ্য অর্জন করবে মস্কো। আলজাজিরা, রয়টার্স।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সামরিক কুচকাওয়াজে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পুতিন। কুচকাওয়াজ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেছেন, ‘যদি জেলেনস্কি বৈঠকের জন্য প্রস্তুত থাকেন, তাহলে তাকে মস্কোয় আসতে দিন।’ পুতিনের এমন আমন্ত্রণকে শান্তি নয়, বরং রাজনৈতিক ফাঁদ বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যার উদ্দেশ্য শুধু কিয়েভকে ক‚টনৈতিক চাপ দেওয়া এবং বিশ্বমঞ্চে নিজের প্রভাব দেখানো। তবে পুতিন এটাও বলেছেন, যদি বোধোদয় হয় ও সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে আলোর দেখা মেলে, তাহলে একটি চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনে চলা সংঘাতের অবসান ঘটানো যেতে পারে। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে সামরিক উপায়ে এর সমাধান করতে হবে। আসলেই কি একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ‘দেখা যাক, পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। যদি না হয় (চুক্তি), তাহলে আমাদের সবকিছু সামরিক উপায়ে সমাধান করতে হবে।’ তবে পুতিনের এ প্রস্তাব নাকচ করেছে ইউক্রেন।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিগা বলেছেন, দুই নেতার মধ্যে (জেলেনস্কি ও পুতিন) একটি বৈঠক আয়োজনের জন্য সাত দেশের পক্ষ থেকে ‘আন্তরিক প্রস্তাব’ দেওয়া ছিল। সেই অনুযায়ী জেলেনস্কিও ‘যে কোনো সময়’ প্রস্তুত ছিলেন। তবুও পুতিন জেনেশুনে অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব সামনে আনছেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি সমঝোতার চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুদ্ধ বন্ধের বার্তা নিয়ে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আলাস্কায় পুতিন ও হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন তিনি। পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে একটি মুখোমুখি বৈঠকের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও ট্রাম্পের এমন প্রচেষ্টার এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। রাশিয়া বরাবরই বলে আসছে, শান্তিচুক্তি করতে হলে ২০২২ সালে যে চার অঞ্চল রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ করে নিয়েছিল সেগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মস্কোকে দিতে হবে।
অন্যদিকে কিয়েভ বলেছে, নিজেদের ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হয়, এমন কোনো চুক্তি করবে না ইউক্রেন সরকার। এমন পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই রাশিয়ার ওপর বারবার নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। বুধবার আবারও মস্কোকে ‘অনির্দিষ্ট পরিণতির’ হুমকি দিয়েছেন তিনি। বুধবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আগামীতে পুতিনের সঙ্গে আবারও কথা বলার পরিকল্পনা করছেন, আর রুশ নেতা যুদ্ধের বিষয়ে তার প্রশাসনের অবস্থান সম্পর্কেও অবগত। পুতিনের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, আমরা হয় এতে খুশি হব অথবা অসন্তুষ্ট হব। আর যদি আমরা এতে অসন্তুষ্ট হই, তাহলে যে ঘটনাগুলো ঘটবে তা আপনারা দেখতে পাবেন।
কিউএনবি/আয়শা/০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১১:১২